কমলগঞ্জে আবারো ট্রান্সফরমার চোরদের উপদ্রব বৃদ্ধিঃ গত ১ বছরে ৭১ টি ট্রান্সফরমার চুরি

প্রকাশিত: ৫:৩১ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৪, ২০২০

স্টাফ রিপোর্টার: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির জোনাল অফিসের আওতাভূক্ত উপজেলার মাধবপুর পাঁঞ্জিবাড়ি এলাকার মেইন লাইনের খুঁটিঁ থেকে ট্রান্সফরমার চুরি করে নিয়ে যায় চোরচক্র। আর এ কারণে এক সপ্তাহের বেশী সময় অন্ধকারে কাটাতে হয়েছে এ ট্রান্সফরমার এর আওতাভূক্ত ৪ টি গ্রামের অন্তত হাজার পরিবারকে।

কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আবারো ট্রান্সফরমার চোরদের উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন কোন না কোন জায়গায় ট্রান্সফরমার চুরি করতে হানা দিচ্ছে চোরচক্র। শুক্রবার দিবাগত রাত দেড় টার দিকে মাধবপুরের ইসলামাবাদ এলাকায় ট্রান্সফরমার চুর চক্র হানা দিলে এলাকার মানুষ উঠে যাওয়ায় ব্যর্থ হয় চোরচক্র।

এ ছাড়া গত ১ বছরে প্রায় ৭১টি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি করেছে চোরচক্র। চুরির কারণে গ্রাহকরা নতুন ট্রান্সফরমার কিনতে গিয়ে ২৩ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, আর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির লোকসান হয়েছে ২১ লাখ টাকা। গ্রাহকদের ক্ষতি হলেও ট্রান্সফরমার চোর চক্রকে আইনের আওতায় আনা যাচ্ছেনা । ফলে দিন দিন ট্রান্সফরমার চুরি রোধ করা যাচ্ছে না।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির  সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অন্তর্ভুক্ত কমলগঞ্জ জোনাল অফিসের নিয়ন্ত্রণে কমলগঞ্জ, কুলাউড়া উপজেলার ২৪শত কি. মি. বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের আওতায় রয়েছে প্রায় ৩শত ৫০টি গ্রাম। আর এর গ্রাহক সংখ্যা হচ্ছে প্রায় ৯৫ হাজার উপরে। বিভিন্ন গ্রামে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালু রাখতে স্থাপিত পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির খুঁটিতে রয়েছে ৫, ১০, ১৫ ও ২৫ কেভি ধারণ সম্পন্ন ট্রান্সফরমার। এই ট্রান্সফরমারগুলো এখন আর নিরাপদে নেই। তামা জাতীয় মূল্যবান কয়েল ও এর তেলের লোভে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন এলাকায় হানা দিচ্ছে ট্রান্সফরমার চোর চক্র। চলতি বছরের নভেম্বর মাসেই শুধু চুরি হয়েছে ৭টি ট্রান্সফরমা। এভাবে প্রতিনিয়ত চোরচক্র রাতের আধাঁরে গ্রাম থেকে ট্রান্সফরমার চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে।

এক হিসাবে দেখা গেছে, ২০১৮ সালের নভেম্বর হতে ২০১৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া উপজেলার আদমপুর, কান্দিগাঁও ,চিৎলিয়া, যোদ্ধাপুর, গোপালনগর, তিলকপুর, নয়াপত্তন, ধর্মপুর,জালালপুর, রাজকান্দি, নছরতপুর, ছয়ছিড়ি, যুগিবিল, বাসুদেবপুর, সিদ্বেশরপর, পৃথিমপাশা, পুটটিবি, কাজীগাঁও হাসানপুর, পাল¬াকান্দিনর্তন, কর্মদা, তিলীশিজুড়া, হাজীপুর ও মাধবপুরসহ প্রায় ৩৫টি গ্রাম থেকে ৫ কেভি ১১টি, ১০ কেভি ৩৫টি, ১৫ কেভি ২১টি ও ২৫ কেভি ৪টি মোট ৭১টি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। ৩৫টি গ্রামের প্রায় ৭১টি ট্রান্সফরমার এর মুল্য প্রায় ৪৪ লাখ টাকা। আর গ্রাহকদের পরিশোধ করতে হয়েছে প্রায় ২২ লাখ টাকা। আর এই টাকা যোগান দিতে গ্রাহকরা পোহাতে হয়েছে ভোগান্তি। কারন ৫ কেভি ট্রান্সফরমা মুল্য ৩৮ হাজার ১৮টাকা, ১০ কেভির মূল্য ৫৯ হাজার ৭৬০ টাকা, ১৫ কেভির মুল্য ৭২ হাজার ২২৪ টাাক এবং ২৫ কেভি ট্রান্সফরমারে মুল্য ৯৯ হাজার ৫৩১ টাকা নির্ধারণ রয়েছে। গ্রাহকরা চুরি যাওয়া ট্রান্সফরমার সমিতির নিয়ম অনুযায়ী অর্ধেক মুল্য পরিশোধ করতে হয়। আর কারনেই ওই গ্রামগুলোর গ্রাহকরা চাঁদা তুলে নতুন ট্রান্সফরমা কিনতে হয়েছে। ট্রান্সফরমারর মুল্য পরিশোধ করতে গিয়ে কোন কোন গ্রামের গ্রাহকরা গরু, ছাগল বা সুদে বা অন্য কিছু বিক্রি করে টাকা যোগার করেছেন।

পল্লীবিদ্যুত সমিতির পক্ষ হতে চুরি রোধে গ্রাহকদের সচেতনতামুলক লিফলেট ও মাইকিং করার পাশাপাশি খুঁটিতে লোহার শিকল, নাট ওয়েল্ডিং দিয়ে ট্রান্সফরমার মোড়ানোর জন্য উদ্ধুদ্ধ করলেও কোন কাজ হচ্ছে না। চোরচক্র রড কেটে ট্রান্সফরমার চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। এতে করে নিয়মিত ট্রান্সফরমার চুরিরর ঘটনা বাড়ছে। পল্লীবিদ্যুৎ এর কমলগঞ্জ জোনাল অফিস হতে ট্রান্সফরমার চুরি হলে থানায় মামলা দিয়ে তাদের দায়িত্ব শেষ করে। তাদের অভিযোগ পুলিশ ট্রান্সফরমার চোরদেরকে আটক করতে না পারায় চুরি বাড়ছে।

কমলগঞ্জ জোনাল অফিসের জুনিয়র ইঞ্চিনিয়ার রফিকুল ইসলাম বলেন, ইদানিং কালে ট্রান্সফরমার চুরি বেড়ে গেছে। এতে করে সমিতি ও গ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চোররা যাতে চুরি করতে না পারে সেজন্য সমিতির পক্ষে থেকে সচেতনতামূলক লিফলেট বিলি, লোহার শিকল, নাট ওয়েল্ডিং করে ট্রান্সফরমার রক্ষার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

কমলগঞ্জ থানার ওসি আরিফুর রহমান বলেন, বিগত সময় ট্রান্সফরমার চুরির সাথে জড়িতদের আটক করা হয়েছে। বর্তমানে চুরির বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে।