দ্বিতীয় ধাপের ইউপি ভোট: ৮১ জনই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান

প্রকাশিত: ৬:০৩ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১০, ২০২১
ফাইল ছবি

ধলাই ডেস্ক: দেশের দশম ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর)। এই ধাপে ৮৩৬টি ইউপিতে নির্বাচন হবে। অবশ্য এই দফার ভোটে ৮১টি ইউনিয়নেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচন হয়ে গেছে। বিজয়ী সবাই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ছিলেন।

এর আগে প্রথম ধাপে ৩৬৯ ইউপির মধ্যে ৬৯ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন হয়ে যায়। ফলে প্রথম দুই ধাপের নির্বাচনে ১৫০ জন বিনা ভোটে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হলেন। দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এই স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ বর্তমান সরকারের অধীনে সব নির্বাচন বর্জন করায় বিনা ভোটে জয়ী হওয়ার এমন পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ইসি সূত্র জানায়, দ্বিতীয় ধাপে ৬২ জেলার ৮৪৬ ইউপির মধ্যে আগামীকাল নির্বাচন হচ্ছে ৮৩৬টিতে। পাঁচটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্য (মেম্বার) পদে একক প্রার্থী থাকায় সবাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে ওই পাঁচ ইউনিয়নে কোনো নির্বাচন হবে না। এছাড়া আরও পাঁচটি ইউনিয়নের নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।

১৮ জেলার ২৮ উপজেলায় ৮১ জন চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী হওয়ায় তারা সবাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। এর মধ্যে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায় ৫ জন, ভোলার দৌলতখানে ১ জন, মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে ১ জন, নারায়ণগঞ্জ সদরে ২ জন, রূপগঞ্জে ৩ জন, শেরপুর সদরে ৩ জন, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে ৩ জন, জামালপুর সদরে ৫ জন, কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে ৩ জন, কুমিল্লার লাকসামে ৫ জন, তিতাসে ১ জন, মেঘনায় ১ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হয়েছেন।

একইভাবে চাঁদপুর সদরে ২ জন, ফেনীর ফুলগাজীতে ৩ জন, লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে ১ জন, মাদারীপুরের কালকিনিতে ১ জন, শরীয়তপুর সদরে ৩ জন, খুলনা সদরে ১ জন, মাগুরা সদরে ৩ জন, যশোরের চৌগাছায় ২ জন, বাগেরহাট সদরে ৩ জন, মোল্লাহাটে ১ জন, জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে ১ জন, সিরাজগঞ্জ সদরে ৩ জন, রায়গঞ্জে ৩ জন, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে ৫ জন, মিরসরাইয়ে ১৩ জন এবং ফটিকছড়ি উপজেলায় ৩ জন বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হয়েছেন।

এ ব্যাপারে ইসির যুগ্ম-সচিব এসএম আসাদুজ্জামান বলেন, আগামীকাল ৮৪৬ ইউপিতে নির্বাচনের কথা থাকলেও নির্বাচন হচ্ছে ৮৩৬টিতে।

তিনি বলেন, কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের সবকটিতে চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্য (মেম্বার) পদে একক প্রার্থী থাকায় সবাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে এই পাঁচ ইউনিয়নে ভোট হবে না। অন্যদিকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার জিরতলী, রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলার চিৎমরম, নেত্রকোনা সদর উপজেলার মদনপুর, টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার আটিয়া এবং শরীয়তপুর সদর উপজলার চিতলিয়া ইউনিয়নের নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এভাবে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের ব্যাপারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এভাবে বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়ার লক্ষণ ভালো নয়। এতে গণতন্ত্র ভঙ্গুর হয়। আর জনপ্রতিনিধিদেরও দায়বদ্ধতা থাকে না। একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারের ফলে জবাবদিহি কমে যায়।

কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে সব পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়াকে নজিরবিহীন বলছেন ইসির কর্মকর্তারা। সেখানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির নেতারাও ভোট করছেন না। তারা আঁতাত করে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছেন বলে ইসির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বর্তমান ইসি নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। সারাদেশে একতরফা নির্বাচন হচ্ছে। দেশে নির্বাচনের নামে তামাশা হচ্ছে। নির্বাচন শব্দটি এখন হাস্যকর হয়ে পড়েছে। কারণ এই নির্বাচন কমিশনের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই, এই নির্বাচন নিয়ে জনগণেরও কোনো আগ্রহ নেই। এ থেকে উত্তরণের জন্য অবশ্যই দলীয় খোলস থেকে নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে। সবাই যেন নির্বাচনে অংশ নেয় সেই আস্থা অর্জন করতে হবে।

সূত্র: জাগো নিউজ…