ধলাই ডেস্ক: ইউপি সদস্য কর্তৃক ধর্ষণের বিচার না পেয়ে আত্মহত্যা করেছেন এক বিধবা নারী। ঘটনাটি এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করলে ৯৯৯ নম্বরে কল করে এলাকাবাসী অভিযোগ করলে শনিবার বিকেলে ওই বিধবার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছ চাঁপানী ইউনিয়নের তিস্তা নদীর পূর্ব ছাতুনামা চরগ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে ধর্ষক ওই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও পূর্ব ছাতুনামা গ্রামের মৃত আব্দুল আমিনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৪৮)। এ ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগে জানা যায়, ওই গ্রামের আব্দুল জলিল দেড় বছর আগে অসুখে ভুগে মারা যান। তার বিধবা স্ত্রী পাঁচ কন্যাসন্তানের জননী জাহানারা বেগম (৪৫) ওই চর গ্রামে বসবাস করতেন। পাঁচ মেয়ের বিয়ে হওয়ায় বাড়িতে একাই থাকতেন তিনি। ওই বিধবার দুটি ছোট বোন চর গ্রামের অর্ধ কিলোমিটার অদূরে স্বামীর বাড়ি থাকেন।
দুই বোন নাসিমা ও নাজমাসহ এলাকাবাসী অভিযোগ করে জানায়, ১৬ অক্টোবর রাতে ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম বিধবা ভাতার কার্ড করে দেবার নামে ওই বিধবার বাড়িতে যায়। এক পর্যায়ে ইউপি সদস্য ওই বিধবাকে জোড়পূর্বক ধর্ষণ করলে তার চিৎকারে লোকজন ছুটে এসে ইউপি সদস্যকে হাতে নাতে ধরে ফেলে। এরপর ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলামের পক্ষ নিয়ে কিছু প্রভাবশালী তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ওই বিধবা ঘটনার পর দিন মামলা করার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে থানায় যেতে চাইলে পথে প্রভাবশালীরা তাকে বাধা দিয়ে ফিরিয়ে দেয়। পাশাপাশি মামলা না করার জন্য হুমকি দিতে থাকে। শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে চর গ্রামের লোকজন ওই বিধবার খবর নিতে গেলে দেখতে পায় তার মৃতদেহ ঘরে ঝুলছে। ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে প্রভাবশালীরা পুলিশকে খবর না দেয়ার জন্য হুমকি দিতে থাকে।
পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ওই বিধবার দুই ছোট বোন এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ৯৯৯ নম্বরে কল করে বিস্তারিত জানায়। এরপর সেখানে ডিমলা থানা পুলিশ ছুটে এলে প্রভাবশালীরাসহ ধর্ষক ইউপি সদস্য পালিয়ে যায়। এলাকাবাসীর অভিযোগ ওই বিধবা ধর্ষণের মামলা করতে ব্যর্থ হওয়ায় আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে।
ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বলেন, স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেছেন ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলামের ধর্ষণের বিচার না পেয়ে বিধবা জাহানারা বেগম আত্মহত্যা করেছেন।
একাধিকবার চেষ্টা করেও ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলামের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তাকে পাওয়া যায়নি। ওই ইউপি সদস্যের স্ত্রী পারভিন আক্তার বলেন, সকালে তার স্বামী (সাইফুল ইসলাম) বাড়ি থেকে বের হয়েছে তারপর আর ফিরেনি। তবে জাহানারা বেগম নামে বিধবার মৃত্যুর সঙ্গে তার স্বামী জড়িত নয় বলে দাবি করেন তিনি।
ডিমলা থানা পুলিশের ওসি মফিজ উদ্দিন শেখ জানান, ঘটনাটি মর্মান্তিক। আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় ওই বিধবা নারীর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য উদ্ধার করে নিয়ে এসেছি।