টাঙ্গাইলে বন্যায় ভেঙে পড়ছে একের পর এক ব্রিজ

প্রকাশিত: ৯:২৯ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৯, ২০২০
সংগৃহীত

ধলাই ডেস্ক: টাঙ্গাইলে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বন্যা পরিস্থিতি। দ্বিতীয় দফার বন্যায় এ জেলার স্থায়ী নদী প্রতিরক্ষা কাজসহ ভাঙছে একের পর এক ব্রিজ। এতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে জনপদ। বন্যা দুর্গত এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে গোখাদ্য, বিশুদ্ধ পানি আর শুকনা খাবারের তীব্র সংকট।

গত ১২ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি ৮ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৮৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও কমেনি জেলার ধলেশ্ব, ঝিনাইসহ অন্যান্য নদীর পানি। এতে টাঙ্গাইলে ভেসে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি, রাস্তা ঘাট ও হাটবাজার। ১ম দফার বন্যার রেশ কাটতে না কাটতে আবার পানি বৃদ্ধি পেয়ে ভূঞাপুর, কালিহাতি, টাঙ্গাইল সদর ও নাগরপুরের নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হয়ে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এরপরও সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে এসব বানভাসী মানুষের।

তবে টাঙ্গাইল জেলা ত্রাণ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী বানভাসীদের মাঝে ৪শ মে.টন চাল আর নগদ ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ২ লাখ টাকার মতো শিশু খাদ্য বরাদ্দ দেয়াসহ অব্যাহত রয়েছে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ কার্যক্রম।

গত ১২ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি ৮ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৮৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম।

জানা যায়, গত (১৬ জুলাই) বৃহস্পতিবার বিকেলে বন্যার পানির তোড়ে ভেসে গেছে বাসাইল উপজেলার ছোনকা পাড়া ব্রিজ। এর ফলে বাসাইল উপজেলা সদর হতে কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন সড়কটি বন্ধ রয়েছে। এতে বাসাইল ও মির্জাপুর উপজেলার কাঞ্চনপুর দক্ষিণপাড়া, ছনকাপাড়া, কাজিরাপাড়া, কোদালিয়াপাড়া, ফতেপুর, পাটদিঘীসহ প্রায় ৩০ গ্রামের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।

গত (১৭ জুলাই) শুক্রবার সন্ধ্যায় বন্যার পানির স্রোতে চৌহালী-আরিচা সড়কের উপজেলার সলিমাবাদ ইউনিয়নের তেবাড়িয়ায় বেইলি ব্রিজ ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়া নাগরপুর শাহাজানী সড়কের বনগ্রামে পাকা রাস্তায় পানি উঠে পার্শ্ববর্তী চৌহালী উপজেলার সাথে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।

অপরদিকে, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়কের কয়েকটি স্থানে লিকেজ দেখা দিয়েছে। এছাড়াও উপজেলার তারাই এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেলে প্রাথমিকভাবে সংস্কার করছে। এছাড়া নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করায় বেশ কিছু এলাকার কাঁচা-পাকা সড়ক ভেঙে গেছে। উপজেলার গোবিন্দাসী-ভালকুটিয়া রাস্তার চারটি অংশে ভেঙে যাওয়ায় পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে।

এর আগে শনিবার (৪ জুলাই) রাতে কালিহাতী উপজেলার গোহালিয়াবাড়ি ইউনিয়নের বেলটিয়া উত্তরপাড়ার বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব রক্ষাবাঁধ এলাকার সেতুপূর্ব রক্ষা দ্বিতীয় গাইডবাঁধ ভেঙে ২৩টি ঘর-বাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে।

একই রাতে টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার ধলেশ্বরী নদীর ঘোনাপাড়া পয়েন্টে ১৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সদ্য নির্মিত স্থায়ী প্রতিরক্ষার কাজটির তিনটি স্থান ধসে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়।

বাসাইলের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)’র উপসহকারী প্রকৌশলী সাজেদুল আলম বলেন, ১৯৯২-৯৩ সালে কেয়ার বাংলাদেশ’র আওতায় সাড়ে ১১ মিটার ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়। ব্রিজটি এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল।এ কারণে পানির স্রোতে ভেঙে পড়েছে। ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ইতোমধ্যেই নতুন করে ব্রিজ নির্মাণের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।

টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রহমান বলেন, এটি সড়ক ও জনপথ (সওজ) এর রাস্তা। বেইলি ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ার খবর পেয়ে আমরা দ্রুত পরিদর্শনে এসেছি। আগামী দু একদিনের মধ্যে ব্রিজটি মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করার আশ্বাস প্রদান করেছেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়কের কয়েকটি স্থানে দেখা দেয়া লিকেজসহ তারাই এলাকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধের রাস্তাটি প্রাথমিকভাবে জিও ব্যাগ ফেলে সংস্কার করা হচ্ছে। এছাড়াও পানি না কমা পর্যন্ত নাগরপুর উপজেলার ধলেশ্বরী নদীর ঘোনাপাড়া পয়েন্টে ১৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত স্থায়ী প্রতিরক্ষা কাজটির মেরামত সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি।

সূত্র: জাগো নিউজ…