যে আমল করলে জাদুটোনায় আক্রান্ত হবে না মুমিন

প্রকাশিত: ৬:৩৬ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৬, ২০১৯

ধর্ম ডেস্ক: জাদুকর, বদ ব্যক্তি কিংবা বদ জিন যদি কোনো মানুষের ক্ষতি করতে চায় তবে তা সম্ভব। এসব বদ জিনিসের ক্ষতি কিংবা কুফল থেকে বেঁচে থাকার অনেক উপায় বা পদ্ধতি রয়েছে। কুরআন-সুন্নাহর আমলেও জাদুটোনা বা ক্ষতি থেকে বেঁচে থাকা যায়।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি যদি জানতে পারে যে, তাকে কি জিনিস দিয়ে কিংবা কোন স্থানে জাদুটোনা করা হয়েছে। তবে সে জিনিস বা সে স্থান আগুনে পুড়িয়ে তা ধ্বংস করার মাধ্যমেও জাদুটোনা থেকে বেঁচে থাকা যায়।

যেমন- শক্রুতাবশত কেউ কারো কিছু চুল সংগ্রহ করে তার ওপর কুফরি করে কোনো স্থানে রেখে দিল। যদি চুল রাখার জায়গাটি চিহ্নিত করা যায়, তাহলে সে স্থানের জিনিস বা এ চুল পুড়িয়ে ফেললে ওই ব্যক্তির ওপর থেকে জাদুটোনার কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যাবে।

তবে ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমেও জাদুটোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা করা যায়। জাদুটোনার কার্যকারিতা নষ্টে কুরআন-সুন্নাহর বেশ প্রভাব রয়েছে।

জাদুর কার্যকারিতা নষ্ট করতে কিংবা জাদু থেকে বেঁচে থাকতে অথবা জাদুতে আক্রান্ত ব্যক্তি চিকিৎসায় নিয়মিত এ আমল করা। যাতে আক্রান্ত ব্যক্তি আরোগ্য লাভ করে। আর তাহলো-
>> আয়াতুল কুরসি পড়া
>> সুরা আরাফ, ইউনুস এবং ত্বহা-এর জাদু বিষয়ক আয়াতগুলো পড়া। এর পাশাপাশি
>> সুরা কাফেরুন, সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস পড়ে একটি পানির পাত্রে দম করা কিংবা জাদু আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে ফুঁ দেয়া এবং আরোগ্য লাভে দোয়া করা।

বিশেষ করে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে পাওয়া দোয়াটি নিজে পড়া এবং আক্রান্ত রোগীকে পড়তে বলা। রোগীর জন্য দোয়া করা। আর তাহলো-
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমাদের মধ্যে কেউ যখন অসুস্থ হয়ে যেত, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসুস্থ ব্যক্তির গায়ে (শরীরে) তাঁর ডান হাত বুলাতেন এবং বলতেন-
اَللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبِ الْبَأْسَ وَاشْفِ أَنْتَ الشَّافِي لا شِفَاءَ إِلا شِفَاؤُكَ ، شِفَاءً لا يُغَادِرُ سَقَمًا
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা রাব্বাননাসি আজহাবিল বাসা ওয়াশফি আংতাশ শাফি লা শিফাআ ইল্লা শিফাউকা- শিফাআন লা ইউগাদিরু সাক্বামা।

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! হে মানুষের প্রতিপালক! আপনি কষ্ট দূর করে দিন ও আরোগ্য দান করুন। (যেহেতু) আপনিই রোগ আরোগ্যকারী। আপনার আরোগ্য দান হচ্ছে প্রকৃত আরোগ্য দান। আপনি এমনভাবে রোগ নিরাময় করে দিন যেন তা রোগকে নির্মূল করে দেয়।’

আবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জাদুটোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর জিবরিল আলাইহিস সালাম যে দোয়া পড়ে ঝাড়ফুঁক করেছিলেন তাও পড়া যেতে পারে। আর তাহলো-
بِاسْمِ اللهِ أَرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللهُ يَشْفِيكَ بِاسْمِ اللهِ أَرْقِيكَ
উচ্চারণ : ‘বিসমিল্লাহি আরক্বিক মিন কুল্লি শাইয়িন ইয়জিক। ওয়া মিন শাররি কুল্লি নাফসিন আও আইনিন হাসিদিন। আল্লাহু ইয়াশফিক। বিসমিল্লাহি আরক্বিক।’
অর্থ : আল্লাহর নামে আমি আপনাকে ঝাড়ফুঁক করছি। সকল কষ্টদায়ক বিষয় থেকে। প্রত্যেক আত্মা ও ঈর্ষাপরায়ণ চক্ষুর অনিষ্ট থেকে। আল্লাহ আপনাকে আরোগ্য দান করুন। আল্লাহর নামে আমি আপনাকে ঝাড়ফুঁক করছি।

এ দোয়াটি ৩ বার পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সুরা নাস, ফালাক, ইখলা ও কাফেরুন পড়ে জাদুটোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে ঝাড়ফুঁক করা যেতে পারে। দোয়া ও আয়াতগুলো পড়ে পানিতে দম করে তা পান করা। আয়াতগুলো হলো-

>> বিসমিল্লাহসহ সুরা ফাতেহা পড়া-
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ (1) الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ (2) الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ (3) مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ (4) إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ (5) اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ (6) صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ (7)

>> আয়াতুল কুরসি তথা সূরা বাকারার ২৫৫ নং আয়াত পড়া-
اَللّٰهُ لَآ اِلٰهَ اِلَّا ھُوَۚ اَلْـحَيُّ الْقَيُّوْمُ لَا تَاْخُذُهٗ سِـنَةٌ وَّلَا نَوْمٌۭ لَهٗ مَا فِي السَّمٰوٰتِ وَمَا فِي الْاَرْضِۭ مَنْ ذَا الَّذِيْ يَشْفَعُ عِنْدَهٗٓ اِلَّا بِاِذْنِهٖ ۭ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَھُمْ ۚ وَلَا يُحِيْطُوْنَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهٖٓ اِلَّا بِمَا شَاۗءَۚ وَسِعَ كُرْسِـيُّهُ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضَ ۚ وَلَا يَـــــُٔـــوْدُهٗ حِفْظُهُمَاۚ وَھُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ

>> সুরা ইউসুফের জাদু বিষয়ক আয়াতগুলো পড়া-
قَالَ إِنْ كُنْتَ جِئْتَ بِآيَةٍ فَأْتِ بِهَا إِنْ كُنْتَ مِنَ الصَّادِقِينَ (106) فَأَلْقَى عَصَاهُ فَإِذَا هِيَ ثُعْبَانٌ مُبِينٌ (107) وَنَزَعَ يَدَهُ فَإِذَا هِيَ بَيْضَاءُ لِلنَّاظِرِينَ (108) قَالَ الْمَلَأُ مِنْ قَوْمِ فِرْعَوْنَ إِنَّ هَذَا لَسَاحِرٌ عَلِيمٌ (109) يُرِيدُ أَنْ يُخْرِجَكُمْ مِنْ أَرْضِكُمْ فَمَاذَا تَأْمُرُونَ (110) قَالُوا أَرْجِهْ وَأَخَاهُ وَأَرْسِلْ فِي الْمَدَائِنِ حَاشِرِينَ (111) يَأْتُوكَ بِكُلِّ سَاحِرٍ عَلِيمٍ (112) وَجَاءَ السَّحَرَةُ فِرْعَوْنَ قَالُوا إِنَّ لَنَا لَأَجْرًا إِنْ كُنَّا نَحْنُ الْغَالِبِينَ (113) قَالَ نَعَمْ وَإِنَّكُمْ لَمِنَ الْمُقَرَّبِينَ (114) قَالُوا يَا مُوسَى إِمَّا أَنْ تُلْقِيَ وَإِمَّا أَنْ نَكُونَ نَحْنُ الْمُلْقِينَ (115) قَالَ أَلْقُوا فَلَمَّا أَلْقَوْا سَحَرُوا أَعْيُنَ النَّاسِ وَاسْتَرْهَبُوهُمْ وَجَاءُوا بِسِحْرٍ عَظِيمٍ (116) وَأَوْحَيْنَا إِلَى مُوسَى أَنْ أَلْقِ عَصَاكَ فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُونَ (117) فَوَقَعَ الْحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ (118) فَغُلِبُوا هُنَالِكَ وَانْقَلَبُوا صَاغِرِينَ (119) وَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِينَ (120)قَالُوا آمَنَّا بِرَبِّ الْعَالَمِينَ (121) رَبِّ مُوسَى وَهَارُونَ (122)

>> সুরা ইউনুসের জাদু বিষয়ক আয়াতগুলো পড়া। সেগুলো হচ্ছে-
وَقَالَ فِرْعَوْنُ ائْتُونِي بِكُلِّ سَاحِرٍ عَلِيمٍ (79) فَلَمَّا جَاءَ السَّحَرَةُ قَالَ لَهُمْ مُوسَى أَلْقُوا مَا أَنْتُمْ مُلْقُونَ (80) فَلَمَّا أَلْقَوْا قَالَ مُوسَى مَا جِئْتُمْ بِهِ السِّحْرُ إِنَّ اللَّهَ سَيُبْطِلُهُ إِنَّ اللَّهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِينَ (81) وَيُحِقُّ اللَّهُ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُونَ

>> সুরা ত্বহার জাদু বিষয়ক আয়াতগুলো পড়া-
قَالُوا يَا مُوسَى إِمَّا أَنْ تُلْقِيَ وَإِمَّا أَنْ نَكُونَ أَوَّلَ مَنْ أَلْقَى (65) قَالَ بَلْ أَلْقُوا فَإِذَا حِبَالُهُمْ وَعِصِيُّهُمْ يُخَيَّلُ إِلَيْهِ مِنْ سِحْرِهِمْ أَنَّهَا تَسْعَى (66) فَأَوْجَسَ فِي نَفْسِهِ خِيفَةً مُوسَى (67) قُلْنَا لَا تَخَفْ إِنَّكَ أَنْتَ الْأَعْلَى (68) وَأَلْقِ مَا فِي يَمِينِكَ تَلْقَفْ مَا صَنَعُوا إِنَّمَا صَنَعُوا كَيْدُ سَاحِرٍ وَلَا يُفْلِحُ السَّاحِرُ حَيْثُ أَتَى (69)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত আমলের মাধ্যমে জাদুটোনায় আক্রান্ত হওয়া থেকে তাওফিক দান করুন। জাদুটোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির ওপর এ আমল প্রয়োগ করার তাওফিক দান করুন। কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক আমল করে ইসলামি জীবন-জিন্দেগী যাপন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।