ধর্ম ডেস্ক: দানের মাধ্যমে মহান আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর মানুষের মাঝে রিজিকের ভারসাম্যতা রক্ষা করেন। বিনিময়ে প্রতিদানও দিয়ে থাকেন। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,
إِن تُبْدُواْ الصَّدَقَاتِ فَنِعِمَّا هِيَ وَإِن تُخْفُوهَا وَتُؤْتُوهَا الْفُقَرَاء فَهُوَ خَيْرٌ لُّكُمْ وَيُكَفِّرُ عَنكُم مِّن سَيِّئَاتِكُمْ وَاللّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ
‘যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান-সদকা কর, তবে তা কতই না উত্তম। আর যদি গোপনে ফকির-মিসকিনকে দান করে দাও, তবে আরো বেশি উত্তম। আর তিনি তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (সূরা: বাকারা, আয়াত: ২৭১)
গোপন-প্রকাশ্যে যে কোনোভাবে দান করা যায়। সকল দানেই সওয়াব রয়েছে। বিদায় হজের সময় রাসূলুল্লাহ (সা.) পবিত্র নগরী মক্কায় অবস্থান করছিলেন। সে সময় হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) অসুস্থ ছিলেন। প্রিয় নবী (সা.) তাকে দেখতে গেলেন। প্রচুর সম্পদের অধিকারী হজরত সাদ (রা.) তার সম্পদ সাদকা করার ইচ্ছা পোষণ করলেন। কী পরিমাণ সম্পদ দান-সাদকা করা যাবে? এ হাদিসে তা ফুটে উঠেছে।
সাহাবি হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) ছিলেন প্রচুর সম্পদের অধিকারী। তার মৃত্যুর পর একমাত্র কন্যাসন্তান ছাড়া আর কোনো ওয়ারিস ছিল না। যখন রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে দেখতে গেলেন, তখন তিনি বললেন-
ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার যে কী কষ্ট হচ্ছে, তা তো আপনি দেখতেই পাচ্ছেন। মনে হচ্ছে আর বাঁচব না। আমার প্রচুর সম্পদ রয়েছে। অথচ আমার একটি মাত্র মেয়ে ছাড়া আমার ওয়ারিস হওয়ার মতো আর কেউ নেই। এ অবস্থায় আমি কি আমার সম্পদের দুই-তৃতীয়াংশ দান-সাদকা করতে পারি? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘না’। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, তবে আমি কি অর্ধেক দান-সাদকা করে দিতে পারি? এবারও রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন- ‘না’। তখন তিনি জানতে চাইলেন, তবে কি এক-তৃতীয়াংশ সম্পদ দান-সাদকা করতে পারি? এবার রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন- ‘এক-তৃতীয়াংশ সম্পদও তো অনেক।’
তারপর রাসূলুল্লাহ (সা.) যা বললেন, তা উম্মতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নসিহত। তাহলো-
إِنَّكَ أَنْ تَذَرَوَرَثَتَكَ أَغْنِيَاءَخَيْرٌمِنْ أَنْ تَذَرَهُمْ عَالَةً يَتَكَفَّفُونَ النَّاسَ وَلَسْتَ تُنْفِقُ نَفَقَةً تَبْتَغِي بِهَا وَجْهَ اللهِ إِلاَّ أُجِرْتَ بِهَا حَتّى اللّقْمَةَ تَجْعَلُهَا فِي فِي امْرَأَتِكَ
‘সন্দেহ নেই, তোমার ওয়ারিসদের তুমি যদি এমন অভাবীরূপে রেখে যাও, যার ফলে তারা মানুষের কাছে হাত পাতবে, এ অবস্থার তুলনায় তাদের তুমি সচ্ছলরূপে রেখে যাওয়া অনেক ভালো। আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রত্যাশায় তুমি যা কিছুই ব্যয় করবে, তোমাকে এর প্রতিফলন দেয়া হবে। এমনকি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যে লোকমাটি তুলে দাও; সে জন্যও তুমি পুরস্কার (প্রতিদান) পাবে।’ (বুখারি)
এ হাদিসে দান-সাদকার পরিমাণ কেমন হবে তা সুস্পষ্ট। হাদিসে উল্লেখিত বিষয়টি দান-সাদকার ক্ষেত্রে স্মরণে রাখা জরুরি। কেননা দান-সাদকার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ আমলেও ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। যে ব্যাপারে উল্লেখিত হাদিসে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.)। কোরআন-সুন্নাহতে বারবার দান-সাদকার কথা বলা হলেও তিনি তিন ভাগের দুই ভাগ; অর্ধেক দান করায় সম্মতি দেননি। অতঃপর তিন ভাগের এক ভাগের ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছেন। আবার এ অংশকেও বেশি বলেছেন।
মহান আল্লাহ আমাদের এ আলোচনার ওপর আমল করার তাওফীক দারু করুন। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দান-সাদকার ক্ষেত্রে হাদিসের অনুসরণ ও অনুকরণে বেশি বেশি দান করার তাওফিক দান করুন। নিজের পরিবার-পরিজনের প্রতি লক্ষ্য রাখার তাওফিক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমিন।