ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকায় মেয়েরা

প্রকাশিত: ৯:৪৬ অপরাহ্ণ, জুন ১, ২০১৯

ডেস্ক রিপোর্ট: ঈদপূর্ব যানজট নিরসনে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌরশহরে ‘কুলাউড়া মুক্ত স্কাউট গ্রুপ’ নামে স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠনের সদস্যরা ২০১৫ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছে।

তবে প্রথমবারের মতো এবার এ কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছে মেয়ে শিক্ষার্থীরা। এতে যানজট নিরসন কার্যক্রম আরও গতি পেয়েছে। অন্যদিকে এ কার্যক্রমের কারণে যানজট কম হওয়ায় সফলতা পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

শুক্রবার বেলা ১১টায় ‘কুলাউড়া মুক্ত স্কাউট গ্রুপ’ আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের সেবা কার্যক্রম শুরু করে। এ কাজের উদ্বোধন করেন কুলাউড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়ারদৌস হাসান ও পরিদর্শক (তদন্ত) সঞ্জয় চক্রবর্তী। শুক্রবার সকাল থেকে শহরের প্রধান রাস্তায় বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে শিক্ষার্থীরা। স্কাউট সংগঠনের সদস্যরা বলছেন এটা তাদের ঈদ সেবা।

সরেজমিনে দেখা যায়, কুলাউড়া শহরের ভেতর দিয়ে যাওয়া মৌলভীবাজার-বড়লেখা আঞ্চলিক মহাসড়কের দুই পাশে বিভিন্ন বিপণিতে ঈদের কেনাকাটা চলছে। শহরের দক্ষিণ বাজার, রেলস্টেশন চৌমোহনী, আউটার ও উত্তর বাজার এলাকায় স্কাউটের সদস্যরা যানজট নিরসনে কাজ করছে। ট্রাফিক আইন মেনে চলতে তারা গাড়ি চালকদের পরামর্শ দিচ্ছে। এছাড়া ফুটপাতে গাড়ি দাঁড় করিয়ে না রাখতেও বলছে। তাদের পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশকেও এ কাজে তৎপর দেখা যায়।

স্কাউট সদস্য জান্নাতুল ফেরদৌস শাকি বলেন, এই কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করতে পেরে আমার খুবই ভালো লাগছে। আমাদের সমাজে মেয়েরা যে প্রতিটি কাজে ভালো করতে পারে এটা তার একটা প্রমাণ।

‘কুলাউড়া মুক্ত স্কাউট গ্রুপের’ সম্পাদক শামসুদ্দিন বাবু বলেন, ঈদে কেনাকাটা করার জন্য উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন শহরের বিপণিগুলোতে ভিড় জমান। ফলে এ সময়টাতে যানজটের সৃষ্টি হয়। তাই আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে শহরের ব্যস্ত এলাকায় যানজট নিয়ন্ত্রণে ‘ঈদ সেবা’ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সংগঠনের ৩০ জন সদস্য পর্যায়ক্রমে এ কার্যক্রম চালাবেন। এটা চলবে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত। এ কাজে জনপ্রতিনিধিসহ উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সাংবাদিক এবং ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা তাদের উৎসাহ যুগিয়েছেন। ২০১৫ সাল থেকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে এ কার্যক্রম চালিয়ে আসছি আমরা।

এদিকে, মেয়েদের এমন কার্যক্রমে যানজট মুক্ত থাকায় প্রশংসা করছেন স্থানীয়রা। শহরের চৌমোহনা এলাকার ব্যবসায়ী বাপ্পী চৌধুরী বলেন, যানজটের কারণে ক্রেতাদের ভোগান্তি হয় বেশি। স্কাউট সদস্যরা মাঠে নামায় যানজট অনেকটা কমেছে।

কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি বদরুজ্জামান সজল বলেন, মেয়েদের এই কাজ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। বিনা পারিশ্রমিকে তারা মানুষকে যে ঈদ সেবা দিয়ে যাচ্ছে, মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে ঈদের কেনাকাটা করতে পারছে। এই গ্রুপের সদস্যরা শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় যে মহৎ কাজ করে যাচ্ছে, তারা যেন অদূর ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ করে সমাজের কল্যাণ বয়ে আনতে পারে আমি সে প্রত্যাশা করি।

কুলাউড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়ারদৌস হাসান বলেন, শহরের যানজট নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পাশাপাশি স্কাউট সদস্যরা কাজ শুরু করছে। আমরা আশা করি যানজট কমিয়ে আনতে পারবো।

মৌলভীবাজার জেলার ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন কাজল বলেন, বিশেষ সময়ে সড়কে যে চাপ পড়ে তা জনবল সংকটের কারণে পুলিশের পক্ষে একা সামাল দেয়া কষ্টকর। স্কাউট একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। তারা বিগত কয়েক বছর ধরে যানজট মুক্ত করতে বিশেষ সময়ে কাজ করে। এ বছর তাদের সঙ্গে মেয়েরাও যুক্ত হয়েছে। মেয়েদের আন্তরিকতা এবং দায়িত্বজ্ঞান প্রশংসার দাবি রাখে।