জালিয়াতি : ৫ আসামির জামিন বাতিল, আইনজীবীকে শোকজ

প্রকাশিত: ১১:১৫ অপরাহ্ণ, জুন ১০, ২০২০
ফাইল ছবি

ধলাই ডেস্ক: তথ্য গোপন ও জালিয়াতি করে জামিন নেয়ার অভিযোগে খুলনার দিঘলিয়ার টিপু শেখ হত্যা মামলার পাঁচ আসামির জামিন বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তারা যদি জামিনে বেরিয়ে যান তাহলে সাতদিনের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর তারা যদি আত্মসমর্পণ না করেন তাহলে তাদের গ্রেফতারে খুলনার এসপিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও তাদের পক্ষে লড়া আইনজীবী আবু হেনা মোস্তফা কামাল আপাতত আর ভার্চুয়ালে মামলা পরিচালনা করতে পারবেন না।

রাষ্ট্রপক্ষ থেকে তথ্য গোপন ও জালিয়াতির বিষয়টি নজরে আনার পর বুধবার (১০ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের ভার্চুয়াল বেঞ্চ আসামিদের জামিন বাতিল করেন। আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ। বাদীপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট বিএম সুলতান মাহমুদ।

আসামিরা হলেন- সোহাগ শেখ, সেলিম শেখ, জুয়েল শেখ, লুৎফর শেখ ও আব্দুল্লাহ মোল্লা। এর আগে গত ১৮ মে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমের ভার্চুয়াল বেঞ্চ থেকেই তাদের জামিন হয়েছিল। সেদিন এই পাঁচ আসামির জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আবু হেনা মোস্তফা কামাল।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. বশির উল্লাহ বলেন, পাঁচ আসামির আইনজীবী আবু হেনা মোস্তফা কামালকে ভার্চুয়াল কোর্টে মামলা পরিচালনা করতে নিষেধ করা হয়েছে। এছাড়া আগামী সাতদিনের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে যে, কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হবে না।

তিনি বলেন, এই মামলায় জামিনপ্রাপ্ত পাঁচ আসামিই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এমনকি মামলার অভিযোগপত্রও দাখিল হয়ে গেছে। এসব তথ্য গোপন করে এবং মামলার জাল বানোয়াট এজাহার দাখিল করে হাইকোর্ট থেকে তারা অন্তবর্তী জামিন নিয়েছিল।

বশির উল্লাহ আরও বলেন, সম্প্রতি বাদীপক্ষের আইনজীবী সুলতান মাহমুদের কাছ থেকে আমরা জানতে পারি বিষয়টা। পরে ওই আইনজীবী মামলার এজাহারটি পাঠালে জালিয়াতির বিষয়টা ধরা পড়ে। যে এজাহারটি দাখিল করে জামিন নিয়েছে তার সাথে মামলার এজাহারটির কোনো মিল নেই।

আসামিদের আইনজীবী আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, আজ ভার্চুয়াল কোর্টে থাকতে বলা হয়েছিল। গ্রামের বাড়ি থেকে আসার কারণে আমি কোর্টে সংযুক্ত হতে পারিনি। পরে অবশ্য আদেশটি জানতে পেরেছি।

তথ্য গোপন করে বা ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে জামিন করিয়েছিলেন কিনা- এ বিষয়ে তিনি বলেন, মামলার কাগজপত্রগুলো ঠিক কিনা, তা তো পরীক্ষা করেই এফিডেফিট করা হয়েছিল। তারপরও যে এসব কাগজপত্র ভুয়া এটা প্রমাণের দায়িত্ব কে নেবে? আসলে আমি বুঝতেই পারিনি।

গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার পরবিলার টিপু শেখকে অতর্কিত হামলা করে খুন করা হয়। পরে তার ছেলে আলমগীর শেখ থানায় মামলা দায়ের করেন।

আলমগীর শেখের এজাহার অনুসারে জানা যায়, ৬ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৫টায় দিঘলিয়া থানার পরবিলার টিপু শেখকে গাজীরহাট বাজারের পাশে কাঠালতলা ভ্যানস্ট্যান্ডে দিনের বেলায় অজ্ঞাতপরিচয় ৮/১০ জন অতর্কিত হামলা করে। আসামিরা মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে উল্লাস করে চলে যান। পরে চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেলে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা দেন।

এ ঘটনায় এজাহারনামীয় ৩২ আসামির মধ্যে পাঁচ আসামি হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন। তারা হলেন- সোহাগ শেখ, সেলিম শেখ, জুয়েল শেখ, লুৎফর শেখ ও আব্দুল্লাহ মোল্লা। গত ১৮ মে ভার্চুয়াল আদালত তাদের নিয়মিত আদালত খোলা হওয়া পর্যন্ত জামিন দেন। তাদের আইনজীবী ছিলেন আবু হেনা মোস্তফা কামাল। রাষ্ট্রপক্ষে বুধবার (১০ জুন) বিষয়টি আদালতের নজরে নওয়ার পর আদালত আদেশ দেন।

ড. মো. বশির উল্লাহ বলেন, ১৮ মে তারা জামিন পান। এরমধ্যে এ মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী বিএম সুলতান মাহমুদ জানতে পারেন তারা জালিয়াতি করেছে। তিনি বিষয়টি আমাদের অবহিত করেন। এরপর খবর নিয়ে দেখলাম ভুয়া এজাহার বানিয়ে অভিযোগ বদল করে তারা জামিন নেন। এছাড়া এ মামলার অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে ২১ ডিসেম্বর। অথচ তারা বলেছে মামলা তদন্তাধীন। আজ বিষয়টি আবেদন আকারে আদালতের নজরে আনা হয়েছে।

আদালত তাদের জামিন বাতিল করেছেন, যদি তারা কারাগার থেকে বেরিয়ে যান তাহলে সাতদিনের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে বলেছেন। যদি আত্মসমর্পণ না করেন তাহলে তাদের গ্রেফতার করতে খুলনার এসপিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তাদের আইনজীবীকেও শোকজ করেছেন। এছাড়া আপাতত তাদের পক্ষের ওই আইনজীবী আর ভার্চুয়াল আদালতে মামলা পরিচালনা করতে পারবেন না বলে আদালত আদেশ দিয়েছেন।

সূত্র: জাগো নিউজ…