ধলাই ডেস্ক: কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বেড়েছে সোমেশ্বরী নদীর পানি। খরস্রোতা সোমেশ্বরীতে স্রোতে ভেসে আসছে কাঠ, লাকরিসহ উজানের ময়লা আবর্জনা।
তবে সব কিছুর মাঝেও ঢলের পানিতে প্রাণীকে ডুবতে দেখে এগিয়ে আসেন নদী তীরবর্তী এক বাসিন্দা। নৌকা নিয়ে পানির স্রোত কাটিয়ে বিড়াল ভেবে প্রাণীটিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয় পাড়ে। প্রথমে বিড়াল মনে করলেও শরীরের কালো দাগ দেখে অনেকেই বাঘ ছানা ভাবতে শুরু করেন।
মুহূর্তের মধ্যেই বাঘের ছানা উদ্ধারের খবর ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে ভিড় জমান বাঘ দেখতে। তবে প্রাণী সংশ্লিষ্টরা নিশ্চিত করেন এটি বিলুপ্তি প্রজাতির মেছো বাঘ।
আর বিলুপ্ত প্রজাতির এই মেছো বাঘটি উদ্ধার হয়েছে নেত্রকোনার দুর্গাপুর থেকে। শুক্রবার বিকেলে উপজেলার কুল্লাগড়া ইউনিয়নের রানীখং এ সোমেশ্বরী নদী থেকে প্রাণীটি উদ্ধার করেন স্থানীয় কয়লা শ্রমিক আব্দুল লতিফ।
স্থানীয়দের ধারণা, ভারতের মেঘালয়ের গারো পাহাড়ের জঙ্গল থেকে পরিবারের সঙ্গে নদীতে পানি খেতে এসে পানির স্রোতে হয়তো ভেসে চলে এসেছে। প্রাণীটি একেবারেই ছোট থাকায় সাঁতার না জানায় পানির সঙ্গে ভাসতে ভাসতে চলে আসে বহুদূর। পানিতে ডুবে মৃত্যু হওয়ার আগেই ভাগ্যক্রমে আব্দুল লতিফের নজরে আসে।
মেছো বাঘ উদ্ধারের খবর বিকেলে সেভ দা এনিমেল অফ সুসং সংগঠনের কাছে আসার পর থেকেই অবমুক্ত করতে স্থানীয় প্রশাসনের নজরে আনেন। সংগঠনটির সদস্য প্রাণীটির খোঁজে ছুটে যান রানীখং এর আব্দুল লতিফের বাড়িতে।
তারাই মানুষের ভুল ভেঙে প্রাণীটি বিলুপ্তি প্রজাতির মেছো বাঘ বলে নিশ্চিত করেন। পরে উপজেলা নিবার্হী অফিসারের সহযোগিতায় সন্ধ্যায় পর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সুব্রত সাংমার উপস্থিতিতে উপজেলা বন বিভাগের বিজয়পুর বিট কর্মকর্তা বেলাল হোসেন সরকার ও ফরেস্ট গার্ড মোহাম্মদ আবু তালেবের কাছে হস্তান্তর করেন তারা।
এদিকে উদ্ধার হওয়ার পর থেকে মেছো বাঘের ছানাটির খাবার নিয়েও চিন্তিত পড়েন স্থানীয় ও সেভ দ্য এনিমেলস অফ সুসং সংগঠনের সদস্যরা। ছোট্ট বাচ্চা থাকায় অন্যান্য প্রাণীর মতো এখনো হয়তো প্রাণীটি মায়ের দুধ পান করে বেঁচে আছে। তবে এখন মায়ের দুধের বিকল্প হিসেবে ফিটার দিয়ে প্রাণীটিকে দুধ পান করানো হবে বলেও জানান বন বিভাগের কর্মকর্তারা।
আব্দুল লতিফ জানান, বিকেলে নদী থেকে কয়লা তোলার কাজ করছিলাম। এমন অবস্থায় হঠাৎ নদীর মাঝে ছোট্ট একটি প্রাণীকে ভেসে যেতে দেখি। প্রাণীটি পানিতে মরে যাবে ভেবে স্রোতের মাঝেই নৌকা দিয়ে উদ্ধার করে পাড়ে নিয়ে আসি। বিড়াল ভাবলেও পারে আনার পরই মনে হল এটি বিড়াল না। স্বাভাবিক বিড়ালের থেকে এর গায়ের রং অন্যরকম। অন্যরা দেখে বললো এটি বাঘের বাচ্চা হতে পারে। তাই সেটি নিয়ে আমার বাড়িতে রাখি। অনেকেই বাঘের বাচ্চা ভেবে বাড়িতে এসে ভিড় করতে থাকে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজিব উল আহসান জানান, দুর্গাপুর একটি সীমান্তবর্তী ও পাহাড়ে ঘেরা উপজেলা। এখানে প্রায় সময়ই বন্যপ্রাণী উদ্ধার হয়। প্রাথমিকভাবে প্রাণীগুলো সুস্থ না থাকলে পরিচর্চার পরেই বনে এইগুলো অবমুক্ত করা হয়। যেহেতু উদ্ধার হওয়া প্রাণীটি বিলুপ্ত প্রজাতির মেছো বাঘের ছানা তাই আমরা বিষয়টি মাথায় রেখে প্রাণীটিকে পরিচর্যা করে আবারো বনে অবমুক্তের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
সূত্র: ডেইলী বাংলাদেশ…