আশরাফ সিদ্দিকী পারভেজ: মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় সপ্তাহের ব্যবধানের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজারের এমন অস্থিতিশীলতায় নিম্ন আয়ের মানুষের পাশাপাশি মধ্যবিত্তদের নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে। এক সময় নিম্নবিত্তের সবজিও এখন “বিলাসী পণ্যে” তালিকায় উঠে এসেছে। শত টাকার নিচে সবজি কেনা যায়না। তাই নিম্ন আয়ের মানুষরা পরিবার নিয়ে সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছেন। উপজেলার বাজার সমুহে ধণিয়া পাতার কেজি ৬০০ ও কাঁচামরিচের কেজি ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
সোমবার উপজেলার বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, নিত্যপণ্য সবজির আগের চেয়ে দাম ২ থেকে ৩ গুণ বেড়ে গেছে। বর্তমানে বাজারে ধনিয়া পাতার কেজি ৬০০ টাকা ও কাঁচা মরিচের কেজি ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে কাঁচামরিচ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা ও ধনিয়াপাতা ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হয়েছিল।
এছাড়া কাঁচা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি পণ্যেরই প্রকার ভেদে ৩০ থেকে ৪০ টাকা দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি কেজি বেগুন ১২০ টাকা, করলা ১২০ টাকা, শসা ৯০ টাকা, আলু ৭০ টাকা, ঢেড়শ ১২০ টাকা, বরবটি ১১০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা, পটল ১০০ টাকা, লাউ ৮০ থেকে ৯০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া প্রকার ভেদে ৮০ থেকে ১৮০ টাকা, চাল কুমড়া ৮০/৯০ টাকা, কাঁচা কলা ৬০/৭০টাকা, টমেটো ২০০/২২০টাকা, চিচিংগা ৯০ টাকা, পুঁইশাখ ৬০ টাকা, লাল শাখ ৬০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ টাকা, মুখি ৭০ টাকা, বাঁধা কপি ১২০ টাকা ও পিয়াজ ১১০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ভানুগাছ কাঁচা বাজারে বাজার করতে আসা ক্রেতা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘চোঁখে অন্ধকার দেখছি। সামান্য আয় দিয়ে কিভাবে সংসার চালাবো তা বুঝতে পারছিনা। সবজি কিনবো সেই অবস্থাও আর নেই। বাজারে আসার কথা শুনলেই ঘা শিউরে উঠে। আগে যেটুকু ক্রয় করতাম এখন সেটা অর্ধেকে নামিয়ে এনেছি। তবু ও মাসে দার-দেনা করতে হয়।’
স্থানীয় রিক্সা চালক চনু মিয়া বলেন, ‘গত সপ্তাহে যে জিনিস কিনেছি ৫০/৬০ টাকায় ,এখন একই জিনিস কিনতে হচ্ছে ১০০/১২০ টাকায়। সেই তুলনায় আমাদের আয় বাড়েনি। আগে মাসে যা আয়-রোজগার করতাম তা দিয়ে সংসারে নিত্য দিনের চাহিদা মিটিয়ে ভবিষ্যতের জন্য কিছু সঞ্চয় করতে পারতাম। এখন তা আর সম্ভব নয়।
কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ী শামীম ও কৃষ্ণ বলেন বলেন, ‘এখন বাজারে সবজির দাম বাড়ার কারনে আগের মতো বিক্রি হচ্ছেনা। কারন ক্রেতারা আগে যে সবজি কেজি/২ কেজি নিতেন এখন তার অর্ধেক কিনছেন। তারা অভিযোগ করে বলেন, এখন সিন্ডিকেটের কারণে সব কিছুর দাম বাড়িয়ে ফেলা হয়েছে। আমরাও দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। যদি সেন্ডকেট ভাঙ্গা যায় তবে ক্রেতারা সস্তিবোধ করবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমলগঞ্জ উপজেলার ভানুগাছ বাজারের কাচাঁ মালের একাধিক আড়ৎদার বলেন, ‘জিনিসের দাম বাড়ানো আমাদের কোন হাত নেই। আমরা দামে কিনে আনি তার সাথে পরিবহনের খরচ যোগ করে জিনিসের দাম নির্ধারণ করি। এরপর সীমিত টাকা মুনাফা করে আমরা পাইকারী বাজারে বিক্রি করি। তারা আরো বলেন, বাজারের নিত্য পণ্যের সরবরাহ এখন কম, তাই দাম একটু বেশী মনে হচ্ছে। আমরা কম দামে কিনতে পারলে,আমরা ও কম দামে বিক্রি করবো।’
ভানুগাছ বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সহ সভাপতি মামুনুর রশিদ বলেন, ‘বাজারে জাতে অধিক মূল্যে কেউ জিনিসপত্র যেন বিক্রি করতে না পারে সেজন্য আমাদের নিয়মিত মনিটরিং আছে।’
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত বাজার পর্যবেক্ষন করা হচ্ছে। কেউ অতিরিক্ত দামে বিক্রি করতে চাইলেই তাকে জরিমানা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সিন্ডিকেটের বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।