ডেস্ক রিপোর্ট: টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে চট্টগ্রাম-বান্দরবান সড়কের সাতকানিয়া উপজেলার বাজালিয়া এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় পাঁচদিন ধরে সারাদেশের সঙ্গে বান্দরবানের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ। চালকরা জানিয়েছেন, ডুবন্ত সড়কে ভ্যানে গত কয়েকদিন মানুষ পারাপার হয়ে গন্তব্যে পৌঁছালেও এখন তা একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। ওই সড়কে গলাসমান পানি।
বান্দরবান বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুব্রত দাশ ঝুন্টু জানান, গতকালের চেয়ে বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কে পানি অনেক বেশি। কোনো ধরনের বাস চলাচল করতে পারছে না। তবে রাস্তায় পানি কমে গেলে বাস চলাচল স্বাভাবিক হবে।
এদিকে বান্দরবান-রাঙ্গামাটি সড়কের বালাঘাটা এলাকায় পাহাড়ি ঢলে সড়ক ডুবে থাকায় রাঙ্গামাটির সঙ্গে বান্দরবানের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বান্দরবান সদরের আর্মিপাড়া, শেরে বাংলা নগর, বালাঘাটা, আমবাগানসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকায় এখনো ডুবে আছে। ডুবন্ত সড়কের ওপর দিয়ে চলছে নৌকা। কেউ কেউ বন্যার পানিতে জাল ফেলে মাছ ধরছেন।
এদিকে কয়েকজন জনপ্রতিনিধি জানিয়েছেন, সাঙ্গু নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বান্দরবান-কেরানীহাট সংযোগ সড়ক এবং অভ্যন্তরীণ রুটগুলো পাঁচদিন ধরে বন্ধ থাকায় খাদ্যপণ্যের ওপর প্রভাব পড়েছে। সবজিক্ষেত ডুবে যাওয়ায় বাজারে দেখা দিয়েছে সবজি সংকট।
বান্দরবানের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শামীম হোসেন জানান, বান্দরবান জেলায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেছে ৪৫০ মেট্রিক টন চাল। তবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় এলাকাগুলোতে ত্রাণ পৌঁছাতে বেগ পেতে হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, বন্যা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি নেই। গতকাল ভারি বৃষ্টিপাত হওয়াতে বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গেছে। ১৩১ টি আশ্রয় কেন্দ্রে গতকাল রাত থেকে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের পাদদেশে থাকা ও বন্যায় প্লাবিত বাসিন্দাদের মধ্যে ২ হাজার ৫০০ পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছে। তাদেরকে শুকনো খাবার দেয়া হচ্ছে।
এদিকে বান্দরবানের সিভিল সার্জন ডা. অংসুই প্রু জানান, বন্যা দুর্গতদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে জেলায় ৪১টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে । সাইক্লোন সেন্টার এবং বিদ্যালয়গুলোতে আশ্রয় নেয়াদের এই স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হচ্ছে। ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা দিচ্ছে মেডিকেল টিম। জরুরি হলেই সদর হাসপাতালে এনে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে ।
বান্দরবানের পৌরসভার মেয়র ইসলাম বেবী জানান, জেলার ১৮টি আশ্রয় কেন্দ্রের প্রায় আড়াই হাজার মানুষকে দুই বেলা করে রান্না করা খিচুরি ও মাংস দেয়া হচ্ছে। পানি বিশুদ্ধকরণের জন্য ট্যাবলেট দেয়া হচ্ছে।
এদিকে থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুল হক মৃদুল জানান, সাঙ্গু নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সাঙ্গু নদীর পানি বৃদ্ধিতে নৌপথে দুর্গম এলাকার মানুষ থানচি সদরে আসতে পারছে না। এছাড়াও তিন্দু রেমাক্রিসহ দুর্গম এলাকা ভ্রমণে উপজেলা প্রশাসন থেকে পর্যটকদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।