সাম্য ও ঐক্যের প্রতীক রাসলীলা

প্রকাশিত: ৬:৪৪ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৭, ২০২১

নির্মল এস পলাশ: শ্রী শ্রী কৃষ্ণের মহারাসলীলা উৎসব নৃ- তাত্ত্বিক মণিপুরী সম্প্রদায় মৌলভীবাজার জেলায় কমলগঞ্জ উপজেলায় মণিপুরীদের তীর্থদাম খ্যাত ঐতিহ্যবাহী মাধবপুর জোড়ামন্ডপে ,প্রতি বছরের ধারাবাহিকতায় এবারে ১৭৯ তম রাসলীলা উৎসব ১৯ নভেম্বর মহাসমারোহে অনুষ্ঠিত হবে।

কার্তিকের চাঁদ গলে জোৎস্না যখন মাতাল করে রাখে প্রকৃতিকে, শিশির – ঘাসে অপূর্ব মাখামাখি চলে তখন মোহন মুগ্ধতায় তখনই আসে রাসলীলা। কার্তিক মাসে অথবা তিথির বিস্তৃতি অনুসারে অগ্রাহয়ণ মাসের পবিত্র পূর্ণিমা তিথিতে বিশেষ সময়কে ধারণ করে, অর্থাৎ চন্দ্র যে দিন পূর্ণকলায় বিকশিত হবে সেই দিনই রাসলীলা। ইতিহাস জানায় রাজর্ষি ভাগ্যচন্দ্র বিখ্যাত রাসনৃত্যের প্রবর্তক। গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মের অনুসারী মণিপুরী সম্প্রদায়ের মানুষ নিজ – নিজ সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ও আভিজাত্যে মহিমান্বিত, মণিপুরীদের নৃত্যশৈলী আন্তর্জাতিক মানের এবং বিশ্বজনীন।ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ , আত্মত্যাগ দেশপ্রেমের উজ্জ্বল উদাহরণ। রাজর্ষি ভাগ্যচন্দ্র যখন মণিপুরের সিংহাসনে অসীন তখন শ্রীচৈতন্যপ্রবর্তিত গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের জোয়ারে মণিপুর তখন প্লাবিত বৈষ্ণব প্রেম ভক্তিবাদের অনুসারী মণিপুরের প্রান্তেরে – প্রান্তেরে ছড়িয়ে পড়ে মানুষকে যখন কৃষ্ণপ্রেমের দিকে আকৃষ্ট করেছেন। প্রেমভক্তিবাদের এমনি এক মহাপ্লাবনের সময়ে রাজর্ষি ভাগ্যচন্দ্র স্বপ্নদৃষ্ট হয়ে রাসলীলা আয়োজন করেন। মাধবপুরের জোড়ামন্ডপে তিনটি মন্ডপে রাসলীলা অনুষ্ঠিত হয়। এমন আয়োজন খুবই বিরল। ১৭৯ তম মহারাসলীলা মহোৎসব যা একটা জাতিগোষ্ঠীর জন্য অত্যন্ত গৌরবের। উৎসবের অনেক আগে থেকেই মণিপুরী সম্প্রদায়ের সকলের ঘরে – ঘরে উৎসবের আমেজে ছোঁয়া লেগে যায়। শত – শত রাখাল বালক ও রাসনৃত্যের বালিকা রাসলীলার অংশগ্রহণের জন্য প্রায় একমাস পূর্ব থেকেই উস্তাদের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ শুরু হয়। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে তা আজ একটি সার্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে। দেশের নানান প্রান্ত থেকে সংস্কৃতি অনুরাগী, ভক্তবৃন্দ, গবেষক, দেশী, বিদেশী পর্যটক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, গণমাধ্যম কর্মী আসেন। ভাব ও চিন্তার পারস্পরিক বিনিময়ে জোড়ামন্ডপ হয়ে ওঠে ভ্রাতৃত্ববোধের তীর্থস্থান। মৃদঙ্গের তালে – ছন্দে বিলিন হয়, বিবেদের সকল রেখা।

প্রতি বছরে এই রাসোৎসবে লক্ষ – লক্ষ মানুযের সমাগমে দিনরাত্রিব্যাপি পুরো অঞ্চল মুখরিত হয়ে ওঠে। রাসলীলার মাধ্যমে আমাদের প্রগতিশীলতা ও ধর্মনিরপেক্ষতা চেতনা বৃদ্ধি পেয়ে সম্প্রীতির অটুট বন্ধন সুদৃঢ় করেছে। মানুষে – মানুষের মহামিলনের মেলবন্ধনে আজ মণিপুরী রাসলীলা সম্প্রীতি, সাম্য – ঐক্যের প্রতীক।