আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মহামারির লাগাম টানতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নতুন করে বিধি-নিষেধ আরোপ করলেও করোনাভাইরাসের বিস্তারের গতি রয়েছে ঊর্ধ্বমুখী। বিশ্বজুড়ে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা রোববার আড়াই কোটি ছাড়িয়েছে।
ফরাসী বার্তাসংস্থা এএফপির পরিসংখ্যান বলছে, জুলাইয়ের মাঝামঝি সময়ের পর থেকে বিশ্বজুড়ে প্রতি চারদিনে নতুন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ১০ লাখ করে মানুষ। করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা আড়াই কোটি ছুয়ে ফেলার দিনে ভারতে ৭৮ হাজারের বেশি শনাক্ত হয়েছে; যা এ যাবৎকালে বিশ্বে একদিনে সর্বোচ্চ আক্রান্তের রেকর্ড।
অর্থনীতির ওপর চাপ কমিয়ে আনতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ ভারতে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে লকডাউনের বিধি-নিষেধ শিথিল করা হচ্ছে। ১৩০ কোটি মানুষের এই দেশ করোনা ভাইরাসের নতুন উপকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
এর আগে বিশ্বে একদিনে সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল গত ২৫ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে। করোনায় বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্রে ওইদিন ৭৮ হাজার ৪২৭ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়।
নিউজিল্যান্ড এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলো করোনার প্রাথমিক প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে অনেকাংশে সফল হলেও বর্তমানে নতুন সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হিমশিম খাচ্ছে।
মহামারি করোনায় বিশ্বে সর্বাধিক মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে; দেশটিতে মারা গেছেন ১ লাখ ৮৬ হাজার ৮৫৫ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৬১ লাখ ৩৯ হাজারের বেশি মানুষ।
করোনায় অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল লাতিন আমেরিকা এখনও প্রথম ঢেউয়ের বিরুদ্ধে লড়ছে। এই অঞ্চলে সর্বাধিক প্রাণহানি ঘটেছে ব্রাজিলে; দেশটিতে ১ লাখ ২০ হাজার ৪৯৮ জন মারা গেছেন করোনায়। এরপরই এই অঞ্চলের আরেক দেশ মেক্সিকোতে ৬৩ হাজার ৮১৯ জনের প্রাণ নিয়েছে করোনা। করোনায় মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের পরই আছে এ দুই দেশ।
ফিওক্রুজ পাবলিক হেলথ ইনস্টিটিউটের গবেষক ক্রিস্টোভাম বার্সেলোস বলেন, ব্রাজিলে করোনায় সংক্রমণের ঢেউ বর্তমানে স্থিতিশীল থাকলেও খুবই বিপজ্জনক পর্যায়ে রয়েছে। দেশটিতে প্রত্যেকদিন গড়ে এক হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু এবং ৪০ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন।
বিশ্বজুড়ে সংক্রমণ এবং মৃত্যু লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়লেও কোভিড-১৯ এর কোনও ভ্যাকসিন কিংবা কার্যকরী চিকিৎসা এখনও আবিষ্কার হয়নি। ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে দেশে দেশে সামাজিক দূরত্ব বিধি ও লকডাউন জারি করে এই মহামারির ধাক্কা লাঘবের চেষ্টা চলছে।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের নতুন সংক্রমণ কিছুটা স্থির রয়েছে। সংক্রমণের হার আগস্টে ১ দশমিক ২ শতাংশের আশপাশে রয়েছে। কিন্তু গত জুলাইয়ে সংক্রমণের এই হার ছিল ১.৭, জুনে ১.৮, মে মাসে ২.১, এপ্রিলে ৪.৬ এবং মার্চে ছিল ৭.৭ শতাংশ।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের উৎপত্তি হওয়ার পর তা বিশ্বের দুই শতাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বজুড়ে এই ভাইরাসের লাগামহীন বিস্তার অব্যাহত থাকলেও চীনে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে সবকিছুই।
গত সপ্তাহে করোনা উৎপত্তিস্থল উহানে হাজার হাজার মানুষের মাস্কবিহীন ও কোনও ধরনের বিধিপালন ছাড়াই ব্যাপক জমকালো এক কনসার্টের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার এক বার্তা বিশ্বকে দিয়েছে বেইজিং।
সূত্র: এএফপি, রয়টার্স।