ভরা যৌবনে ফিরেছে বুড়িগঙ্গা

প্রকাশিত: ৫:০৯ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৯, ২০২০
ছবি সংগৃহীত

ধলাই ডেস্ক: বর্ষার পানিতে দূষণের কালো রং ফিকে নতুন সাজে সেজেছে বুড়িগঙ্গা নদী। এ যেন কালের ছলে বুড়িগঙ্গা চিরচেনা রূপ বদলে ফিরে পেয়েছে হারানো যৌবন। বর্ষার পরিষ্কার পানিতে বুড়িগঙ্গা নদী টলটল করছে। এতে প্রাণ ফিরে পেয়েছে বুড়িগঙ্গা।

বর্ষাকাল এলেই বুড়িগঙ্গা নদীর চিরচেনা রূপ পাল্টে যায়। নদীর পানিও ব্যবহারের উপযুক্ত হয়ে উঠায় মানুষের কাছে চাহিদাও বাড়ে। বুড়িগঙ্গা পাড়ের নিম্ন আয়ের বেশিরভাগ মানুষ নদীর পানিতে এখন গোসল করছে। অথচ বছরের অন্য সময় এ পানিতে কেউ পা রাখতেও চায় না। কারণ ঢাকা শহরের মিল কারখানার বর্জ্য, গার্মেন্টসের পচাসুতা, ডাইয়িংয়ের বিষাক্ত রং, শ্যামবাজরের পঁচা শাকসবজির আবর্জনা বৃষ্টির পানিতে মিশে নদীকে বিষাক্ত করে তোলে। ফলে বুড়িগঙ্গার পানি হয়ে ওঠে প্রাণঘাতী। প্রয়োজনীয় কাজে মানুষ নদী দিয়ে যাতায়াত করলে নাক চেপে ধরে যেত।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এবারের বিপুল বর্ষণ, নদীতে পানি বৃদ্ধি, হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি স্থানান্তর— এসব মিলে এ মুহূর্তে বুড়িগঙ্গায় দূষণের পরিমাণ কম। কারখানার বর্জ্য, ডাইয়িংয়ের বিষাক্ত রং, কারখানার দূষণ রুখতে পারলে নদীর পানির আরো উন্নতি হবে।

সারা বছর ঢাকার বর্জ্যের পানি শোষণ করে বিষাক্ত জলাধারে পরিণত হয়। তবে বর্ষাকাল এলে বুড়িগঙ্গা তার পূর্বের রূপ অর্থাৎ পরিপূর্ণ যৌবন ফিরে পায়। পরিষ্কার পানিতে থইথই করে নদী।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শ্যামবাজার সংলগ্ন মিল ব্যারাক পুলিশ লাইন থেকে সুত্রাপুরের সুয়ারেজ দিয়ে বর্জ্য পানি বুড়িগঙ্গায় প্রবেশ করছে। আর কেরানীগঞ্জের বাবুবাজার, আলম টাওয়ার নৌকা ঘাট, তেল ঘাট, ডকের নৌকা ঘাট, গার্মেন্টস, ওয়াস ও ডাইয়িংয়ের বিষাক্ত রং নদীতে মিশলেও বর্ষার কারণে ময়লা পানি চোখে পড়ছে না। বছরের পুরো সময় বুড়িগঙ্গার পানির রং থাকে কালো ও দুর্গন্ধময়। পানির বিষাক্ত গন্ধে চরম দুর্ভোগে পড়ে আশপাশের মানুষ। জীবনযাপন দুর্বিষহ হয়ে পড়ে।

শুক্রবার বিকেলে পোস্তগোলা সেতু, মিল ব্যারাক পুলিশ লাইন, শ্যামবাজার, অপরদিকে, বাবুবাজার ব্রিজ,আলম টাওয়ারের পাড় ঘেঁষে নদীর বেড়িবাঁধে বসে অনেককে আড্ডা দিতে দেখা গেছে। সবাই যেন মুগ্ধ চোখে বুড়িগঙ্গা নদীর পূর্ণ যৌবন অবলোকন করছেন। নদীর পরিষ্কার পানি আর কচুরিপনা ঢেউয়ের সঙ্গে খেলা করছে।

তেল ঘাট নৌকার মাঝি সানু মিয়া প্রায় ১০ বছর ধরে নৌকা চালান। তিনি বলেন, এখন তো বুড়িগঙ্গা নদীতে গন্ধ নাই। পানি পরিষ্কার থাকায় আমরা গোসলও করি।

শ্যামবাজার ও মিল ব্যারাক পুলিশ লাইনের বেড়িবাঁধে ঘুরতে আসা খাইরুল ইসলাম বলেন, নদীর পানি দেখার জন্য মাঝে মাঝে এখানে আড্ডা দিতে আসি। শুক্রবার হওয়ায় বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিতে আসলাম। এখন নদীর পানিতে গন্ধ নেই এজন্য আরো বেশি ভালো লাগছে।

খায়রুল ইসলামের মতো অনেকেই এসেছেন বুড়িগঙ্গার এই সুন্দর দৃশ্য দেখতে।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, বুড়িগঙ্গা নদীর দু’পাড় ঘিরে অপরিকল্পিতভাবে অসংখ্য ছোট ছোট কল কারখানা,গার্মেন্টস গড়ে উঠেছে এগুলো বর্জ্য ও রং নদীর পানিতে মিশে দূষিত করে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তুলতে হবে। যেন পরিবেশ দূষণ না হয়। দিন দিন কলকারখানা, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি বাড়ছে সেইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পরিবেশ দূষণ। তাই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে ইন্ডাস্ট্রি গড়তে না পারলে দূষণ থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব না। দূষণ রোধ, নদীকে রক্ষা করার জন্য সরকার সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

সূত্র: ডেইলী বাংলাদেশ…