মায়ের নিখোঁজ সংবাদ শুনে ২৩০ কিঃমিঃ পথ বাইসাইকেল চালিয়ে ছেলে ফিরলো বাড়ি ! ৫ দিনে ও মিলেনি মায়ের সন্ধান

প্রকাশিত: ৬:০৮ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২, ২০২১
ছবি ধলাইর ডাক

স্টাফ রিপোর্টার: গর্ভধারিণী মায়ের নিখোঁজ সংবাদ কোন সন্তান সাধারণত মেনে নিতে পারেনা। মুঠোফোনে মায়ের নিখোঁজ সংবাদ শুনে করনোর লকডাইনের কারনে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় শনিবার রাতে ঢাকার কর্মস্থল থেকে ২৩০ কিঃমিঃ পথ বাইসাইকেল চালিয়ে নিজ বাড়ি কমলগঞ্জের উদ্দ্যেশে যাত্রা করে সোহেল আহমেদ (২৮) নামে এক যুবক। বিরামহীন ভাবে প্রায় ১৪ ঘন্টা সাইকেল চালানোর পর কমলগঞ্জ লঙ্গুরপাড় গ্রামের বাড়ীতে রবিবার পৌঁছায় সোহেল। ঘটনাটি ঘটেছে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার লংগুরপাড় এলাকায়।

জানা যায়, উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের লংগুরপাড় গ্রামের মানিক মিয়ার স্ত্রী ও মাধবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. আসিদ আলির ছোট বোন হাজেরা বিবি অরপে কুঠিল (৪৮)।

গত বুধবার রাতে একই গ্রামে অবস্থিত বড় ভাই আসিদ আলির বাড়ি থেকে রাতের খাবার খেয়ে হাজেরা বিবি প্রতিবেশি রকিব মিয়ার বাড়িতে রাত্রি যাপন করেন। বৃহস্পতিবার ভোরে ঘুম থেকে উঠে রকিব মিয়ার স্ত্রীকে চা বানানো কথা বলে ঘর থেকে বেড়িয়ে যান। রকিব মিয়ার স্ত্রী চা তৈরী করলেও হাজেরা বিবি আর আসেননি। এদিকে সকাল পেরিয়ে দুপুর গড়িয়ে গেলে ও হাজেরা বিবি বাড়িতে না ফেরায় হাজেরার ছেলের ঘরের নাতিন শাম্মী (১০) বাড়ীর পার্শেই দাদা আসিদ আলির বাড়িতে গিয়ে দাদীর খোঁজ করে।

আওয়ামীলীগ নেতা আসিদ আলি বলেন, নাতিনের মুখে দাদী বাড়ি ফিরেননি শুনে নাতিনকে সাথে নিয়ে বোনের বাড়িতে গিয়ে দেখি দরজা তালাবদ্ধ, বাহিরের বাতি জ্বলছে। অন্য ঘরে গাভী গুলোও ডাকাডাকি করছে। তখন তিনি আশপাশ এলাকাল বাড়ি-ঘর গুলোতে খোঁজা খুঁজির এক পর্যায়ে প্রতিবেশী রকিব মিয়ার স্ত্রী তাকে জানান, রাতে হাজেরা বিবি তাদের বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন, ভোরে চা বানিয়ে রাখতে বলে ঘর থেকে বেড় হয়ে আর ফিরে আসেনি। পরে সম্ভাব্য সব আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে খোঁজ নিয়েও কোন সন্ধান না পেয়ে গত শুক্রবার বিকালে কমলগঞ্জ থানায় সাধারণ ডাইরি নং (১৩৬৮) করেন আসিদ আলি।

শনিবার মুঠোফোনে ঘটনাটি ঢাকায় অবস্থানকারী আসিদ আলী তার ভাগিনা (হাজেরার ছেলে) সোহেল আহমেদকে জানান। সোহেল মায়ের নিখোঁজ হওয়ার খবর শুনে করোনার কারনে লকডাউনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় নিজেই বাইসাইকেল চালিয়ে ঢাকা থেকে রওয়ানা দিয়ে ১৪ ঘন্টা পর কমলগঞ্জের লংগুরপাড়স্থ গ্রামের বাড়িতে আসে। সোহেল বাড়ি পৌঁছেই লোকজন নিয়ে রোববার সারাদিন বাড়ীর আশপাশের প্রায় ৫ কিঃমিঃ এলাকার ঝোঁপঝাড়, খাল,ডোবা , পুকুর সব আতœীয় স্বজনের বাড়ী সমুহ তন্নতন্ন করে খোঁজ করেও মা হাজেরা বিবির কোন সন্ধান পাননি।

সোহেলের খালাতো ভাই ভানুগাছ চৌমুহনীস্থ সিএনজি চালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম মিয়া জানায়, প্রায় ২০/২৫ বছর আগেও একই ভাবে তার খালু সোহেলের পিতা মানিক মিয়াও নিখোঁজ হয়েছিলেন। যার সন্ধান এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

কমলগঞ্জ থানার ওসি তদস্ত সোহেল রানা সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, থানায় সাধারণ ডাইরি করা হয়েছে। নিখুঁজ হওয়া গৃহবধুকে খোঁজে বের করার চেষ্টা চলমান রয়েছে।