ডেস্ক রিপোর্ট: দাদিকে খুন্তি দিয়ে কুপিয়ে খুন করার পর একই অস্ত্র দিয়ে বাবা-মাকেও জখম করেছে এক যুবক। পুলিশ ও দমকলবাহিনীর সদস্যরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসার পর দেখেন ওই যুবক ফেসবুকে লাইভ করছেন। সোমবার সকালে দিকে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার চুঁচুড়া থানা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ইন্দ্রনীল রায় নামের ওই যুবককে গ্রেফতার করেছে।
গ্রেফতারের পর থেকেই ২৩ বছর বয়সী ইন্দ্রনীলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সন্তোষজনক জবাব পাননি তদন্তকারী কর্মকর্তারা। অসংলগ্ন নানা জবাব দিয়েছেন তিনি। ইন্দ্রনীল বলেছে, ‘আমি খুন করিনি। কতগুলো লোক ঘুরছিল বাড়ির বাইরে। তারাই মেরেছে।’ তবে পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, মানসিক অবসাদে ভুগছে শ্রীরামপুর কলেজের সাবেক এই ছাত্র।
চুঁচুড়ার ব্যান্ডেলের কেওটা শিবতলা এলাকায় রেল-কর্মচারী বিশ্বজিৎ রায়ের দোতলা বাড়ি। তার একমাত্র ছেলে ইন্দ্রনীল দাদি আরতি রায়ের (৮৩) সঙ্গেই দোতলায় থাকতেন। অন্য দিকে, স্ত্রী তাপসীকে নিয়ে একতলায় থাকতেন বিশ্বজিৎ।
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ বলছে, সোমবার ভোরের দিকে দোতলার ঘর থেকে আওয়াজ এবং চিৎকার শুনতে পান বিশ্বজিৎ। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে যান। দোতলায় উঠতেই তার দিকে একটি ধারালো খুন্তি নিয়ে এগিয়ে আসেন ইন্দ্রনীল। সজোরে সেই খুন্তি দিয়ে বাবার বাম হাতে কোপ মারেন। বিশ্বজিতের চিৎকার শুনে তার স্ত্রী তাপসী দেবী ওপরে আসেন। তাকেও আক্রমণ করে ছেলে।
পাশের বাড়ি থেকে আসা এমন চিৎকার শুনে প্রতিবেশীদের কয়েকজন চলে আসেন ওই বাড়িতে। তাপসী দেবী দরজা খুলে দেন। এর পর বিশ্বজিৎকে একতলায় নামিয়ে এক প্রতিবেশী দোতলার সিঁড়ির দরজায় তালা লাগিয়ে দেন। খবর দেয়া হয় চুঁচুড়া থানায়। তখনও তারা আরতি দেবীর খবর জানতেন না। স্থানীয়দের অভিযোগ, খবর পেয়ে পুলিশ আসতে দেরি করেছে। ইতোমধ্যে দোতলা থেকে ছাদে উঠে যায় ইন্দ্রনীল। পাড়া-প্রতিবেশীরা ততক্ষণে ভিড় জমাতে শুরু করেছেন রায়-বাড়ির সামনে।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ এসে ইন্দ্রনীল বাড়ির ছাদে ঘুরে বেড়াতে দেখে। পুলিশ সদস্যরা তাকে নেমে আসতে বললেও এতে কোনো কাজ হয়নি। এর পর খবর দেয়া হয় দমকল বাহিনীকে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে তারাও এসে পড়ে।
এর মাঝেই পুলিশের নির্দেশে দোতলার সিঁড়ির তালা খুলে দেয়া হয়। নিচে নেমে আসেন ইন্দ্রনীল। একতলায় এসে মোবাইল বের করে গ্রিলের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ এবং প্রতিবেশীদের তাক করে ফেসবুক লাইভ করতে থাকেন তিনি। একই সঙ্গে চলতে থাকে অসংলগ্ন কথাবার্তা। যারা সেই সময় তার ফেসবুক লাইভ দেখছিলেন, তাদের সঙ্গেও কথা চালাচালি করেন ইন্দ্রনীল। তাকে লিখতে দেখা যায়, ‘এই নরক থেকে আমাকে উদ্ধার করো।’
পরে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। ওপরে গিয়ে আরতি দেবীর রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে পুলিশ। বিশ্বজিৎ ও তাপসী দেবীর সঙ্গে সেই আরতী দেবীকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসকরা জানান, আরতী দেবী মারা গিয়েছেন। আর ছেলের খুন্তির কোপে বাম হাত কেটে এবং ভেঙে গিয়েছে বিশ্বজিতের। আনন্দবাজার।