স্টাফ রিপোর্টার: এক সপ্তাহ আগে (২৩ জুন) গাছ কাটার অভিযোগ তুলে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের ধলাই চা বাগানের ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম ও তার কয়েকজন পেটুয়াবাহিনীর হাতে নিরীহ চা শ্রমিক রাধে শ্যামের ছেলে হীরা ভরকে (২২) আটকিয়ে বেদড়ক পিটিয়ে গুরুতর করেন। বেদড়ক পিটুনিতে যুবক হীরাভরের অবস্থা গুরুতর হলে তাকে প্রথমে কমলগঞ্জ ও পরে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় সাধারণ চা শ্রমিকরা ব্যবস্থাপকের কাছে বিচার চাইলে তিনি নানা অজুহাতে কাল ক্ষেপন করায় সোমবার (২৯ জুন) সকাল ১২টায় ধলাই চা বাগানের নারী-পুরুষ চা শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রেখে কারখানা ও ব্যবস্থাপকের বাংলা ঘেরায় করে কর্মবিরতি পালর করে।
ধলাই চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটি, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-ধলই ব্যালির নেতৃবৃন্দ ও মাধবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে টানা ৫ ঘন্টার সামাজিক বৈঠক বসলেও ব্যবস্থাপকের অসহযোগিতার কারণে সমস্যার কোন সমাধান হয়নি। সোমবার বিকালে থেকে আবারও ধলই চা বাগানে শ্রমিক অসন্তোষ বিরাজ করছে।
খোঁজ নিয়ে ও বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন মনু ধলাই ভ্যালির সভাপতি ধনা বাউরি ও সাধারণ সম্পাদক নির্মল দাশ পাইকার সাথে কথা বলে জানা যায়, ধলই চা বাগানের বড় লাইন শ্রমিক বস্তির চা শ্রমিক রাধে শ্যামের ছেলে হীরা ভরের উপর প্লান্টেশন এলাকা থেকে একটি গাছ কাটার অভিযোগ করা হয়। এ অভিযোগে ধলই চা বাগানের ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম ও তার ঘনিষ্ট কয়েকজন পেটুয়াবাহিনীরা মিলে যুবক হীরা ভরকে আটিকয়ে বেদড়কভাবে পিটান। বেদড়ক পিটুনিতে হীরা ভরের শারীরিক অবস্থা ক্রমে খারাপ হলে প্রথমে তাকে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। ঐ রাতেই আবার হীরা ভরকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
ধলই চা বাগানের সাধারণ শ্রমিকরা এ ঘটনার বিচার প্রার্থনা করলে ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম অহেতুক কাল ক্ষেপণ করে আর বিচার করেননি। ফলে সাধারণ চা শ্রমিকরা বিক্ষোব্ধ হয়ে সোমবার সকাল ১০টায় কাজ বন্ধ করে দিয়ে ১২ টার দিকে ধলই চা বাগানের কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে ও একই সাথে ব্যবস্থাপকের বাংলো ঘেরাও করে কর্ম বিরতি পালন করে।
ঘটনার খবর পেয়ে মাধবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পুষ্প কুমার কানু বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মুন-ধলই ভ্যালির সভাপতি ধনা বাউরি সাধারণ সম্পাদক নির্মল দাশ পাইনকা, ধলই চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির নেতৃবৃন্দ ও ধলই চা বাগানের ব্যবস্থাপক আমিনুর ইসলামের উপস্থিতিতে সামজিক বৈঠক বসে। বেলা সাড়ে ১২ টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ৫ ঘন্টা সামাজিক বৈঠক হলেও ব্যবস্থাপকের অসহযোগিতায় আর সমস্যার কোন সমাধান হয়নি। এক পর্যায়ে ব্যবস্থাপক বৈঠক ছেড়ে তার বাংলোয় চলে যান। এতে সাধারণ চা শ্রমিকদের মাঝে আরও উত্তেজনা বেড়ে যায়।
মাধবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পুষ্প কুমার কানু বলেন, ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। সাধারণ চা শ্রমিকরা তার নির্যাতন ও নিপিড়নের শিকার। সাম্প্রতিক ঘটনায় কোন প্রকার যাচাই না করেই কয়েকজন পাহারাদারকে নিয়ে যুবক হীরা ভরকে আটকিয়ে বেদড়ক ভাবে পিটিয়েছেন। আহত হীরা ভর মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে এসেছে।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু ধলাই ভ্যালির সাধারণ সম্পাদক নির্মল দাশ পাইনকা বলেন, সাধারণ চা শ্রমিকরা অভিযোগ করে বলেন, মূলত ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলামই এ চা বাগানের গাছ কেটে বিক্রির সাথে জড়িত। গত বছর আকাশমনি ও মুল্যবান ট্রাক ভর্তি কাঠ পাচারের সময় হাতে নাতে আটক করে। এছাড়া ছোটখাটো অপরাধের জন্য সাধারণ চা শ্রমিকদের ৫ হাজা টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমনা করে এই টাকা নিজ পকেটে নেন ব্যবস্থাপক। আজকের কর্ম বিরতিতে শ্রমিকদের একটি দাবি ছিল অবিলম্বে ব্যবস্থাপক আমিনুর ইসলামকে এ চা বাগান থেকে বদলি করার জন্য।
অভিযোগ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করে ধলই চা বাগানের ব্যবস্থাপকের সাথে কথা বলা যায়নি। এমনকি তিনি মুঠোপোন বন্ধ করে দিয়েছেন। এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত বিকাল সাড়ে ৫ টায় সালিশ চলছে।