তিন শুল্ক বন্দরে কর্মহীন ত্রিশ হাজার শ্রমিক

প্রকাশিত: ৮:৩৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২০
ছবি সংগৃহীত

ধলাই ডেস্ক: করোনা পরিস্থিতির কারণে বন্ধ রয়েছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউপির বড়ছড়া, বাগলী, ছাড়াগাঁওসহ তিনটি শুল্ক বন্দর। এ কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন প্রায় ত্রিশ হাজার শ্রমিক।

ভারতের মেঘালয় সীমান্ত তীরবর্তী হওয়ায়া এ তিনটি শুল্ক বন্দরে হাজারো শ্রমজীবী উপার্জনের উৎস খুঁজে পেতো। কিন্তু করোনা যেনো তাদের জীবিকায় একরাশ কালো মেঘ ছুঁয়ে দিলো। এখন তাদের কাজ নেই, বেকার জীবন। অন্য কাজের সন্ধানে ছুটছেন শহরে।

এছাড়াও তিন দফা বন্যায় তাহিরপুরের অধিকাংশ মানুষের ঘরবাড়ি নষ্ট হয়েছে। ভেঙে পড়েছে রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন অবকাঠামো। তবে বন্যার পানি সরে গেলেও শুকায় হাওরবাসীর বুকে রেখে যাওয়া ক্ষত।

এছাড়াও হাওরগুলো পানিতে ভরপুর থাকায় জেলেদের জালে ধরা পড়ছে না পর্যাপ্ত মাছ। এখানকার শ্রমজীবী মানুষদের কয়লা চুনাপাথর পরিবহনসহ কৃষি ও মাছ ধরা ছাড়া বিকল্প কর্মসংস্থানের উৎস না থাকায় দরিদ্র হাওরবাসী পড়েছেন জীবন ও জীবিকার গভীর সংকটে।

টাঙ্গুয়ার হাওরের জয়পুর গ্রামের মৎস্যজীবী নুর উদ্দিন মিয়া বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরে মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা থাকলেও দিনরাত হাওরে জাল ফেলে ৩০০ টাকার মাছও ধরা যায় না। প্রতিটি নৌকায় মাছ ধরতে দুইজন জেলের দরকার হয়। এরকম আয়-রোজগার দিয়ে সংসার চলে না। তাই জীবিকার তাগিদে গ্রাম ছেড়ে ছেলে সন্তান নিয়ে কাজের খুঁজে শহরে যেতে বাধ্য হয়েছি।

একই গ্রামের ঢাকায় অবস্থানরত সাইকুল মিয়ার ছোট ভাই বলেন, ভাইয়ের অবস্থা খুবই খারাপ। ঋণের চাপ সইতে না পেরে কাজের খুঁজে শহরে গেছেন। সেখানেও নেই কাজকর্ম, বাচ্চাকাচ্চা নিয়া মহা বিপদে আছেন।

একই ইউপির তরং গ্রামের কয়লা চুনাপাথর পরিবহন শ্রমিক জানে আলম বলেন, কয়লা ও চুনাপাথর আমদানি বন্ধ থাকায় দিশেহারা হয়ে কাজের খুঁজে শহরে গিয়েছিলাম, সেখানেও কাজ নেই। যে পরিমাণ কাজ আছে তার চেয়ে দ্বিগুণ মানুষ গ্রাম থেকে শহরে গিয়েছেন। ঋণ করে কাজের উদ্দেশে শহরে গিয়েছিলাম কাজ না পেয়ে বাড়িতে ফিরে এসেছি। এক দিকে ঋণের চাপ অন্যদিকে পেটের ক্ষুধা, বর্তমানে আমি দিশেহারা।

তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খসরুল আলম বলেন, করোনা আর বিভিন্ন আইনি জটিলতায় তাহিরপুর সীমান্তের কয়লা শুল্ক স্টেশনগুলো বন্ধ রয়েছে। সীমান্ত এলাকাসহ উপজেলার নদীগুলোতে বালু, পাথর, ওপার থেকে ভেসে আসা মরা পাথর ও কয়লা খেটে খাওয়া মানুষজন উত্তোলন করতে না পারায় অনেকেই বাধ্য হয়ে পেটের দায়ে শহরের দিকে ছুটে যাচ্ছেন।

সুনামগঞ্জের ডিসি মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, গত শনিবার সরেজমিন যাদুকাটা নদী এবং টেকেরঘাট এলাকায় পরিদর্শন করে এখানকার শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা হাওর এলাকায় বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির নানামুখী উদ্যোগ নিচ্ছি।

তিনি বলেন, সীমান্ত নদী যাদুকাটায় বালু পাথর উত্তোলনে সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। নদীর পাড় কেটে, পরিবেশ বিপর্যয় ঘটিয়ে, ইঞ্জিন চালিত মেশিন চালিয়ে বালু উত্তোলন করা যাবে না। তবে নদী থেকে হাত বা ঠেলা জাল দিয়ে শ্রমিকরা কয়লা, লাকড়ি সংগ্রহ করাতে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।

সূত্র: ডেইলী বাংলাদেশ…