ডেস্ক রিপোর্ট: পুলিশকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অপরাধ নির্মূল ও সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়। রোববার দুপুরে রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৩৬তম বিসিএস ব্যাচের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি এ নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপরাধের ধরন প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। গতানুগতিক অপরাধের পাশাপাশি সাইবার ক্রাইম, মানি লন্ডারিং, মানবপাচার ইত্যাদি বৈশ্বিক অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকের মতো অশুভ সামাজিক ব্যাধি। জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ পুলিশের অব্যাহত সাফল্য শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। এদেশের মাটিতে কোনোভাবেই জঙ্গি, সন্ত্রাসী ও যুদ্ধাপরাধীদের ঠাঁই হবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের সমস্যাকে দেখতে হবে একান্ত আন্তরিক ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে। জনগণের মনে পুলিশ সম্পর্কে যেন অমূলক ভীতি না থাকে সেজন্য জনগণের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। সমাজের নারী, শিশু ও প্রবীণদের প্রতি সংবেদনশীল আচরণ করতে হবে। সমাজ থেকে অপরাধ নির্মূলে জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমে জনবান্ধব পুলিশ গঠনে আপনাদের অগ্রপথিকের ভূমিকা পালন করতে হবে। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
নবীন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন। মনে রাখতে হবে, একজন মানুষ তার সবচেয়ে বিপদের সময় পুলিশের কাছে সাহায্যের জন্য আসে। তাই আপনাদের সেবা ও মানবিক আচরণের মাধ্যমে গণমানুষের আস্থা অর্জনে সচেষ্ট থাকতে হবে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু তার বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে সর্বদাই এ দেশের পুলিশকে জনগণের পুলিশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অনুপ্রাণিত করতেন। বঙ্গবন্ধু পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলতেন, আপনারা স্বাধীন দেশের পুলিশ। আপনারা বিদেশি শোষকদের পুলিশ নন, জনগণের পুলিশ। আপনাদের কর্তব্য জনগণের সেবা করা, জনগণকে ভালোবাসা, দুর্দিনে জনগণকে সাহায্য করা। আমি আশা করি আপনারা জাতির পিতার সেই প্রত্যাশা পূরণে আপনাদের ওপর অর্পিত পবিত্র দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে সর্বদা সচেষ্ট থাকবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রযুক্তির অপব্যবহার করে একটি স্বার্থান্বেষী মহল বিভিন্ন সময় গুজব রটিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। এসব গুজব রটনাকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সচেতন করার কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় বিশেষ হেলিকপ্টারযোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে পৌঁছেন। পরে প্যারেড মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী তাকে স্বাগত জানান।
এরপর প্রধানমন্ত্রী অভিবাদন মঞ্চে গিয়ে নবীন পুলিশ সদস্যদের সশস্ত্র সালাম গ্রহণ করেন। পরে একটি খোলা জিপে তিনি নবীন পুলিশ কর্মকর্তাদের সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন।
প্যারেড কমান্ডার শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার শাহিন আক্তার ও সহকারী প্যারেড কমান্ডার রবিউল ইসলাম খানের নেতৃত্বে আটটি কন্টিনজেন্ট প্যারেড অংশগ্রহণ করে। আট কন্টিনজেন্টে থাকা মোট ১১৭ জন শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার মার্চপাস্ট করে প্রধানমন্ত্রীকে সালাম জানান। এরপর পতাকাবাহী দল, পুলিশ একাডেমির বিশেষ অশ্বারোহী দল ও সর্বশেষ বাদক দল একে একে মার্চপাস্ট করে প্রধানমন্ত্রীকে সালাম ও অভিবাদন জানান।
এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণের সময় বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী সহকারী পুলিশ সুপারদের মধ্যে ট্রফি বিতরণ করেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপাররা হলেন- বেস্ট শুটার খায়রুল কবির, বেস্ট ফিল্ড পারফমার আব্দুল্লাহ-আল-মামুন, বেস্ট হর্সম্যানশিপ সালাহউদ্দিন, বেস্ট একাডেমিক সাইফুল ইসলাম খান এবং বেস্ট প্রবেশনার সালাহ্ উদ্দিন। প্যারেডে ১৭ জন নারী অফিসারসহ ১১৭ জন শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বিভিন্ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, পুলিশের মহাপরিদর্শক জাবেদ পাটোয়ারী, পুলিশ একাডেমির প্রিন্সিপাল মো. নজিবুর রহমান, সরকারের সিনিয়র সচিব ও সচিবরা, বিদেশি কূটনীতিক, অতিরিক্ত আইজিপি, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা, পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা, রাজশাহী শহরের গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।