বিপিএলেও ‘প্লেয়ার রিটেইন পদ্ধতি’ চালুর চিন্তা!

প্রকাশিত: ৬:৪৩ অপরাহ্ণ, জুন ৭, ২০২০

খেলা ডেস্ক: ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের সুবাদে এখন মহেন্দ্র সিং ধোনির নাম উঠলে, একইসঙ্গে উচ্চারিত হয় চেন্নাই সুপার কিংসের কথা। একইভাবে বিরাট কোহলির বেলায় চলে আসে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর নাম আর রোহিত শর্মার ক্ষেত্রে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স।

তুমুল জনপ্রিয় আইপিএলে এসব বিশ্ব তারকারা বেশিরভাগ সময় নির্দিষ্ট দলে খেলায়, সেই দলের সঙ্গে তাদের নাম মিশে গেছে নিবিড়ভাবে। দলগুলোর ফ্যান-ফলোয়ার্সের পাশাপাশি ধোনি, কোহলি আর রোহিতের ভক্ত ও সমর্থক যোগ হয়ে একটা বড়সড় ব্যাপার হয়ে গেছে।

প্রতিটি দলের যেমন নির্দিষ্ট সাপোর্টার আছে, তেমনি ধোনি, কোহলি ও রোহিতের মত তারকাদের ভক্তরাও প্রিয় ক্রিকেটার তারকার কথা চিন্তা করে কেউ চেন্নাই, কেউ ব্যাঙ্গালুরু, কেউ মুম্বাই কিংবা অন্যান্য দলগুলোর সমর্থক বনে গেছেন। এতে করে ঐ দলগুলোর ব্র্যান্ডিং ভাল হয়েছে এবং প্রচুর ফ্যান-ফলোয়ার্সও হয়েছে।

পাশাপাশি টুর্নামেন্টে প্লেয়ার্স রিটেইন পদ্ধতি (খেলোয়াড় ধরে রাখার নিয়ম) থাকায় প্রতিবছর দল গোছানো এবং টিম কম্বিনেশন করাও সহজ হয়। টিম ম্যানেজমেন্ট আগে থেকেই জানে, কারা থেকে যাচ্ছে আর কারা চলে যাচ্ছে? তাদের জায়গায় কোন কোন ক্যাটাগরির ক্রিকেটার আনতে হবে। সব মিলে একটা পরিপাটি নিয়মের মধ্যে চলে আসে। এতে করে গোটা আয়োজনটাও হয় সুন্দর।

কিন্তু বাংলাদেশের বিপিএলে এখন পর্যন্ত তা হয়নি। হবে কি? এখানে তো খেলোয়াড় ধরে রাখার নিয়ম মানে ‘রিটেইন পদ্ধতিই’ নেই। বিপিএলে আগেরবারের ক্রিকেটার ধরে রাখার ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। যে কারণে প্রায় প্রতিবছর তারকা পরিবর্তন হচ্ছে।

তামিম এবছর চট্টগ্রামে তো পরের বছর কুমিল্লায়। মাশরাফি আজ ঢাকায় তো পরেরবার রংপুরে। একইভাবে সাকিব, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদেরও কোন নির্দিষ্ট দল নেই। এবার এক দলে খেললে পরেরবার দল পাল্টে নাম লেখাচ্ছেন ভিন্ন দলে।

এতে করে তাদের নিজস্ব যে ভক্ত-সমর্থক আছে তারা পড়ে যাচ্ছে বিপাকে। প্রিয় ক্রিকেটার ও তারকার জন্য প্রতিবার প্রিয় দল পালটাতে হচ্ছে। একবার ঢাকা, পরেরবার কুমিল্লা না হয় রংপুর-খুলনার সমর্থন করতে হচ্ছে।

কিন্তু এ ধারা থেকে বেরিয়ে আসার তাগিদ এবার অনেকের। জানা গেছে, ক্রিকেটার থেকে শুরু করে ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকরাও রিটেইন পদ্ধতি চালুর পক্ষে আগ্রহী। দেশি-বিদেশি মিলে অন্তত ছয়-সাতজন ক্রিকেটার যেন এক দলে থেকে যেতে পারেন এবং সেই দলের হয়ে খেলেন বেশ কয়েক বছর।

আইপিএলে যেমন ধোনি, কোহলি, রোহিতরা খেলছেন, সেরকম আইন প্রবর্তনের ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন খোদ ক্রিকেটাররাই। বিভিন্ন অনলাইন লাইভে তামিম, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহদের মত শীর্ষ তারকারা প্লেয়ার রিটেনশন পদ্ধতি চালুর পক্ষে কথা বলেছেন। তাদের যুক্তি, এতে দলগুলোর সমর্থন বাড়বে, ব্র্যান্ডিং হবে এবং দলগুলোর নির্দিষ্ট সমর্থকগোষ্ঠি তৈরি হবে।

দীর্ঘদিন ঢাকার ক্লাব ক্রীড়াঙ্গনে যেমন ছিল। ফুটবল, ক্রিকেট আর হকিতে নির্দিষ্ট কিছু খেলোয়াড় ছিলেন, যাদের ক্যারিয়ারের বড় সময় হয় মোহামেডান না হয় আবাহনীতে কেটেছে। মোহামেডান বললেই সত্তর দশকে সান্টু, পিন্টু, মঞ্জু , বাদল রায়দের বোঝাত। পরবর্তীতে কায়সার হামিদ, জুয়েল রানা, সাব্বির, এমেকা। নকিবরাই হয়ে উঠেছিলেন সাদা কালোর প্রতীক।

একইভাবে প্রথমদিকে টুটুল, নান্নু, সালাউদ্দীন, অমলেশ; পরবর্তীতে চুন্নু, আশিষ, আসলাম, পাকির আলী, মুন্না, প্রেমলালও হয়ে উঠেছিলেন আকাশী হলুদ-জার্সির আবাহনীর প্রতীক। দুই বড় ও জনপ্রিয় দলের বিশাল সমর্থক গোষ্ঠির একটা নির্দিষ্ট অংশ তাদের প্রিয় ফুটবলার, ক্রিকেটারের কারণেও স্থায়ীভাবে সমর্থক হয়ে গিয়েছিলেন।

বিপিএলেও সেই ধারার প্রবর্তন চান অনেকে। এইতো সেদিন এক ফেসবুক লাইভে ঢাকা ডায়নামাইটসের সিইও ওবায়েদ নিজাম আর কোচ খালেদ মাহমুদ সুজনও অমন মতই দিলেন। তাদের কথা, দলগুলোর ব্র্যান্ডিং এবং সাপোর্টার বাড়ানোর জন্য প্লেয়ার্স রিটেনশন পদ্ধতি চালু করতে হবে। তাহলে ব্র্যান্ডিং ভাল হবে এবং দলগুলোর সমর্থনও বাড়বে।

খালেদ মাহমুদ সুজন বলেছেন, ‘একটি দলে অন্তত চার-পাঁচজন জন স্থানীয় তারকা এবং তিনজন বিদেশি তারকা মিলে সাত-আটজন কয়েকবছর এক দলে খেললে সেই সব তারকার সমর্থক ও ভক্তরাও এক একটি দলে স্থায়ী হয়ে যাবে। পাশাপাশি দলগুলোরও টিম কম্বিনেশন ও প্ল্যানিং করা খুব সহজ হয়।’

করোনার কারণে পূর্ব নির্ধারিত সময় মানে ডিসেম্বরে এবারের বিপিএল আয়োজন নিয়ে আছে সংশয়। তারপরও উৎসাহী ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সংখ্যাগরিষ্ঠরা প্লেয়ার্স রিটেইন পদ্ধতি চাইলে, যখনই হোক না কেন বিপিএলের পরবর্তী আসর থেকে প্লেয়ার্স রিটেইন পদ্ধতি চালুর সম্ভাবনা আছে যথেষ্ঠ।

 

সূত্র: জাগো নিউজ…