ডেস্ক রিপোর্ট: সুন্নতে খতনা করার সময় রিসকাত হোসেন নামে এক মাস ২৫ দিন বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। প্রস্রাবের সমস্যায় খতনা দেয়ার সময় এ ঘটনা ঘটেছে। শিশুটি মারা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার লাশ মায়ের কোলে দিয়ে পালিয়ে যান ডা. মো. ইকবাল হোসেন (ডিএমএফ) ও তার সহযোগী বাজারের ওষুধের দোকানদার জয়ন্ত।
এ সময় মায়ের আহাজারি শুনে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভিড় করেন আশপাশের লোকজন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শিশুটির লাশ ও ব্যবহৃত ওষুধের বোতল উদ্ধার করে। এলাকাবাসী ডাক্তার ও তার সহযোগীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করে কয়েক ঘণ্টা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ঘেরাও করে রাখে। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ মা রুবি খাতুন বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন।
শনিবার বিকেলে ঈশ্বরদীর সাঁড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটেছে। শিশুটি লালপুর থানার পাটকেবাড়ি (পশ্চিমপাড়ার) সজিব হোসেনের ছেলে।
শিশুটির ফুপু তাসলিমা খাতুন জানান, গত ৫ দিন আগে শিশুটিকে নিয়ে তারা ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসেন। তখন ডাক্তার ইকবাল বলেন, প্রস্রাবে ইনফেকশন হয়েছে, খতনা দিতে হবে। টাকা না থাকায় তারা ফিরে যান। শনিবার সকালে ডাক্তার ইকবাল শিশুটিকে খতনা দিতে হবে বলে মোবাইল ফোনে তার ভাইয়ের স্ত্রী রুবিকে ডেকে আনেন। ১৫শ টাকার চুক্তিতে দুপুর দুইটার দিকে শিশুটিকে কয়েকটি ইনজেকশন দিয়ে খতনা দেন। এ সময় শিশু রিসকাত মারা যায়।
তিনি আরও জানান, ডাক্তার শিশুটি মারা গেছে বুঝতে পেরে তার মায়ের কোলে দিয়ে সহযোগী জয়ন্তকে নিয়ে পালিয়ে যান। তিনি এ ঘটনাটিকে হত্যা হিসেবে দাবি করে ডাক্তার ইকবাল ও জয়ন্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
এলাকাবাসীর মধ্যে খুশি বেগম, স্থানীয় বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী মোকাদ্দেস হোসেন জানান, ডাক্তার ইকবাল স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসা সকল ওষুধ তার সহযোগী বাজারের ওষুধ বিক্রেতা জয়ন্তের মাধ্যমে বিক্রয় করেন। এলাকার মানুষ স্বাস্থ্য সেবা নিতে আসলে চরম দুর্ব্যবহার করেন। তারা আরও জানান, ভুল চিকিৎসা দিয়ে শিশুটিকে হত্যা করে পালিয়েছে। তার শাস্তি হওয়া দরকার।
কথা বলতে পারছিলেন না মা রুবি খাতুন। বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তিনি। শুধু নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলছিলেন। তবে তিনি সন্তানের হত্যাকারীর ফাঁসি দাবি করেন।
ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার আব্দুল বাতেন জানান, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শিশুর মৃত্যুর ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সুন্নতে খতনা দেয়ার কোনো যন্ত্রপাতি ও অনুমতি নেই।
তিনি আরও জানান, ইকবাল হোসেন একজন মেডিকেল সহকারী।
ঈশ্বরদী থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) অরবিন্দ সরকার জানান, ঘটনাস্থল থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। মৃত শিশুটির পরিবার থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। ডাক্তার ইকবাল হোসেন ও তার সহযোগী জয়ন্ত পলাতক রয়েছেন।