কমলগঞ্জে সার-কীটনাশক হীন ১১ জাতের বিদেশি ধান চাষাবাদে বাজিমাত কৃষক মোহন রবিদাস

প্রকাশিত: ৮:৪৮ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২, ২০২৪

কমলগঞ্জ প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ১১ জাতের বিদেশি ধান চাষাবাদে বাজিমাত করেছে মোহন রবিদাস। এই প্রথম এমন আবাদ করে বাজিমাত করেছেন এই কৃষক। দেশে প্রচলিত যে কোনো হাইব্রিড জাতের ধানের তুলনায় ব্ল্যাক রাইস,পার্পেল রাইস, সুগন্ধি বাসমতি, সুগন্ধি কস্তুরি, রড (পাকিস্তানি), তুলসী মালা,বাংলাদেশের ব্রি-ধান-১০৩ সহ ১১ জাতের ধানের চাষ করে ভালো ফলন হবে বলে জানান কৃষক মোহন রবিদাস। এই জাতের ধান দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। সেইসঙ্গে এ জাতের ধান আবাদ করে অধিক লাভের আশা করছেন কৃষক। উপজেলার শমশেরনগর ইউনিয়নের গল্ফ মাঠের পাশে পতিত ৩০০ শতক জায়গায় এই ১১ জাতের ধান চাষাবাদ করেছেন মোহন রবিদাস। মোহন রবিদাস একজন চা শ্রমিক সন্তান।

উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, ‘বিভিন্ন ধরনের ১১ জাতের ধান রোপন করেছেন মোহন রবিদাস। এসব ফলনে কৃষকরা ভালো লাভবান হবেন। এই জাতের ধানের আবাদগুলো ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশে ধানের উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে এই ধান অবদান রাখবে।

স্থানীয় কৃষকরা বলেন, ‘আমরা এর আগে ব্ল্যাক রাইস,পার্পেল রাইস, সুগন্ধি বাসমতি, সুগন্ধি কস্তুরি, রড (পাকিস্তানি), তুলসীমালা, বাংলাদেশের ব্রি-ধান-১০৩ সহ ১১ জাতের চাষ করিনি। নতুন এই ধান শুধু আমাদের এলাকায় নিয়ে এসেছেন কৃষক মোহন। ধান কাটার পর কৃষকের কাছ থেকে বীজগুলো সংগ্রহ করবো। সার-কীটনাশকহীন ১১ জাতের ধান চাষাবাদে বাজিমাত করে যেমন মোহন লাভবান হয়েছেন। ঠিক আমরাও এই আশায় আছি।

কমলগঞ্জ উপজেলার শমসেরনগর গ্রামের কৃষক অমলিক রবিদাস বলেন, ‘নতুন জাতের ব্রি-ধান-১০৩ হাইব্রিড। আবার লম্বা ও চিকন। নতুন এ জাতের ধান ফলনও বেশি দিয়েছে। বাজারে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। তাই আগামী বছর এ জাতের ধান আবাদ করব।’

কৃষক মোহন রবিদাস জানান,‘আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাংলাদেশ ও দেশের বাহিরে ভারত থেকে সব মিলিয়ে ১৩ জাতের ধানের বীজ সংগ্রহ করি। বীজগুলো হলো- ব্ল্যাক রাইস,পার্পেল রাইস, সুগন্ধি বাসমতি, সুগন্ধি কস্তুরি, রড (পাকিস্তানি), তুলসীমালা, ব্রি-ধান-১০৩ সহ বিভিন্ন জাতের বীজগুলো সংগ্রহ করে চাষ করেছি। এসব চাষের ফলাফল আশানুরূপ ফলন ভালো হয়েছে। সার-কীটনাশক একদম একদম দেওয়া হয়নি। আমাদের এলাকায় যে উচু জমি এই ধানগুলো এসব জমিতে চাষ করার মতো খুবই উপযোগী। আমি এই ধান চাষ করে সফলতা পেয়েছি। আমি কৃষক অন্যান্য ভাইদের বলবো তারা যেন আমার কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে চাষাবাদ করলে ভালো লাভবান হবেন।

তিনি আরও বলেন, কৃষকদের সুবিধার জন্য আমি বাড়ির পাশে একটা দোকান দিয়ে বীজগুলো সংগ্রহ করে বিক্রি করবো। কৃষকরা যেন সেই বীজগুলো সংগ্রহ করে আবাদ যেন করতে পারেন।

কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জয়েন্ত কুমার রায় বলেন, ‘মোহন রবিদাস নিজেকে একজন আদর্শ কৃষক পাশাপাশি একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আবিরবৃত করেছেন। এই উপজেলার শমশেরনগর চা বাগানে প্রতিকুল পরিবেশে এই ধান চাষ করায় তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তিনি প্রায় ১১ জাতের ধানের সম্মেলন ঘটিয়েছেন। অনেকে হয়তো এমন চাষ কখনো দেখেনি। এই জাতের ধানগুলো এই উপজেলার জন্য খুবই বিরল। এখানে অনেক গবেষনার সুযোগ রয়েছে। এখান থেকে বিভিন্ন জার্ম কালেকশন করে যারা ধান গবেষনার বিজ্ঞানী রয়েছেন তাদের সুযোগ রয়েছে এই জাতের ধানগুলো সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে বাংলাদেশে ভবিষ্যতে পুষ্টি জাত তৈরী করা যায়। এই জিনিসটা উনারা নজর দিতে পারবেন। এসব ধান এখানে চাষ করায় কৃষকরা খুবই উৎসাহীত হয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, এই জাতের ধানের আবাদ ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশে ধানের উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পাবে। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে এই ধান অবদান রাখবে।