বিক্ষোভের জেরে তিউনিসিয়ার প্রধানমন্ত্রী বরখাস্ত

প্রকাশিত: ৩:০৪ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৬, ২০২১
সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে ভয়াবহ বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রী হিচেম মেচিচিকে বরখাস্ত করেছেন তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদ। পাশাপাশি পার্লামেন্টও স্থগিত করেছেন তিনি। সোমবার সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীকে সরানো ও পার্লামেন্ট স্থগিতের পর নিয়োগ পেতে যাওয়া নতুন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একযোগে দেশের দায়িত্ব গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট সাইদ। এ ছাড়া দেশে স্থিতিশীল পরিবেশ ফিরিয়ে আনারও অঙ্গীকার করেন তিনি। তবে প্রেসিডেন্টের এসব পদক্ষেপকে অভ্যুত্থান হিসেবে দেখেছে বিরোধীরা।

নিজের বাসভবনে নিরাপত্তা-সংক্রান্ত জরুরি বৈঠক শেষে টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনার স্বার্থে আমরা প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্ত ও পার্লামেন্ট স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

রোববার রাতে তিউনিসিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিচেম মেচিচির বরখাস্তের খবরে রাস্তায় নেমে হাজারো মানুষ আনন্দ উদযাপন করে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়ায় কয়েক দিন ধরে তিউনিসিয়ার রাজধানী তিউনিসসহ অন্য শহরগুলোতে ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করে আসছিল। তারা পার্লামেন্ট বিলুপ্তেরও আহ্বান জানায়।

রোববারও বিক্ষোভ হয়। বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে তিউনিসিয়ার ২০১১ সালের বিপ্লবে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের কেন্দ্রস্থল তিউনিসের অ্যাভিনিউ বুরগিবার আশপাশের সড়ক বন্ধ করে দেয় দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী।

তিউনিসিয়ার বেশ কয়েকটি শহরে সংঘর্ষের একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের দিকে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। ওই সময় গ্রেফতার হন অনেকে। ক্ষমতাসীন এন্নাহদা পার্টির কার্যালয়ও ভাঙচুর করে বিক্ষোভকারীরা।

পার্টি কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানায় এন্নাহদা। দেশে ‘অস্থিতিশীলতা ও ধ্বংস’ সাধনের চেষ্টারত ‘অপরাধী গোষ্ঠীকে’ দায়ী করে তিউনিসিয়ার ক্ষমতাসীন দলটি।

এদিকে বিক্ষোভকারীরা আরও সহিংস আচরণ করলে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে বলে অঙ্গীকার করেছেন প্রেসিডেন্ট সাইদ। জনগণকে সতর্ক করে তিনি বলেন, কেউ গুলি ছুড়লে সশস্ত্র বাহিনীও গুলি ছুড়বে।

তিনি আরো জানান, দেশের সংবিধান তাকে পার্লামেন্ট স্থগিতের অনুমতি দিয়েছে।

তবে তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ‘বিপ্লব ও সংবিধানের বিরুদ্ধে’ অভ্যুত্থান ঘটানোর অভিযোগ এনেছেন দেশটির পার্লামেন্টের স্পিকার রাচেদ ঘানুচি।

এন্নাহদার নেতা ঘানুচি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘দেশের পার্লামেন্ট এখনও কার্যকর বলে আমরা মনে করছি। পার্টির সমর্থক ও তিউনিসিয়ার জনগণ যেকোনো মূল্যে দেশের বিপ্লব রক্ষা করবে।’

১০ বছর আগে তিউনিসিয়ায় বিপ্লবের মাধ্যমে গণতন্ত্রের সূচনা হয়। পুরো অঞ্চলে ‘আরব বসন্ত’ ছড়িয়ে পড়ার পেছনে উত্তর আফ্রিকার দেশটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

তবে বিপ্লবের মাধ্যমে তিউনিসিয়ায় কর্মসংস্থান ও সুযোগ-সুবিধার সৃষ্টির জনগণের আশা দ্রুতই ধূলিসাৎ হয়। এক দশক ধরে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তিউনিসিয়া। সম্প্রতি করোনার প্রাদুর্ভাব দেশটির পরিস্থিতি আরও বিপর্যস্ত করে তোলে।