দিত্বীয় বিশ্বযুদ্ধ ! একজন আমেরিকানের ফিরে দেখা স্মৃতিতে কমলগঞ্জের শমশেরনগর

প্রকাশিত: ২:৫৭ অপরাহ্ণ, জুন ১৭, ২০২০
ছবি ধলাইর ডাক
নজরুল ইসলাম: আজ থেকে ৭৫ বছর পূর্বে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জে, ইরভিং গ্রোভ নামক একজন আমেরিকান ভদ্রলোক যিনি মৌলভীবাজার জেলার শমশেরনগর বিমানবন্দরে কাজ করেছিলেন। নান্দনিক শমশেরনগর নিয়ে তিনির স্মৃতিপঠ ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন যা পড়ে আমি আবেগে আপ্লুত হয়েছি। আপনাদের তরে মার্কিন ভদ্রলোকের ফিরে দেখা স্মৃতি শেয়ার করব বলে গেল দুই বছর ধরে ফাঁকিবাজি করছি। শমশেরনগরকে হৃদয় দিয়ে ভালবাসেন একজন শমশেরনগর প্রেমিক, সমাজকর্মী সামসুল আলম মিন্টু। তিনি প্রায়ই শমসেরনগরের নান্দনিক সৌন্দর্য্যকে ক্যামেরাবন্দি করে সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেন। আমি দেখি আর ভাবি, এটা কি সত্যি শমসেরনগর? অদ্য সামাজিক মাধ্যমে তিনি শমসেরনগরের গল্ফ মাঠের একটি ফটো আপলোড করেছেন যা দেখে আমার মনে পড়ে গেল জীবনানন্দ দাশের ‎রূপসী বাংলা‎ কবিতার লাইন দুটি -আমি বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর। মনে পড়ে গেল বাংলা গানের সেই লিরিক্স “বাড়ির পাশে মধুমতি পুবাল হওয়া বয়। আমরা কিন্তু আমাদের আশপাশের সৌন্দর্যের প্রতি উদাসীন, অনেকটা স্ত্রীকে পাশে রেখে ভাবীর হাতের মুখরোচক  রান্না করা খাবারের ভূয়সী প্রসংশা। প্রবাদ ও আছে “ঘরের গরু আঙিনার ঘাস খায় না, পাঠক আর ফাঁকিবাজি না ,তাৎক্ষণিক লিখতে বসেছি। চেষ্টা অব্যাহত থাকবে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় মার্কিন ভদ্রলোকের স্মৃতিপটকে উপস্থাপন। তবে তা শুরুর আগে কমলগঞ্জ শমশেরনগরের  প্রাকৃতিক নান্দনিকতার বর্ণন না করলে প্রাকৃতিক সুন্দর্য্যের প্রতি কৃপণতা হবে বলে মনে করছি। 

বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলো এ যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি। টিলাঘেরা সবুজ চা বাগান, ছায়া নিবিড় পরিবেশে অবস্থিত নয়নাভিরাম মাধবপুর লেক, ঝরনাধারা হামহাম জলপ্রপাত, মাগুরছড়া ডবলছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী ধলই চা বাগানে অবস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ, শিল্পকলা সমৃদ্ধ মণিপুরীসহ ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জীবনধারা ও সংস্কৃতিসহ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এ জনপদ ইতিমধ্যে পর্যটকদের দৃষ্টি কেড়েছে। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সংরক্ষিত বনাঞ্চল সবচেয়ে দর্শনীয়, নান্দনিক ও আকর্ষণীয়। অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে সবুজ বৃক্ষরাজি। এই উদ্যান পশুপাখি বন্যপ্রাণীর নিরাপদ আবাস স্থল। ১৯৯৬ সালে ১২৫০ হেক্টর এলাকা নিয়ে লাউয়াছড়াকে ঘোষণা করা হয় জাতীয় উদ্যান। এছাড়া জাতীয় উদ্যানে ৪৬০ প্রজাতির প্রাণিবৈচিত্র্যের ভেতর ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪ প্রজাতির উভয়চর প্রাণী, ৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি, ২০ প্রজাতির অর্কিড, ২০ প্রজাতির স্তন্যপ্রায়ী প্রাণী এবং ১৭ প্রজাতির পোকামাকড় রয়েছে। আগর বাগান, বিরল প্রজাতির গাছ, নানা প্রজাতির পাখি ,পাখির ডাক, ছড়া, বনফুল, অর্কিড, চশমা বানর এগুলো এ বনের বিশেষ আকর্ষণ। ঢাকা থেকে প্রায় সোয়া ২শ’ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে লাউয়াছড়ার অবস্থান। ঢাকা থেকে সরাসরি ট্রেন অথবা বাসযোগে শ্রীমঙ্গল নেমে খুব সহজেই আসতে পারেন। 
 
গেল বছর ইস্টার হলিডেতে লন্ডন থেকে বাংলাদেশ ভিজিট করতে গিয়ে নিজের আবাসস্থলের পাশে এমন নান্দনিকতা যা আমাকে ভাবিয়ে তুলেছিল। এ বনের বিচিত্র পশুপাখি ও পোকামাকড়ের অদ্ভুত ঝিঁঝিঁ শব্দ, বানরের ভেংচি, ভাল্লুকের গাছে গাছে ছোটাছুটির দৃশ্য যা আমাকে ও আমার মেয়েদের স্বল্প সময়ে আকৃষ্ট করেছিল। পাঠক, কমলগঞ্জের নান্দনিকতার ধারাবাহিক বর্ণনা বর্ণন করতে গেলে আর্টিকেল হয়ে উঠবে উপন্যাস। যা আমার মুখ্য উদ্যেশ্যকে ব্যাহত করবে। আজ একজন আমেরিকান নাগরিক জে, ইরভিং গ্রোভের শমসেরনগর নিয়ে তিনির ফিরে দেখা স্মৃতিপট আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাচ্ছি। কথা দিচ্ছি শমসেরনগর নিয়ে একটু ধারনা দিয়েই ভদ্রেলোকের স্মৃতিপট আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।
 
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর সময়ে ব্রিটিশ আমলে গড়ে উঠেছে কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগরে বিশালাকার বিমানবন্দর। বর্তমানে এখানে আরটিএস (রিক্রুট ট্রেনিং) স্কুল স্থাপন করায় ভেতরে প্রবেশ করে ভ্রমণ করা সবার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে না। শমশেরনগর বিমান বাহিনী ইউনিট এলাকায় পতিত ভূমিকে কাজে লাগিয়ে কাঁঠাল, আনারস, লিচু, কুল, ধান, আলুসহ নানা জাতের ফল, কৃষি ও মৎস্য খামার গড়ে তোলা হচ্ছে। শমশেরনগর বিমান বাহিনীর সংরক্ষিত এলাকা সংলগ্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধকালীন বধ্যভূমির উপর একটি স্মৃতিসৌধও নির্মিত হয়েছে।
এছাড়া বিমানবন্দর সড়কেই রয়েছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী পরিচালিত দৃষ্টিনন্দন বিএএফ শাহীন কলেজ। ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী দুর্গম পাহাড়ি এলাকা ডবলছড়া। ত্রিপুরা থেকে উৎপত্তি হওয়া একটি পাহাড়ি ছড়ার নামে স্থানটির নামকরণ হয়েছে। 
 
পাঠক ,ঝাঁপসা মনে পড়েছে কোথায় যেন পড়েছিলাম লেখক সমাবেশ শেষে আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে ফিরে প্রয়াত হুমায়ন আহমদ স্যার তিনির অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে লিখেছিলেন আমেরিকায় যখন তিনি রাত্রিযাপন করছিলেন কি যেন তাকে ভৌতিক ভীতি  দিয়েছিল। তিনির মনে হয়েছিল কে যেন তাঁর দরজায় নক করছে, কে তাকে ডাকছে, কথা বলেছে। তিনি ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। ঘুম থেকে জেগে উঠে তিনি নিশ্চিত হয়েছিলেন তিনি সপ্ন দেখেছেন ! হুমায়ন আহমদ স্যার নিজে নিজেকে প্রশ্ন করছেন আমেরিকান ভুত তো বাংলায় কথা বলার কথা না , যদি ভুত-ই হয়ে থাকে।
 
পাঠক, জে, ইরভিং গ্রোভ (J. Irving Grove) মার্কিন ভদ্রলোক শমসেরনগর নিয়ে তিনির ফিরে দেখা স্মৃতি কাব্যিক ইংরেজিতে বর্ণনা করেছেন যা আমাকে অনেকটা ঝামেলায় ফেলে দিয়েছে। শমসেরনগর বিমানবন্দর নিয়ে ৭৫ বছর পূর্বের তিনির ফিরে দেখা স্মৃতিচারন করে লিখেছেন-
 
আমার প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষ করার পরে পার্ল হারবারের উপর জাপানি হামলার পরে ১৯৪২ সালের জানুয়ারিতে আমাকে মার্কিন সেনাবাহিনীর এয়ার কর্পস-এ নামানো হয়েছিল। আমি উইসকনসিন রাজ্যের রেডিও স্কুলে গিয়েছিলাম এবং ১৯৪৩ এর প্রথম দিকে আমাকে ফ্লোরিডার লেকল্যান্ড পাইলট প্রশিক্ষণ বেসে প্রেরণ করা হয়েছিল। সেখানে আমার কাজ ছিল ফ্লাইট প্রশিক্ষণের সিমুলেটর পরিচালনা করা যা ছিল জুনিয়র পাইলটরা ঝুঁকি না নিয়ে নিরাপদ উড্ডয়নের অনুশীলন। আমি লেকল্যান্ডে থেকেছি ১৯৪৪ সালের অক্টোবর অবধি ব্রিটিশ ভারতে যাওয়ার নির্দেশ পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। আমার যাত্রা আমাকে রেলপথে ক্যালিফোর্নিয়ায় নিয়ে গিয়েছিল পশ্চিম উপকূলে এবং জাহাজে করে প্রশান্ত মহাসাগর পেরিয়ে। ১৯৪৪ সালের নভেম্বর মাসে আমি কলকাতায় অবতরণ করলাম। যুদ্ধের বোধগম্য বিভ্রান্তির সময় আমাকে শমসেরনগরে ইউএস এয়ার Base এ নিযুক্ত করার আগে আমাকে কদিনের জন্য বম্বে পাঠানো হয়েছিল।
 
লিখেছেন ,আমি ডিসেম্বরের গোড়ার দিকে শমশেরনগরে পৌঁছেছিলাম যা ছিল একটি ব্যস্ত ডিপো। যেটি ভারত থেকে ‘ওভার দ্য হ্যাম্প’ থেকে উড়ে চলা মধ্য চীনে যুদ্ধরত চীনা জাতীয়তাবাদী বাহিনীর সরবরাহের জন্য চালিত বিমানের ধারাবাহিক প্রবাহকে সন্ধান করেছিল। বিমানটি হ্যাঙ্গার এবং মেরামত কর্মশালা গুলির দৃষ্টিকোণ থেকে বেসটি ভালভাবে সজ্জিত ছিল। তবে আমাদের বেশিরভাগ সৈন্যদের থাকার ব্যবস্থা ছিল অনুন্নত। আমরা বড় বাঁশের ঝোপগুলিতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম এবং খেয়েছিলাম। এবং আমার মনে আছে পানির ব্যবস্থাটি একটি বড় ক্যানভাস ব্যাগ ছিল যা একটি খুঁটির ত্রিপোড থেকে ঝুলানো ছিল। যদিও এয়ারফিল্ডের ‘ল্যান্ডিং লাইট’ এবং মেরামতের দোকান গুলির জন্য বিদ্যুৎ পাওয়া যায়, লিভিং কোয়ার্টারে আলোকসজ্জার কোনও উপায় ছিল না – যার অর্থ আমরা সাধারণত খুব তাড়াতাড়ি বিছানায় চোলে যেতাম। মূলত বিমানটি শিখা এবং মশাল দিয়ে অবতরণ করে পরিচালিত হয়েছিল। 
 
 লিখেছেন, আমি হিমালয়ের ওপারে চীনে পেট্রোল উড়ানোর জন্য ব্যবহৃত বিশাল সি ১০৯ ট্যাঙ্কারে রেডিও সরঞ্জামগুলি মেরামত করতে গিয়েছিলাম। ওভার দ্য হ্যাম্প ‘বিমানগুলি উড়ানোর জন্য যে ছেলে গুলো ফ্লাই করেছিল তাদের অনেক আর ফিরে আসেনি। ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার এড লন্ডি যাকে আমি আমার স্মৃতি সতেজ করার জন্য এবং শমশেরনগরের আগের দিনগুলির কথা বলার জন্য ধন্যবাদ জানাতে চাই।
 
 লিখেছেন, আমার কাছে শমশেরনগরের উত্তপ্ত আবহাওয়া কিছুটা অভ্যস্ত হয়ে উঠল। মিশিগানে ডিসেম্বরে বাড়ি ফিরে সেখানে ছিল তুষার, তাপমাত্রা ছিল হিমাঙ্কের নীচে। শমশেরনগরে দিনে প্রায় ৮০-৯০ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছিল যদিও রাতে কিছুটা শীতল হওয়া ছিল। গরম কাকে বলে আমি টের পেয়েছি। ক্রিসমাসের দিন পর্যন্ত আমরা base এ ছিলাম। শমশেরনগর এয়ারপোর্ট থেকে মাইল দূরে। যখন তারা আমাদের রেললাইনের উপর দিয়ে শমশেরনগর শহরে যেতে দেয় আমার মনে আছে সবকিছু ছিল সবুজ। আমেরিকায় আমি শহরের বাহিরে কান্ট্রি সাইটে বসবাসে অভ্যস্ত ছিলাম। তবে শমশেরনগর দেখে মনে হয়েছে এমন নান্দনিক এর আগে কখনও দেখিনি।
 
লিখেছেন, আমরা শমশেরনগরে পৌঁছে প্রথমেই একজন স্থানীয় বাসিন্দার সাথে পরিচিত হই। তিনি যুদ্ধের কয়েক বছর আগে আমেরিকায় আমাদের ডেকেট্রয়েটের ফোর্ড মোটর কারখানায় কাজ করেছিলেন। আমি যেখানে বড় হয়েছি তার থেকে প্রায় ১০০মাইল দূরে। তিনি আমাদের অবাক করে দিয়েছিলেন। তিনি আমাদের বলেছিলেন যে, শমশেরনগরে তাঁর একটি দোকান ছিল যা সে সময়ের স্মৃতি হিসাবে ‘ ডেট্রয়েট স্টোর’ নামকরণ ছিল। আমি ভাবছি শমশেরনগরের কেউ যদি সেই স্টোরটি এখনও মনে রাখে?
 
লিখেছেন ,শমশেরনগর ছিল বিভিন্ন দোকান এবং ব্যবসায়ীদের কাছে আকর্ষণীয় জায়গা। প্রতিবার যখন আমি শহরে যেতাম অবাক হয়ে ওঠার মত কিছু নতুন এবং বিদেশী ছিল। সাপ দিয়ে খেলা, সার্কাস,যাদুকর, ফকির দরবেশ একবার এমনকি আমি একটি হিন্দু বিবাহের মিছিল দেখেছি এবং আমি সমস্ত কিছুর ছবি তুলেছিলাম। শহরের চারপাশে সর্বদা কৌতূহলী শিশুদের দৌড়াদৌড়ি খেলাধুলা মনে পড়ছে । দু’জনের কয়েকটি ছবি আমার কাছে এখনও রয়েছে, দুটি ছোট ছেলে যারা ভাই হতে পারে এবং একটি মিষ্টি ছোট মেয়ে যিনি একটি বড় মিলিটারি ট্রাকের ফেন্ডারে উঠে মজা পেয়েছিলেন। 
 
পাঠক, যখন জে, ইরভিং গ্রোভ তিনি ফিরে দেখা শমশেরনগরের স্মৃতিগুলো লিখেছিলেন তখন উপরের লাইনের ছোট মিষ্টি মেয়েও দুই ভাইয়ের বয়স প্রায় ৬০ বা ৭০ হয়েছে। লিখেছেন ইতিমধ্যে তাদের নিজের নাতি-নাতনিও থাকতে পারে।
 
 লিখেছেন, শমশেরনগরের প্রত্যেকেই বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল, এবং এটি দেখে মনে হয়েছিল যে আমরা জাপানিজদের হাত থেকে এই অঞ্চলটি রক্ষা করতে এসেছি। দুর্ভাগ্যক্রমে আমরা প্রায়শই শহরে যেতে পারতাম না, কেননা বেইসে আমাদের অনেক কাজ ছিল। ভদ্রলোক লিখেছেন ১৯৪৫ সালে বসন্ত এবং গ্রীষ্মের বেশিরভাগ সময় আমি রেডিও প্রশিক্ষণ স্কুলে রেডিও সরঞ্জাম ইনস্টল করতে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করেছি। আমি মনে করি না এটি কখনও ব্যবহৃত হয়েছিল কারণ যুদ্ধটি মোটামুটি তারপরেই শেষ হয়েছিল।
 
জে, ইরভিং গ্রোভ স্মৃতিচারণ করে লিখেছেন, যদিও আমার বেশিরভাগ সময় এয়ারপোর্ট বেইসে কাটাতে হয়েছিল। আমি একা ছিলাম তাই আমি একটি কুকুর এবং একটি বানরকে এডপ্ট করেছিলেন যারা আমাকে কয়েক ঘন্টা বিনোদন দিত। বানরটি কুকুরটির পিঠে কীভাবে চড়ে বেড়াচ্ছিল তা দেখতে সত্যিই মজা লাগত ! তবে কুকুরটি সত্যিই খুব শান্তভাবে বানরটি বহন করত। আমি মাঝে মাঝে ঘরবন্দি হয়ে অসুস্থবোধ করেছি, তবে মিশিগান থেকে আসা আমার পরিবার ও বন্ধুদের কাছ থেকে প্রাপ্ত চিঠিগুলি আমাকে সাহায্য করেছিল। বিশেষ করে ফ্লোরিডা যাওয়ার পথে ট্রেনে এক যুবতী মহিলার সাথে আমার দেখা হয়েছিল। 
 
লিখেছেন, শমশেরনগর শেষের দিকে আমাকে রেডিও কর্মশালায় একজন সহকারী নিয়োগ করা হয়েছিল। আমার একজন ভাল মুসলিম ব্যক্তির সাথে দেখা হয়েছিল যিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ছিলেন। মৌলভীবাজারের কোন এলাকা থেকে তিনি এসেছেন আমি স্বরণ করতে পারছিনা । তিনি আমার জন্য দুর্দান্ত সাহায্যকারী ছিলেন, কারণ তিনি বেশিরভাগ আমেরিকানদের চেয়ে ইংলিশ ভাল বলেতে পারতেন।
 
লিখেছেন, যুদ্ধটি ১৯৪৫ সালের সেপ্টেম্বরে শেষ হয়েছিল এবং কিছুটা সময় বার্মা ও থাইল্যান্ডে কাটিয়ে দেওয়ার পরে আমাকে সুয়েজ খাল এবং আটলান্টিক মহাসাগরের মাধ্যমে দেশে পাঠানো হয়েছিল। ১৯৪৬ সালের নবর্ষে ১ম দিবসে তিনি স্টেটসে ফিরে যান এবং এক সপ্তাহ পরে সেনা এয়ার কর্পস থেকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। বলেন আমার ভ্রমণ আমাকে পুরো পৃথিবী জুড়ে নিয়ে গিয়েছিল।
 
পাঠক, জে, ইরভিং গ্রোভ রোমান্টিকতা দিয়ে শমশেরনগর এয়ারপোর্টের স্মৃতিচারণ শেষ করেন বলেন ট্রেনে যে মহিলার সাথে আমার দেখা হয়েছিল তাকে আমি বিয়ে করি। আমাদের ছয় সন্তান, তিন ছেলে ও তিন মেয়ে। পাঠক, আমি যে বছর জন্ম গ্রহন করেছি সেই সাল ১৯৭৮ ইং অবসর না হওয়া পর্যন্ত জে, ইরভিং গ্রোভ বিভিন্ন বাণিজ্যিক রেডিও স্টেশনগুলিতে রেডিও ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। লিখেছেন,  তিনির বাচ্চাদের শমসেরনগরে তিনির সময় সম্পর্কে বলেছেন। বাড়িতে যে ছবি নিয়ে এসেছিলাম সে গুলো তারা দেখে পছন্দ করেছিল। শমশেরনগর থেকে আমি যে মুদ্রা (কয়েন) নিয়ে এসেছিলাম তা দেখে তারা মুগ্ধ হয়েছিল। তিনি লিখেছেন ইহা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অ্যাডভেঞ্চার , লিখেছেন আমার ইচ্ছে শমশেরনগর দর্শনে আরার ফিরে আসি।
 
জে, ইরভিং গ্রোভ সমশেরনগরকে বর্ণনা করেছেন সবুজ এবং মনোরম। লোকেরা এখানে ছিল খুব দয়াবান। ইচ্ছে পোষণ করেছিলেন শমশেরনগর আবার ঘুরে আসি তবে সময় ও টাকা প্রতিবন্দক হিসাবে কাজ করেছে। লিখেছেন, ভারত ও পাকিস্তান তাদের স্বাধীনতা পেয়েছিল এবং শমশেরনগরের লোকেরা কীভাবে নির্যাতিত হয়েছিল তা পড়ে জেনেছি। লিখেছেন, সেখানে উপস্থিত সমস্ত সমস্যার কথা পড়েছি। আমি মৌলভীবাজারের ইতিহাস পড়ে আশ্বস্ত বোধ করেছি। মৌলভীবাজার অঞ্চলটি বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে সহযোগিতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার কারণে অনেক সুনাম কুড়িয়েছে। লিখেছেন, তিনি যখন ছিলেন দেখেছেন প্রত্যেকে একে অপরের সাথে ভাতৃত্ববোধ। জেনে খুশী হয়েছেন যা এখনও পরিবর্তিত হয়নি। জে, ইরভিং গ্রোভ লিখেছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় আমাদের মানুষের সাহসিকতার কথাও তিনি জেনেছেন লিখেছেন ,আপনারা সবাইকে চিনতে পেরে আমি গর্বিত। আমার স্মৃতি যাঁদের স্পর্শ করেছে মৌলভীবাজার অঞ্চল থেকে যে কারও কাছ থেকে স্বীকৃতি জানাতে চাই। লিখেছেন, আমি প্রায়শই অবাক হয়ে বলি যে ,রেডিও মেরামতের দোকানে আমার সহকারী এবং আমি যে শিশুদের ছবি তুলেছি তারা  কেমন আছে ? পরিশেষে লিখেছেন আমাকে আমার গল্প বলার সুযোগ দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। 
 
পাঠক, ইতিমধ্যে আপনাদের বিরিক্তির কারণ হয়েছি। যা বলে শেষ করতে চাই ,পর্যটনের জন্য দরকার সরকারি অনুদান ও সরকার সংশ্লিষ্টদের যথাযথ সমন্বয়, উন্নত অবকাঠামো, সঠিক পরিকল্পনা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীল অবস্থা- যা বাংলাদেশে দৃশ্যমান। মৌলভীবাজার জেলার বিস্তৃত অঞ্চলে ছোট ছোট টিলা পাহাড় ও সমতলে ৯২টি চা বাগানে রয়েছে সবুজের সমাহার অপরূপ সৌন্দর্য। মনিপুরীদের অন্যতম আবাসস্থল আদমপুর ও মাধবপুর। পাহাড়-পর্বত এবং অরণ্য ভূমি নয়নাভিরাম দৃশ্যাবলী মানুষের মনকে যতটা আকৃষ্ট করে তার চেয়েও বেশী আকৃষ্ট করে মনিপুরীদের জীবন প্রণালী। সামগ্রিক বিবেচনায় এই জেলাকে প্রাতিষ্টানিক ও আনুষ্টানিক ভাবে পর্যটন নগরী ঘোষণা সময়ের দাবি।
 
নজরুল ইসলাম
ফ্রিল্যান্স জার্নালিস্ট, ওয়ার্কিং ফর ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (NHS) লন্ডন, মেম্বার, দি ন্যাশনাল অটিস্টিক সোসাইটি ইউনাইটেড কিংডম।