ক্যারিবীয়দের হোয়াইটওয়াশ করে ‘ফুল মার্কস’ পেল টাইগাররা

প্রকাশিত: ৮:৩০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৫, ২০২১
সংগৃহীত

খেলা ডেস্ক: সবমিলিয়ে ২৬তম কিংবা ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে পঞ্চম সিরিজ জয়টা ঢাকায়ই নিশ্চিত করে এসেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শেষ ম্যাচটিতে লক্ষ্য ছিল হোয়াইটওয়াশের। সেইসঙ্গে ওয়ানডে সুপার লিগে নিজেদের প্রথম সিরিজে পূর্ণ ত্রিশ পয়েন্টও নিশ্চিত করার।

সেই লক্ষ্যে নেমে ‘ফুল মার্কস’ নিয়েই পাস করেছে তামিম ইকবালের দল। শুধু সিরিজ জয়ই নয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দ্বিতীয় এবং সবমিলিয়ে প্রতিপক্ষকে ১৪তম বারের মতো হোয়াইটওয়াশ করার কীর্তি দেখিয়েছে বাংলাদেশ।

ম্যাচটিতে আগে ব্যাট করে চার ফিফটিতে বাংলাদেশ দাঁড় করিয়েছিল ২৯৭ রানের বড় সংগ্রহ। যার জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অলআউট হয়েছে ১৭৭ রানে। আগের দুই ম্যাচে ১২২ ও ১৪৮ রানে অলআউট হওয়া ক্যারিবীয়রা এ ম্যাচে প্রথমবারের মতো পেরিয়েছে দেড়শ রানের কোটা, যা স্রেফ পরাজয়ের ব্যবধানই কমাতে পেরেছে।

রান তাড়া করতে নেমে ফের ছন্নছাড়া ব্যাটিং প্রদর্শনী দেখিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নিজের প্রথম স্পেলে দুই উইকেট তুলে নিয়ে শুরুর ধাক্কাটা দেন মোস্তাফিজুর রহমান। পরে কিপটে বোলিংয়ে লাগামটা নিজেদের হাতেই রাখেন টাইগার অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। খানিক খরুচে বোলিং করলেও দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট শিকার করেছেন এ ম্যাচ দিয়েই দলে ফেরা মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে পুরো সিরিজে ধারাবাহিক খেলা রভম্যান পাওয়েল রান পেয়েছেন আজও। সৌম্য সরকারের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ার আগে ৪৯ বলে ৪৭ রান করেন রভম্যান। এনক্রুমাহ বোনারের ব্যাট থেকে এসেছে ৩১ রান। এর বাইরে রেয়মর রেইফার (২৭), জেসন মোহাম্মদরা (১৭) ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিয়েও অল্পেই থেমে গেছেন।

এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে প্রথম পাওয়ার প্লে’টা ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছে টাইগাররা। প্রথম ১০ ওভারে ২ উইকেট হারালেও, স্কোরবোর্ড যোগ হয় ৫৩ রান। তবে এরপর কমতে থাকে রানের গতি। পরের ২০ ওভারে আসে মাত্র ৮৪ রান।

আগের দুই ম্যাচের মতোই হতাশ করেন দুই তরুণ লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্ত। ইনিংসের প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফিরে যান লিটন। দ্বিতীয় উইকেটে অধিনায়ক তামিম ইকবালের সঙ্গে ৩৭ রান যোগ করে কাইল মায়ারসের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে ধরা পড়েন ৩০ বলে ২০ রান করা শান্ত।

দুই তরুণ ব্যর্থ হলেও, পরে চার অভিজ্ঞই তুলে নিয়েছেন নিজেদের ব্যক্তিগত ফিফটি। ইনিংসের শুরুতে বেশ সাবলীল ছিলেন তামিম। একপর্যায়ে তিনি মাত্র ২৭ বলে করেন ২৮ রান। এরপর যেন বন্দী হয়ে যান খোলসে। পঞ্চাশে যেতে খেলে ফেলেন ৭০টি বল। যেখানে ছিল মাত্র ২টি চারের মার। তবে ফিফটি পূরণের ঠিক পরের বলেই নিজের ট্রেডমার্ক ইনসাইড আউট শটে হাঁকান ইনিংসের প্রথম ছক্কা। যদিও ইনিংসটি বেশি বড় করতে পারেননি টাইগার অধিনায়ক।

তৃতীয় উইকেটে তামিম ও সাকিব মিলে যোগ করেন ৯৩ রান। কিন্তু এতে খেলে ফেলেন ১১৬টি বল। দুজনের কেউই ইনিংসের মাঝপথে সাবলীল ব্যাটিং করতে পারেননি। সিঙ্গেলস-ডাবলস বের করতে রীতিমতো লড়াই করতে হয়েছে দুজনকেই। জুটি বেঁধে ২ হাজার রানের মাইলফলক পূরণ করেছেন সাকিব ও তামিম। তাদের জুটি ভাঙে দলীয় ১৩১ রানে গিয়ে, তামিম ব্যক্তিগত ৬৪ রানে সাজঘরে ফিরে গেলে। ক্যারিয়ারের ৪৯তম ফিফটিতে খেলা ৮০ বলের ইনিংসে ৩ চারের সঙ্গে ১ ছক্কা হাঁকান তিনি।

তামিম ফিরে যাওয়ার পর ৪৮তম ওয়ানডে ফিফটি তুলে নেন সাকিব। তিনি ৩ চারের মারে ফিফটি পূরণ করতে খেলেন ৭৮ বল। তামিমের সমান ৮০ বল খেলে সাকিব আউট হন ৫১ রান করে। সাকিবের বিদায়ের পর রানের গতি বাড়ানোর মিশনে নামেন ব্যক্তিগত সম্পর্কে ‘ভায়রা ভাই’ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহীম। যা বেশ সফলভাবেই করেন এ দুজন। তাদের জুটিতে আসে ৭২ রান, মাত্র ৫৮ বলে।

মূলত মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর জুটিতেই আসে ২৮৭ রানের বড় সংগ্রহ। সাকিব-তামিম যেখানে করেন ধীরগতির ফিফটি, সেখানে বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তুলেছেন মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিক। ক্যারিয়ারের ৩৯তম ফিফটি করতে মুশফিক খেলেন ৪৭ বল। মাহমুদউল্লাহর ১৭তম ফিফটি আসে মাত্র ৪০ বলে। দারুণ এক ছয়ের মারে পঞ্চাশ পূরণ করেন মাহমুদউল্লাহ। তাদের ব্যাটেই মূলত শেষ ১০ ওভারে ১০০ রান পায় বাংলাদেশ।

পুরো ৫০ ওভার শেষ করে আসতে পারেননি মুশফিক। তিনি সাজঘরে ফেরেন ৪৭তম ওভারে, খেলেন ৫৫ বলে ৬৪ রানের ইনিংস। যেখানে ছিল ৪ চারের সঙ্গে ২টি ছয়ের মার। তবে শেষপর্যন্ত খেলেছেন মাহমুদউল্লাহ। ৪৪ বলের ইনিংসে সমান ৩টি করে চার-ছয়ের মারে ৬৪ রান করেন মাহমুদউল্লাহ। এছাড়া সৌম্য সরকার ৮ বলে ৭ ও সাইফউদ্দিন ২ বলে ৫ রান করেন।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে ২টি করে উইকেট নেন রেয়মন রেইফার ও আলঝারি জোসেফ।

সূত্র: জাগো নিউজ…