কমলগঞ্জে পলো বাওয়া উৎসব

প্রকাশিত: ৭:০৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২০, ২০১৯
ছবি ধলাইর ডাক

স্টাফ রিপোর্টার: হারিয়ে যাচ্ছে একের পর এক বাঙালীর গ্রামীন উৎসব-ঐতিহ্য। এরপরও একটি প্রবাদ আছে “নদী হাওর আর ধান এই তিনে মৌলভীবাজারের প্রাণ”। আর সেই মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার একটি নদীকে কেন্দ্র করে শত বছরেরও বেশি সময় ধরে পালিত হয়ে আসছে গ্রাম বাংলায় প্রায় হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী মাছ ধরা উৎসব।

আর এই মাছ ধরা উৎসব জানিয়ে দিচ্ছে মাছে-ভাতে বাঙালির দেশে মাছেরা হারিয়ে যায়নি। হারায়নি এক সময়ের বহুল প্রচলিত মাছ ধরার উৎসবও। পুরোদমে শুষ্ক মৌসুম শুরু না হলে ও কমলগঞ্জ উপজেলার বুক দিয়ে প্রবাহিত ধলাই নদী সহ বিভিন্ন এলাকার প্রবাহমান ছোট ছোট ছড়া বিলসহ বিভিন্ন জলাশয়ে শুরু হয়েছে পলো বাওয়া উৎসব। প্রতিবছর এই সময়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সৌখিন মৎস্য শিকারীরা দল বেঁধে উৎসব মুখর পরিবেশে পলো বাওয়ায় অংগ্রহণ করে। পলো বাওয়া উৎসব হলো দল বেঁধে (বাঁশ দিয়ে বিশেষ ভাবে তৈরী ঝাঁপি) মাছ ধরা। মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জের ধলাই নদীতে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী পলো দিয়ে মাছ ধরার উৎসব উদযাপিত হয়েছে। বুধবার (২০ নভেম্বর) দুপুর আড়াইটায় ধলাই নদীতে এই মৎস আহরণ শুরু হয়। এতে প্রায় ৩ শতাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন। উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের শুকুর উল্লাহ ও ঘোড়ামারা ধলাই নদীতে পলো বাওয়াতে কমলগঞ্জ উপজেলার চৈত্রঘাট,মুন্সিবার,আলেপুর বাদে উবাহাটা, ঠাকুরের বাজার,আদমপুর ও ছয়ছিড়ির প্রায় শতাধিক সৌখিন জেলেরা অংশ নেয় কমলগঞ্জের ফসলি মাঠগুলো এখনো হয়ে উঠেনি আবাদের উপযোগী। ফলে এ অঞ্চলের কৃষকের হাতে নেই তেমন কোন কাজ। এ অবসরে অল্প পানিতে মাছ শিকারের উৎসবে মেতে উঠেছে সবাই। ধলাই নদীর স্বল্প পানিতে এখন বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে দল বেঁধে মাছ ধরার দৃশ্য চোখে পড়ার মতো। বিশেষকরে পলো,উড়াল জাল,পেলেন জাল এসব দিয়েই মাছ শিকার করছেন মানুষরা। দলবদ্ধভাবে মাছ শিকারের এদৃশ্য দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন উৎসোক জনতারা। উৎসবে অংশ নেয়া মানুষদের উৎসাহ দিতে হাতে তালি কিংবা জোড়ে জোড়ে চিৎকার করে উৎসাহ প্রদান করছেন দশনার্থীরা। বড়দের পাশাপাশি ছোট ছোট ছেলে মেয়েরাও যে যার মতো করে মাছ ধরতে সহযোগীতা করছে। মাথা ও কোমরে আটসাট করে গামছা বেঁধে অনেকটা আনন্দ নিয়েই মাছ ধরছেন সবাই। শখের বসে মাছ ধরার উপকরণ নিয়ে নেমেছেন মাছ ধরতে।

সকাল থেকে শুরু হয়ে বিকাল পর্যন্ত চলবে তাদের এই মাছ ধরা। দল বেঁধে সারিবদ্ধ হয়ে পলো দিয়ে পুটি,টেংড়া,শৈল,গাঘট ও বোয়াল মাছ ধরছেন। পলো দিয়ে মাছ ধরার দৃশ্য সবারই মন কাড়ে। নদীর স্বল্প পানিতে ৩০/৪০জনের একটি দল একদিকে জাল নিয়ে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। আর অপরপ্রান্ত থেকে ৪০/৫০জনের সারিবদ্ধ দল পলো চাপিয়ে মাছ ধরতে সামনের দিকে এগিয়ে আসেন। । চৈত্রঘাট থেকে আসা মুস্তাক আহমেদ, আলেপুর থেকে আসা বশির আহমেদ ও মুজিবুর রহমান তারেক, সৌখিনতার বশে নদীতে পলো বাওয়াতে অংশ নিয়েছি, রহমান নামের একজন জেলে আড়াই কেজি ওজনের একটি আইড় মাছ ধরেছে বলে জানা যায়, আলেপুর গ্রাম থেকে আসা নূর মিয়া বলেন, বছরের এই দিনটার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করি। সবাই মিলে একসাথে মাছ ধরার আনন্দটাই আলাদা। এক কেজি ওজনের একটি গাঘট মাছ পেয়ে আরো বেশি আনন্দ লাগছে। এ ব্যাপারে আলাপকালে

কমলগঞ্জের প্রবীন মাছ শিকারী মোঃ ইসমাইল মিয়া জানান, দিন দিনই পরিবেশ ও আবহাওয়ার প্রতিকূলতার কারনে নদী-নালা , খাল-বিল ,হাওরের তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ার কারনে পানি হ্রাস এবং অধিকাংশ জলাশয় ইজারা দেওয়ায় বাওয়া উৎসব এখন অনেকটাই ভাটা পড়েছে। আভাব অনটন ক্রমশঃ গ্রাস করে ফেলছে চিরাচরিত এই গ্রামীণ উৎসবের অতীত ঐতিহ্যকে। তার মতে প্রাচীন এই উৎসবকে টিকিয়ে রাখতে সর্বমহলের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।