আব্দুর রাজ্জাক রাজা: কোভিড ১৯ নামক করোনা ভাইরাস চীনের উহান প্রদেশে ২০১৯ সালের শেষের দিকে আর্বিভুত হয়। প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের আগ্রাসী থাবায় বিশ্বের সব কিছু থমকে গেছে। অভুতপূর্ব বিপর্যয় তৈরী করেছে। ভাইরাসটি সংক্রামক ব্যাধি। সংক্রামক থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় হচ্ছে সামাজিক দুরত্ব মেনে চলা। নিজেকে আবদ্ধ রাখা। বার বার সাবান পানি দিয়ে হাত ধৌত করা ইত্যাদি। করোনা ভাইরাসের পূর্ণ যৌবন চলাকালীন সময়ে মুসলমান সম্প্রদায়ের সিয়াম সাধনার মাসের আগমন ঘটেছিল করোনা ভাইরাসের। এরপর গেল পবিত্র ঈদুল আযহা। মুসলমানরা বিগত ১টি ঈদুর ফিতর ও ১টি ঈদুল আযহা উৎসাহ উদ্দিপনা ছাড়াই উদযাপন করেছে।
এরিমধ্যে আবারো ফিরে এসেছে পবিত্র মাহে রমজান ও ঈদুল ফিতর। এবারো করোনা ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মুসলমান সম্প্রদায় উৎসব মুখর আয়োজনের মাধ্যমে মসজিদে নামাজ পড়তে বা ইফতারের আয়োজন করতে পারেনি। ইতিমধ্যে সিয়াম সাধনার মাস অতিক্রম করে চলে এসেছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। কিন্তুু ভাইরাসের দাপট এখন ও রয়ে গেছে। তাই এবার ও কঠোর বিধি নিষেধের কারনে অনাড়ম্বর ভাবে ভিন্ন ধারায় ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে হবে । যুগ যুগ ধরে প্রচলিত সংস্কৃতির থেকে বেরিয়ে এসে ভিন্ন ধারায় উদযাপিত হবে ঈদ। যার কারনে নতুন সংস্কৃতির অবয়ব সৃষ্টি করবে। ঈদ মানে উৎসব। ঈদ মানে আনন্দ। অন্যান্য উৎসব থেকে ঈদের পার্থক্য হলো ছোট-বড়,ধনী-গরীব সবাই এর অংশীদার। উৎসব মুখর পরিবেশে ধনী-গরীব নির্বিশেষে সবাই কাতারবন্ধী হয়ে ঈদগাহে ঈদের জামায়াতে শামীল হয়ে পরম করুনাময়ের নিকট ক্ষমা সহ নানা প্রার্থনা করা। নামাজ শেষে একে অপরের সাথে কোলাকোলি করা। বয়োজ্যৈষ্টদের কদমবুছি। একে অপরকে বাড়ীতে নিয়ে গিয়ে আপ্যায়ন করানো। শিশু-কিশোররা বাড়ী সহ পাড়া-মহল্লায় হৈ-হুল্লুড় করতো বয়োজ্যৈষ্টদের কদমবুছি করে নানা বায়না আদায় করে নিতো। তাছাড়া এ-বাড়ী সে-বাড়ী ঘুড়ে বেড়ানোর অন্য রকম পরিবেশ ও আনন্দ। ভাইরাসটি সব কিছু উল্টপাল্ট করে দিয়েছে। এবার ও ঈদের জামায় ঈদগাহের পরিবর্তে সীমিত পরিসরে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে মসজিদে পড়তে হবে। সংক্রামিত হওয়ার আশংকায় নিজেদেরকে ঘুঠিয়ে রাখতে হবে। ভাইরাসটি চিরাচরিত চলমান ভাব-ধারার ছন্দপতন ঘটিয়েছে। মানুষে-মানুষে সামাজিক সেতু বন্ধনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। সামাজিক হওয়া মানুষদের মধ্যে দুরত্বের সৃষ্টি করেছে। অর্থাৎ, সমাজ ব্যবস্থা,ধ্যান-ধারনা,আন্তরিকতা ও দর্শনকে। এবারের ও ঈদ আনন্দ,সৌহার্দ্য ,ভ্রাত্ববোধের বন্ধন ও যোগাযোগের জন্য ইতিবাচক নয়। তবু ও প্রকৃতির নিয়মেই ঈদ এসেছে। আমরা ও এক ভিন্ন আংঙ্গিকে ঈদ উদযাপন করবো। ঈদ উদযাপন স্মৃতির মনি কোঠায় অনন্তকাল দাগ কেটে রাখবে। ব্যাপক জন গণত্বের দেশ হিসাবে বাংলাদেশে সকল সময় সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে চলা সত্যিই কষ্ট সাধ্য ব্যাপার। প্রকৃতি আমাদেরকে এই পরিবেশ সৃষ্টি করে দিয়েছে। প্রকৃতির উপরতো আর আমাদের হাত নেই। তাই নিজেদেরকে সংক্রামিত হওয়ার আশংকা থেকে রক্ষা করার জন্য একে নিয়তীর বিদান হিসাবে মেনে নিয়েই উদযাপন করতে হবে। তাই নিজেদের রক্ষা করার স্বার্থেই নিয়ম মানতে হবে। করোনায় নিজে সচেতন থাকি অন্যকে ও সচেতন করি। সচেতন হয়ে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখেই আমাদেরকে ঈদ উদযাপন করতে হবে। পরিশেষে , ঈদ সবার জীবনে বয়ে নিয়ে আসুক আনাবিল আনন্দ আর সুখ। সকলের সুস্বাস্থ্য ও সমৃদ্ধিময় জীবন কামনা করি। এই প্রত্যাশায় সকলকেই জানাই ,ঈদ মোবারক।
লেখক – দৈনিক যুগান্তর ,কমলগঞ্জ প্রতিনিধি।