পৃথিবীর একমাত্র ‘কুমারী’ রানী, আজীবন অবিবাহিতই রইলেন

প্রকাশিত: ৩:২২ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২০
ছবি সংগৃহীত

ধলাই ডেস্ক: ঘটে। অতি রমনী হওয়া স্বত্ত্বেও বিবাহ ভাগ্য হয়নি তার। এই রানী আজীবনই অবিবাহিত ছিলেন। তাই বলে কি তার ভাগ্যে প্রেমও আসেনি? অবশ্যই এসেছে। আর এটাই তার জীবনের অন্যতম এক অধ্যায়।

বিবাহ না করা যদিও তার জন্য অপ্রত্যাশিতই ছিল বটে। তিনি সহজেই তার প্রেমিক প্রিভি কাউন্সিলকে বিয়ে করতে পারতেন। সেই ছিল রানীর নিকটতম পরামর্শদাতা। তার প্রেমিক রাজি থাকা স্বত্ত্বেও এলিজাবেথ কখনো বিয়ে করেননি। নিজেকে কুমারী রানী বলেই মানতেন। গভীর প্রণয় থাকার পরও তাদের মধ্যে শারীরিক ঘনিষ্ঠতার তেমন কোনো নমুনা মেলেনি। শুধু প্রিভিই নয়, এলিজাবেথ বিভিন্ন পুরুষের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। যদিও কাউকেই তিনি বিয়ে করেননি। পুরুষদের হাতে রাখার জন্যই রানী তাদের সঙ্গে প্রণয়ে আবদ্ধ হতেন। এতে করে নিজেকে আরো ক্ষমতাধর হিসেবে ভাবতেন রানী।

রানী প্রথম এলিজাবেথ

রানী প্রথম এলিজাবেথ

রানীর প্রেমময় জীবন

প্রত্যেক প্রেমিকের সঙ্গেই রানীর খুবই রোমান্টিক সম্পর্ক ছিল। তিনি ১৫৮৭ থেকে ১৫৯১ সাল অব্দি লর্ড চ্যান্সেলর স্যার ক্রিস্টোফার হ্যাটন, স্যার ওয়াল্টার রেলির সঙ্গে রোমান্টিক বন্ধুত্ব বজায় রেখেছিলেন। এরপর তার চেয়েও বয়সে ছোট রবার্ট ডিভেরাক্সের (এসেক্সের আর্ল) সঙ্গে রানী তার বৃদ্ধকাল অব্দি সম্পর্কে জড়িয়ে ছিলেন। তবে অন্যান্য সম্পর্কগুলোর চেয়ে রানী বেশি আকর্ষিত হন তার হর্স (ঘোড়া) মাস্টার লর্ড রবার্ট ডুডলির প্রতি। ১৫৬৪ সালে রানী তার নাম দিয়েছিলেন আর্ল অব লিসেস্টার।

রানীর কাছে লেখা লিসেস্টারের চিঠি

রানীর কাছে লেখা লিসেস্টারের চিঠি

রানীর কারণেই ব্যক্তিজীবনে বিবাহিত হয়েও স্ত্রীর কাছ থেকে দূরে থাকতে হতো লিসেস্টারকে। তার বেশি সময় কাটত রানী এলিজাবেথের সঙ্গেই। অন্যদিকে, লিসেস্টারের স্ত্রী মৃত্যুশয্যায় শায়িত ছিলেন। সম্ভবত তিনি স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তবুও রানীর কারণেই লিসেস্টার তার স্ত্রীকে একাকী রেখেই চলে আসেন। কারণ রানী তাকে উচ্চমূল্যের চাকরির প্রস্তাব দিয়েছিলেন। যদিও সেই হর্স মাস্টারের পদটি ততটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। শুধু রানীর পছন্দ থাকায় লিসেস্টারকে উচ্চ মূল্য দিয়ে তার কাছে রাখার একটি ফন্দি ছিল এটি। আর এই মোক্ষম সুযোগ কাজে লাগান লিসেস্টার।

রানী ও তার প্রিয় প্রেমিক লিসেস্টার (ডুডলি)

রানী ও তার প্রিয় প্রেমিক লিসেস্টার (ডুডলি)

এদিকে, ডুডলির নাম পরিবর্তন করে লিসেস্টার দেয়ায় কুমারী রানীর প্রতি অনেকেরই সন্দেহ হয়। কারণ তখনো তিনি কুমারী বলেই পরিচিত। এটা নিয়ে ইংল্যান্ড জুড়ে তখন রসালো গল্প রটতে থাকে। যদিও ডুডলির প্রতি এলিজাবেথের দুর্বলতা এতটাই ছিল যে তিনি জনগণের এসব গল্প শুনেও পাত্তা দিতেন না। এমনকি তিনি লিসেস্টারের (ডুডলি) একটি ছবিও তার শয়নকক্ষে রেখেছিলেন।

এরই মাঝে ঘটে যায় একটি বড় দুর্ঘটনা। সিঁড়ি থেকে পড়ে মারা যান ডুডলির (লিসেস্টার) স্ত্রী। তার ঘাড়ের হাড় ভেঙে টুকরো হয়ে যাওয়ার ফলেই মৃত্যু হয়েছিল বলে জানা যায়। এতে জনগণ রানীকেই দুষতে থাকেন। ইংল্যান্ডবাসীর ধারণা ছিল, রানীই লিসেস্টারকে বিয়ে করার জন্য তার স্ত্রীকে হত্যা করেছে এই উপায়ে। যদিও এমন তথ্য পরবর্তীতে বাতাসে উড়ে যায়। এরপর আরেকটি ঘটনায় রানীর জীবনকে পাল্টে দেয়। রানী এলিজাবেথ প্রেমে প্রতারিত হন।

রাজ্য সামলাচ্ছেন রানী

রাজ্য সামলাচ্ছেন রানী

১৫৭৯ সালে লিসেস্টার গোপনে এলিজাবেথের চাচাতো বোন লেটিস নোলিসকে বিয়ে করেন। রানী এতে ব্যথিত হলেও ক্ষমা করে দেন প্রেমিককে। কারণ তাকে ভুলতে পারছিলেন না এলিজাবেথ। দিন-রাত তার কথায় চিন্তা করতেন রানী। এভাবেই পার হয়ে যায় নয়টি বছর। অতঃপর ১৯৮৮ সালে মারা যান লিসেস্টার। এতে খুবই দুঃখ পান রানী। জানা যায়, সেসময় রানী খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে নিজেকে ঘরবন্দী করেছিলেন। এরপর বিমর্ষ রানীর ঘর ভেঙে তাকে জোর করে খাওয়ানো হয়েছিল।

রানীর যৌনজীবন নিয়ে বিতর্ক

এলিজাবেথের যৌনজীবন নিয়ে জানার আগ্রহ এখনো রয়েছে সবার মধ্যেই! যদিও বিষয়টি আজো বিতর্কের বিষয় হিসেবেই রয়ে গেছে। এলিজাবেথের সময়কালে, ব্রিটিশ রাজপরিবারের যে কোনো কেলেঙ্কারির বিষয় মিডিয়ায় প্রকাশিত হওয়ার সুযোগ ছিল না। তাই যা ঘটত তার চেয়েও বেশি রটত সেখানকার মানুষের মুখে মুখে। যদিও অনেকেই তখন ইংল্যান্ডের রানী এলিজাবেথের জারজ সন্তান রয়েছে বলেও কানাঘুষা করতেন। তবে এ বিষয়ে কোনো ইতিহাসবিদরা প্রমাণ পাননি।

‘কুইন এলিজাবেথ’ ছবির দৃশ্যে রানী

‘কুইন এলিজাবেথ’ ছবির দৃশ্যে রানী

এমনো গুজব রয়েছে, রানীর বন্ধ্যাত্ব এমনকি তার বিকৃতি যৌন চাহিদার কারণেই তিনি বিয়ে করেননি। তবে রানীর অবিবাহিত থাকার আসল কারণ হিসেবে অনেকেই মত দিয়েছেন। এলিজাবেথ খুব অল্প বয়সেই তার বাবাকে হারিয়েছিলেন। তার মা আন বোলেনসহ রাজার তিন স্ত্রী মিলে তাকে হত্যা করেছিলেন। এরপর থেকেই রানী বিয়েকে ভয় পেতেন। এজন্য পরপর অনেক সম্পর্কে জড়ালেও কাউকে বিয়ে করেননি তিনি।

এলিজাবেথের বয়স যখন তিন বছর তখন তার সামনেই বাবার শিরচ্ছেদ করা হয়েছিল। এরপর এলিজাবেথের সৎ মা ক্যাথরিন হাওয়ার্ডের মৃত্যুর পর আট বছর বয়সে এলিজাবেথ রাজ্য পরিচালনা শুরু করেন। এলিজাবেথ কখনো চাননি বিয়ে করে তার রাজ্য স্বামীর সঙ্গে ভাগ করে নিতে। নিজের রাজনৈতিক শক্তি হারানোর ভয় ছিল তার মনে। ইতিহাসবিদদের মতে, কূটনৈতিক শক্তি হিসেবেই রানী তার প্রেমিকদের ব্যবহার করতেন।

সূত্র: স্পার্কনোটস