ঘন ঘন লোডশেডিং, বিপর্যস্ত জনজীবন

প্রকাশিত: ৭:১৬ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৪

ধলাই ডেস্ক: প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে বাইরে গিয়ে কাজকর্ম দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে গরমে ঘরে বসে থাকাও যাচ্ছে না। গত এক সপ্তাহের উপড়ে তাপদাহ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিংও। দিনরাত মিলিয়ে নিয়ম করেই যেন ৯-১০ ঘণ্টা চলে লোডশেডিং। বিদ্যুতের এ চরম লোডশেডিংয়ের বিষয়ে বিদ্যুতের উৎপাদন কম ও চাহিদা বৃদ্ধিকেই দায়ী করছে বিদ্যুৎ বিভাগ। তবে কিছুদিন পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এছাড়াও এ জেলায় রয়েছে সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে ৯২ টি চা বাগান। বিদ্যুতের সমস্যার কারণে প্রতিটিা বাগানে চা উৎপাদনের বিরাট সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।

মৌলভীবাজার জেলাসহ পুরো সিলেট বিভাগে প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। জেলার অন্য উপজেলার মতো কমলগঞ্জে প্রচণ্ড গরমে যখন মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা, ঠিক তখনই মরার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে বাড়ছে বিদ্যুতের অসহনীয় লোডশেডিং। প্রতিদিনই ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের ফলে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ গ্রাহকরা। দিন-রাত মিলিয়ে ৯-১০ ঘন্টা বিদ্যুৎ না থাকায় জনজীবন বিপর্যস্ত হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন খাতে স্বাভাবিক কাজকর্মে চরম ভাটা পড়েছে।

সরেজমিন জানা গেছে, সপ্তাহখানেকের অধিক সময় ধরে এই উপজেলায় বিদ্যুতের লোডশেডিং তীব্র আকার ধারণ করেছ। দিনে ও রাতে পাল্লা দিয়ে চলছে লোডশেডিং।এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন সাধারণ মানুষ। অব্যাহত লোডশেডিংয়ের কারণে চা উৎপাদন,কারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, হাসপাতাল,প্রাইভেট ক্লিনিকি, ব্যাংকিং খাতের সেবা, সাধারণ ব্যবসায়ী,চা বাগান পোল্ট্রি ও মৎস্য খামারি ছাড়াও শিশু ও বয়স্করা পড়েছেন চরম বিপাকে।
গভীর রাতে গ্রামসহ শহরে একবার বিদ্যুৎ গেলে আসছে ঘণ্টাখানেক পরে। বিদ্যুৎহীন থাকার কারণে শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা পড়েছে বিপাকে। বিশেষ করে বিপাকে পড়েছে গ্রামের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। অসহনীয় গরম এবং তীব্র লোডশেডিংয়ে শরীর ঘেমে যাচ্ছে। অতিরিক্ত ঘামে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

শুধু তাই নয়, তীব্র লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যবসায়ীদের ফটোস্ট্যাট মেশিন, বাসাবাড়ির টিভি-ফ্রিজ, কম্পিউটার থেকে শুরু করে বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল বিভিন্ন জিনিসপত্র নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ব্যাহত হচ্ছে ইন্টারনেট সেবা। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন খামার মালিকরা। নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে ওঠা বিদ্যুতের এমন লুকোচুরি খেলায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।

কমলগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সুত্রে জানা যায়, কমলগঞ্জ ৮২ হাজার গ্রাহকের বিদ্যুতের চাহিদা ১৯ মেগাওয়াট। তারা পাচ্ছেন ১৩ মেগাওয়াট। যা তুলনার চেয়ে ৬গুন কম। বিদ্যুতের এই ঘাটতি থাকার কারণেই বিদ্যুতের লোডশেডিং বেড়েছে বলে দাবি করেন বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্টদের।

বিদ্যুৎ গ্রাহক আব্দুর রাজ্জাক রাজা জানান, দিনে-রাতে মিলিয়ে ৯-১০ বার বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। থাকছে না ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আমার ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া করছে। রাতে গরমের কারণে তারা পড়াশোনা ও ঘুমাতে পারছে না। আবার স্কুলেও ঠিকমতো বিদ্যুৎ থাকে না। গরমে শরীরে ঘাম বসে কাশি হয়ে গেছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি চাই।

পপি আক্তার ডলি নামে আরও একজন গ্রাহক বলেন, বাড়িতে বয়স্ক মা-বাবা আছেন। ঘন ঘন বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার কারণে তীব্র ঘামে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তারা। গভীর রাতেও বিদ্যুৎ থাকে না ঘণ্টার পর ঘণ্টা। স্বস্তিতে ঘুমাতে পারছি না কেউ-ই। এমন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ চাই।

আলাপকালে এক ব্যাংক কর্মকর্তা মাসুম বলেন, অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যাংকে সাধারণ গ্রাহক সেবা ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা জেনারেটর চালিয়ে গ্রাহক সেবা দিচ্ছি।

কমলগঞ্জ ন্যাশনাল টি কোম্পানী পাত্রখলা চা বাগান ব্যবস্থাপক দিপন সিংহ বলেন, বার বার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলে চায়ের কোয়ালিটি স্বাভাবিক রাখা কোনো ভাবে সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়াও মেশিনগুলোতে ও সমস্যার সৃষ্টি করছে। পুনরায় বিদ্যুত আসলে মেশিন ন্বাভাবিক করতে আধা ঘন্টা সময় ব্যায় হয়। এছাড়া উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে গিয়ে জেনারেটার ব্যবহার করতে হচ্ছে, এত করে উৎপাদন বেড়ে যাচ্ছে।
ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার ( কমলগঞ্জ জোনাল অফিস ) গোলাম ফারুক মীর বলেন, যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। চাহিদার চেয়ে বিদ্যুৎ কম পাওয়ায় কিছুটা লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। এসব বিষয় নিয়ে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা চলছে। আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে।

সিলেট বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আবু হোসাইন  জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের একটি অভ্যন্তরীণ সভা হয়েছে। ওই সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক সিলেটের বিদ্যুতের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি সেন্ট্রালে (ঢাকা) জানানো হবে। আশা করছি অচিরেই এ সমস্যার সমাধান হবে।