মসজিদের ভেতর আরেক মসজিদ

প্রকাশিত: ৪:২৭ অপরাহ্ণ, মে ২, ২০২১
সংগৃহীত

ধর্ম ডেস্ক: নারায়ণগঞ্জ শহরের মণ্ডলপাড়ায় এক গম্বুজবিশিষ্ট একটি মসজিদ আছে। স্থানীয়দের কেউ এটিকে জিনের মসজিদ বলেন, আবার কেউ বলেন গায়েবী মসজিদ।

৫৩৯ বছরের পুরোনো মসজিদটি মণ্ডলপাড়া জামে মসজিদের ভেতরে অবস্থিত। এ কারণে দীর্ঘদিন ধরেই রয়ে গেছে লোকচক্ষুর অন্তরালে। এ শাহী মসজিদ নির্মিত হয়েছিল ১৪৮২ খ্রীস্টাব্দে সুলতান জালালুদ্দীন ফতেহ শাহ’র আমলে। সে সময় নারায়ণগঞ্জের বন্দরেও নির্মিত হয়েছিল একই ধরনের আরেকটি শাহী মসজিদ। সেটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ত্ব অধিদফতর পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণ করলেও মণ্ডলপাড়ার শাহী মসজিদটির বিষয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের কোনো নজরদারি নেই।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মণ্ডলপাড়া জামে মসজিদের অভ্যন্তরে এক কোণে রয়েছে ছোট আকারের এক গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটি। এটির গায়ে নির্মাণের সালের জায়গায় লেখা ১৪৮২ খ্রিষ্টাব্দ। স্থানীয়রা জানায়, মসজিদটি তারা জন্মের পর থেকেই দেখে আসছে।

এটিকে জিনের মসজিদ-গায়েবী মসজিদ হিসেবে আখ্যায়িত করলেও মুসল্লিরা জানিয়েছেন- মসজিদটিকে মুঘল আমলে নির্মিত শাহী মসজিদ। পশ্চিম দেওভোগ পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আহাম্মদ আলী ব্যাপারী জানান, তিনি মসজিদটির নির্মাতাদের বংশধর। তাদের বংশের পূর্বপুরুষ মুঘল আমলে কাজী ছিলেন।

মণ্ডলপাড়া মসজিদের মুসল্লিরা জানান, এক গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটি আগে অনেক উঁচু ছিল কিন্তু কালের বিবর্তনে আশপাশের এলাকা উচু হওয়ায় মসজিদটি এখন নিচু হয়ে গেছে। স্থাপনার অনেক অংশ এখন মাটির নিচে চলে গেছে। ছোট মসজিদটিতে তিনটি কাতারে ২১ জন নামাজ আদায় করতে পারেন। এই ছোট মসজিদে জিনেরা নামাজ আদায় করে বলে জনশ্রুতি রয়েছে।

উইকিপিডিয়া সূত্রে জানা গেছে, শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ’র নামে বাংলায় ইলিয়াস শাহী বংশের সূচনা ঘটে। ইলিয়াস শাহী বংশের দ্বিতীয় পর্বের সর্বশেষ সুলতান ছিলেন জালালুদ্দিন ফতেহ শাহ। তিনি ১৪৮১ থেকে ১৪৮৭ সাল পর্যন্ত সুলতান ছিলেন। ফতেহ শাহ কর্তৃক পরিচালিত কোনো সামরিক অভিযানের বর্ণনা পাওয়া যায়নি। তবে মুদ্রা সংক্রান্ত তথ্য থেকে জানা যায় যে- তার রাজ্য পূর্বে সিলেট ও দক্ষিণ পশ্চিমে দামোদর নদ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

জালালুদ্দীন ফতেহ শাহ’র শাসনামলে হাবশি বংশ রাজ দরবারে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী অবস্থান লাভ করে। ১৪৮৭ সালে তাকে হত্যা করে বাংলায় হাবশি বংশের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করে হাবশি প্রাসাদ রক্ষীদের প্রধান। ফতেহ শাহ’র মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ইলিয়াস শাহী বংশের শাসনের সমাপ্তি হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৪৮২ খ্রীস্টাব্দে (৮৮৬ হিজরি) সুলতান জালালুদ্দীন ফতেহ শাহ’র শাসনামলে নারায়ণগঞ্জ শহর ও বন্দরে এক গম্বুজবিশিষ্ট দুটি শাহী মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল। যার একটি শহরের মণ্ডলপাড়ায়, অপরটি বন্দরের সালেহনগরে অবস্থিত। শাহী মসজিদ দুটি সুলতান জালালুদ্দীন ফতেহ শাহ’র শাহী-কর্মকর্তা মালিক আল-মুয়াজ্জম বাবা সালেহ ইয়ামেনী (র.) নির্মাণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন মক্কার উচ্চবংশীয় একজন মহাজের। সুলতান জালাল উদ্দিন ফতেহ শাহ’র রাজত্বকালে তিনি রাজপদস্থ কর্মচারী ছিলেন। আল-মুয়াজ্জম বাবা সালেহ ইয়ামেনী (র.) বন্দরেই ইন্তেকাল করেন। তার মাজার এখানেই অবস্থিত। এ মহান ব্যক্তির নামেই এলাকার নাম রাখা হয়েছে সালেহনগর।

বন্দরের শাহী মসজিদের চার কোণে চারটি মিনার এবং একটি বিশাল আকৃতির গম্বুজ রয়েছে। মসজিদের বাইরের দিকের দেয়ালে এখনো রয়েছে শিলালিপি। মসজিদটি বর্গাকার। অভ্যন্তর ভাগে ৬.২০ মিটার এবং বহির্ভাগে ৯.৭০ মিটার। মসজিদটিতে তিনটি নকশাখচিত অর্ধবৃত্তাকার মেহরাব আছে। মাঝখানের মেহরাবটি অন্য দুটির তুলনায় বড়। মসজিদটি ঘিরে গড়ে উঠেছে তিনতলাবিশিষ্ট নতুন মসজিদ ও মাদরাসা। মূল মসজিদটি এখন আর ব্যবহৃত হয় না। দক্ষিণে রয়েছে চতুর্ভূজ একটা ঐতিহ্যবাহী পুকুর যা মসজিদের আওতাধীন। পুকুরটি চতুর্দিকে সিঁড়িঘাট বেষ্টিত। পুকুরটিও দিনদিন ভরাট হয়ে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।