
ধলাই ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের কল্যাণে সব সময় কাজ করে যাওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জাতির পিতার কাছে অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা সবসময় মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাব, এটাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে আমাদের অঙ্গীকার।
মঙ্গলবার দুপুরে একাদশ জাতীয় সংসদের অষ্টম (বাজেট) অধিবেশনে আওয়ামী লীগের ৭১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দেয়া ভাষণে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে দুঃখ কষ্ট মানুষের থাকলেও আজ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঘরে ঘরে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া থেকে শুরু করে লাশ দাফন করাসহ প্রতিটি কাজে মানুষের পাশে রয়েছে।
প্রত্যেকটি এলাকায় আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যখন ঘূর্ণিঝড় (আম্ফান) এলো তখনও কিন্তু তারা সক্রিয় ছিলেন। তারা আমাদের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে দেশের প্রত্যেক এলাকায় বৃক্ষরোপন করেও ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন। ঠিক এইভাবেই মানুষের কল্যাণে আমরা কাজ করে যাবো।
সাত দিন বিরতির পর চলমান সংসদের অষ্টম ও বাজেট অধিবেশনের মুলতবি বৈঠক এদিন সকাল ১১ টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হয়।
গত ১৫ জুন সম্পূরক বিল পাস হওয়ার পর কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ২৩ জুন পর্যন্ত সংসদ মুলতবি করা হয়েছিলো। ১০ জুন থেকে শুরু হওয়া জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন আগামী ৩০ জুন অর্থ বছরের বাজেট পাস হওয়ার মধ্যদিয়ে শেষ হবে।
জন্মের পর থেকে বেশিরভাগ সময় লড়াই-সংগ্রাম, হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্র প্রত্যক্ষ করা উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ ও প্রাচীন রাজনৈতিক দল ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং শামসুল হকের নেতৃত্বাধীন দলটি পরে শুধু ‘আওয়ামী লীগ’ নাম নিয়ে অসাম্প্রদায়িক সংগঠন হিসেবে বিকাশ লাভ করে।
আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী প্রতিবার ঘটা করে উদযাপিত হলেও করোনাভাইরাসের কারণে এবারের কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে।
সংসদে শেখ হাসিনা বলেন, আজকের দিনে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমাদের এটাই প্রতিজ্ঞা- বাংলাদেশকে আমরা ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত করে গড়ে তুলে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করবো।
তিনি বলেন, যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে তখনই বাংলাদেশের মানুষ কিছু পেয়েছে, দেশটা এগিয়েছে। অথচ অন্য সময় আমরা দেখেছি বাঙালিকে কিভাবে পিছু টেনে রাখবে সেই প্রচেষ্টাই চালানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী খুব সীমিত আকারে উদযাপন করছি। কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন নেতা-সীমিত আকারে টুঙ্গিপাড়া গেছেন (জাতির পিতার সমাধিসৌধে)। আর সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে হাতে গোনা কয়েকজনকে নিয়ে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে (ধানমন্ডি ৩২) ফুল দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, জনসমাগম হোক, সে ধরনের কর্মসূচি আমরা বাতিল করেছি জনগণের কল্যাণের কথা চিন্তা করে। কারণ, আমাদের কাছে জনগণের কল্যাণটাই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। আজকে করেনাভাইরাসের জন্য এই যে সমস্যা এটি শুধু বাংলাদেশ নয়, সমগ্র বিশ্বব্যাপীই একটি সমস্যা, বলেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এই ভাইরাসের যেন আর বিস্তার না ঘটে এবং আর মানুষ যাতে এতে সংক্রমিত না হয় সেদিকে দৃষ্টি রেখে তার সরকার মুজিববর্ষ উদযাপনের সব কর্মসূচি যেমন স্থগিত করেছে তেমনি আজকে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, যেটি বিশেষভাবে উদযাপনের কথা ছিল, সেটিও সীমিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ২৩ জুন যে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল (১৭৫৬ পলাশির আম্রকাননে) তৎকালিন পলাশিরই একটি অংশ আমাদের মেহেরপুরের বৌদ্ধনাথ তলার বর্তমান মুজিবনগরের আম্রকাননে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার শপথ গ্রহণ করে। যারা মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, আজকের দিনটি আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, কেনোনা সেদিনের সেই অস্তমিত সূর্যই (পলাশির প্রান্তরের) ১৯৪৯ সালের এই দিনে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আবারো উদিত হয়। যখন আওয়ামী লীগ সংগঠন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করে। মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগের অগনিত নেতাকর্মী জীবন দিয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তাদের কথা স্মরণ করেন ও শ্রদ্ধা জানান।
তিনি এ সময় এবারের জাতীয় সংসদের আওয়ামী লীগের এমপি যারা মুত্যুবরণ করেছেন, তাদের প্রতিও শ্রদ্ধা জানান এবং সবার রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।
আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এবং প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক এবং সে সময় কারাগারে থাকা দলটির তরুণ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং নিখিল, পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দিকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষের কথা, তাদের অধিকার, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সব অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই সংগ্রাম করে গেছে।
এদেশের মাটি ও মানুষের জন্য জাতির পিতার আজন্ম লড়াই-সংগ্রামের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা তার সংগ্রামের পথে অনেক বাধা বিঘ্ন অতিক্রম করেছেন। জাতির পিতার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরতে গিয়ে ১৯৭১ সালের ১৫ মার্চ জাতির পিতার দেয়া একটি ভাষণের উদ্ধৃতি দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, জাতির পিতা বলেছিলেন, জীবনের বিনিময়ে আমরা আমাদের ভবিষ্যত বংশধরদের স্বাধীন দেশের মুক্ত মানুষ হিসেবে স্বাধীনভাবে আর আত্মমর্যাদার সঙ্গে বাস করার নিশ্চয়তা দিয়ে যেতে চাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই মানবতার সেবা করে যাচ্ছে। এদেশের জনগণের সেবা করছে। শোষিত-বঞ্চিত মানুষ, এদেশের কৃষক, শ্রমিক, তাঁতী, কামার-কুমোরসহ অগণিত মানুষ-তাদের কথাই বলেছে এবং তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই সংগ্রাম করেছে। তিনি বলেন, অনেকেই আত্মাহুতি দিয়েছেন এবং তাদের এই আত্মত্যাগের জন্যই আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। স্বাধীন জাতি হিসেবে মর্যাদা পেয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, কিন্তু দুর্ভাগ্য জাতির পিতা যখন বাংলাদেশকে স্বাধীনতার পরে গড়ে তোলার পথে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন সে সময় খন্দকার মোস্তাক এবং জিয়াসহ কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্রের ফলে জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো এবং বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যহত হয়ে গেল।
১৯৭৩ সালের ৩০ মে বঙ্গবন্ধুর দেয়া অপর একটি ভাষণের উদ্ধৃত দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বলেছিলেন, একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি। এজন বাঙালি হিসেবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এই নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালোবাসা, অক্ষয় ভালোবাসা, যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে।
জাতির পিতা আজ আমাদের মাঝে না থাকলেও তার অস্তিত্ব বাঙালির রন্ধ্রে রন্ধ্র্রে রয়েছে উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, তার (বঙ্গবন্ধু) যে আকাঙ্ক্ষা তা আমাদের পূরণ করতে হবে।