সবাইকে কাঁদিয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি। আজ বিকেল পাঁচটা আট মিনিটে নুসরাতের লাশ সোনাগাজীর উত্তর চর চান্দিয়া এলাকার বাড়িতে পৌঁছায়। সেখানে নুসরাতের মা শিরিন আক্তার ও ছোট ভাই রায়হান এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে হাজারো মানুষ উপস্থিত ছিলেন। স্থানীয় ছাবের সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় নুসরাতের মরদেহ। জানাজা পড়ান নুসরাতের বাবা এ এস এম মুসা মিয়া। জানাজার আগে স্থানীয়দের উদ্দেশে বাবা মুসা মিয়া বলেন, ‘বাড়ির আগুন সবাই দেখে। মনের আগুন কেউ দেখে না।’ কন্যা হত্যার বিচার চেয়ে বাবা বলেন, ‘আমাদের মতো কোনো বাবা-মার কোল যেন এভাবে খালি না হয়।’ তিনি নৃশংস এই ঘটনার বিচার দাবির পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী, হাসপাতালের চিকিৎসক ও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। বুধবার রাতে নুসরাতের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে আজ সকাল থেকেই সোনাগাজী সদরে হাজারো মানুষের ঢল নামে। বিশেষ করে নুসরাতের বাড়ি ও আশপাশের এলাকায় তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। হাজার হাজার মানুষকে সামাল দিতে উপজেলা সদরের বিভিন্ন মোড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। শত শত তরুণকেও শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত থাকতে দেখা যায়।
নুসরাতের বাড়ি থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে বিদ্যালয় মাঠে লাশ আনা হয় বিকেলে। সেখানে বক্তব্য দেন সাংসদ মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর পক্ষে তাঁর ভাই সাইফুদ্দিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজজামান, পুলিশ সুপার এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রহমান, উপজেলা চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ প্রমুখ। সবাই নুসরাতের খুনিদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির প্রতিশ্রুতি দেন।
৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার প্রশাসনিক ভবনের ছাদে নুসরাতের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। সংকটজনক অবস্থায় ওই দিনই তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। গতকাল বুধবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে নুসরাত মারা যান। তাঁর শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে যায় বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা।
এর আগে গত ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করেন মেয়েটির মা। গত রোববার নুসরাত চিকিৎসকদের কাছে দেওয়া শেষ জবানবন্দিতে বলেছিলেন, নেকাব, বোরকা ও হাতমোজা পরা চারজন তাঁর গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন। ওই চারজনের একজনের নাম শম্পা।