আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের উত্তর প্রদেশে ধর্ষণ মামলার শুনানিতে যাওয়ার পথে অভিযুক্তদের হাতে দগ্ধ তরুণীর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার রাতে দিল্লির একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় বলে এনডিটিভি জানিয়েছে।
২৩ বছর বয়সী এ তরুণীর শরীরের ৯০ শতাংশই পুড়ে গিয়েছিল। গুরুতর আহত অবস্থায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকেই তাকে বিমানে করে দিল্লির সফদারজং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
কিন্তু শুক্রবার সকাল থেকেই তার অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এরপর রাত ১১টা ৪০ মিনিটে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান অগ্নিদগ্ধ ওই তরুণী।
লক্ষ্ণৌর একটি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়তে লড়তেই উন্নাওয়ের ওই তরুণী পুলিশকে তার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার ভোর রাতে গণধর্ষণ মামলার শুনানির জন্য উন্নাও থেকে রায়বেরেলি যাচ্ছিলেন ওই তরুণী।
সকালে বাইশওয়াড়া বিহার স্টেশনের দিকে রওনা হতেই হরিশংকর ত্রিবেদী, শুভম, কিশোর, শিবম ও উমেশ তার পথ আটকায়। অভিযুক্তরা প্রথমে ওই যুবতীর মাথায় আঘাত করে। পরে গলায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ মারে। আঘাতের পর মাটিতে পড়ে যেতেই তার গায়ে পেট্রল ঢেলে জ্বালিয়ে দেয়া হয়। অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে করতে ছুটতে থাকেন। এই অবস্থায়ই প্রায় এক কিলোমিটার পাড়ি দেন তিনি।
এক বছর আগে উত্তরপ্রদেশের উন্নাওয়ের একটি গ্রামে গণধর্ষণ করা হয় ওই তরুণীকে। ওই ঘটনা ক্যামেরাবন্দি করা হয়েছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে। পরে স্থানীয় আদালতের নির্দেশে গ্রামেরই দু’জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। তাদের মধ্যে একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই জামিনও পেয়ে যায়। মামলার শুনানির জন্য আদালতে যাওয়ার পথে ওই তরুণীকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করে ওই অভিযুক্তরাই।
পুলিশ বৃহস্পতিবারই অভিযুক্ত ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে।
ভারতে প্রায়শই যৌন সহিংসতার শিকার হয় নারীরা। কেবল ২০১৭ সালেই দেশটিতে ৩৩ হাজার ৬৫৮টি, গড়ে প্রতিদিন ৯২টি করে ধর্ষণের মামলা নথিভুক্ত হয়েছে বলে সরকারি এক হিসাবে জানানো হয়েছে।
২০১৮ সালে থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনের এক জরিপ অনুযায়ী, নারীদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশ এটি।
অ্যাকটিভিস্টরা বলছেন, নারীর বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।
গত সপ্তাহে দেশটিতে বেশ কয়েকটি ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা সামনে এসেছে। ঝাড়খণ্ডে ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়েছেন এক নারী আইনজীবী। রাজস্থানে ছয় বছরের এক শিশুকে হত্যা করা হয়েছে।
গত ২৭ নভেম্বর তেলেঙ্গানার হায়দ্রাবাদে ২৭ বছর বয়সী এক পশু চিকিৎসককে ধর্ষণের পর পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে।