আন্তর্জাতিক ডেস্ক: রোহিঙ্গাদের গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার করা মামলার রায় বৃহস্পতিবার ঘোষণা করবে আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে)।
আন্তর্জাতিক বিচার আদালত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
গাম্বিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল ও বিচারমন্ত্রী আবু বকর তামবাদু গত ১১ নভেম্বর জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর অভিযোগ আনেন তিনি।
আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা নিষ্পত্তি হতে দীর্ঘ কয়েক বছর সময় প্রয়োজন। তাই মিয়ানমারের বিরুদ্ধে করা ওই মামলায় গাম্বিয়া মূল বিচার শুরুর আগে অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপের জন্য আইসিজের কাছে আবেদন করে। এ বিষয়ে গত ১০ থেকে ১২ ডিসেম্বর নেদারল্যান্ডসের হেগে শুনানি হয়।
রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা প্রদান ও রাখাইনে গণহত্যার আলামত নষ্টের বিভিন্ন অভিযোগের ওপর এই শুনানি হয়। রোহিঙ্গাদের সুরক্ষার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দিতে আদালতের প্রতি আহ্বান জানায় পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পক্ষে মামলা করা গাম্বিয়া মিয়ানমারের গণহত্যার আচরণ অবিলম্বে বন্ধ করার ব্যবস্থা বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতকে জরুরিভাবে আদেশ দেয়ার আহ্বান জানায়।
গাম্বিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল ও বিচারমন্ত্রী আবু বকর তামবাদু ওই সময় এক বিবৃতিতে বলেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের চালানো গণহত্যার বিচার ও জবাবদিহি চাইতে এবং গণহত্যার বিরুদ্ধে বৈশ্বিক আচরণ যা সব রাষ্ট্রের জন্য বাধ্যতামূলক তাকে সমর্থন ও জোরদার করতে গাম্বিয়া এ পদক্ষেপ নিচ্ছে।
তবে মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চি গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগে করা মামলাটি অসম্পূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর। তিনি দাবি করেন, এ বিষয়ে মামলা পরিচালনার এখতিয়ার জাতিসংঘের আদালতের নেই। গণহত্যার অভিযোগ খারিজ করতে বিচারককে তিনি আহ্বান জানান।
শুনানি শেষে এক বিজ্ঞপ্তিতে আইসিজে জানান, যথাযথ সময়ে একটি বৈঠকের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপের নির্দেশনার আবেদনের বিষয়ে আইসিজে সিদ্ধান্ত জানাবেন।
আইসিজেতে ওই তিন দিনের শুনানিতে উপস্থিত হয়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা গাম্বিয়ার আইনজীবীদের পাশাপাশি জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। মামলার গতি প্রক্রিয়া সম্পর্কে আইন বিশেষজ্ঞ ও আইসিজে কর্মকর্তাদের বিশ্লেষণ শোনেন।
তাদের বরাত দিয়ে বাংলাদেশের একাধিক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক জানান, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়া ছয়টি অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপের নির্দেশনা চেয়েছে। তবে এর সব পাওয়া যাবে কি না, সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে রাখাইনের গণহত্যা নিয়ে মিয়ানমারের বক্তব্য যে স্ববিরোধী, সেটা সবার কাছে স্পষ্ট। অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপের ব্যাপারে আদালত খুব বেশি সময় নেবেন না।
২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে সেনাবাহিনীর অভিযানে যে বর্বরতা চালানো হয়, তার মধ্য দিয়ে ১৯৮৪ সালের আন্তর্জাতিক গণহত্যা কনভেনশন ভঙ্গ করার অভিযোগ আনা হয় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে। ওই সময় হত্যাকাণ্ড, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের বাস্তবতায় জীবন বাঁচাতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে সাত লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা।