শমশেরনগর মুক্ত দিবস পালিত

প্রকাশিত: ৬:৫৫ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩, ২০১৯
ছবি ধলাইর ডাক

কমলগঞ্জ প্রতিনিধি: শোভাযাত্রা, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থান দর্শন ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিচারণের মধ্য দিয়ে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর মুক্ত দিবস পালিত হয়েছে।

শমশেরনগর সাহিতাঙ্গণের উদ্যোগে ৩ শতাধিক কলেজ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহনে শোভাযাত্রা শেষে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থান শমশেরনগর ডাক বাংলোর ঐতিহাসিক বটবৃক্ষের তলায় মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধের স্মৃতিচারণ করলেন। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) বেলা ১.৩০ টায় শমশেরনগর সাহিত্যাঙ্গন এর উদ্যোগে শমশেরনগর সুজা মেমোরিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী ও এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকদের অংশগ্রহণে প্রায় ২ কিলোমিটার পথ শোভাযাত্রা করে স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে যোগ দেয়।

বেলা ২টায় শমশেরনগর ডাক বাংলোর ঐতিহাসিক বট বৃক্ষের তলায় কলেজ শিক্ষার্থী, মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিকদের অংশ গ্রহনে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান শুরু হয়। শুরুতেই ৩ ডিসেম্বর শমশেরনগর মুক্ত দিবস ও শমশেরনগর ডাক বাংলোয় ১৯৭১ সালের কক্ষ সম্পর্কে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শমশেরনগর সাহিতাঙ্গনের প্রধান ও সুজা মেমোরিয়াল কলেজ অধ্যক্ষ ম. মুর্শেদুর রহমান। কবি ও প্রভাষক শাহাজাহান মানিকের সঞ্চালনায় স্মৃতিচারণমুলক বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাঃ (অব:) সাজ্জাদুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা নির্মল দাশ, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই, লেখক ও গবেষক অধ্যক্ষ রসময় মোহান্ত, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও ১৯৭১ সালে শমশেরনগর ডাক বাংলোয় নির্যাতেন শিকার শহীদ পরিবার সদস্য সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মছব্বির, সাংবাদিক মুজিবুর রহমান রঞ্জু প্রমুখ।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণমূলক সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ধলাই সাব সেক্টরে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমানের সহযোদ্ধা বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন (অবঃ) সাজ্জাদুর রহমান নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতার চেতনায় এগিয়ে যেতে অত্যন্ত আবেগ আপ্লুত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত গল্প বলেন। ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী আর তাদের দোসরদের টর্চার সেল শমশেরনগর ডাকবাংলো ও বটগাছের ইতিহাস তুলে ধরেন। বক্তারা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে সারা দেশের মধ্যে শমশেরনগর ই সর্ব প্রথম পরিকল্পিত সম্মূখ সমরে ১১জন পাক সেনাকে হত্যা করে ও পাকিস্তানি পতাকা পুড়িয়ে গর্বিত ইতিহাস রচনা করেন। মুক্তিযোদ্ধা ও অন্যান্য বক্তারা সরকারের কাছে জোর দাবি জানান, আজও ইতিহাসের স্বাক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বট বৃক্ষ, রয়েছে ডাক বাংলো ও নির্যাতন কক্ষ। এগুলো সংরক্ষণের পাশাপাশি এখানে একটি স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করার দাবি জানানো হয় সরকারের কাছে।

স্মৃতিচারণ মূলক আলোচনার শুরুতে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

উল্লেখ্য, ১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধ শুরুর মুহুর্তে ২৮ মার্চ সর্ব প্রথম মুক্তিযোদ্ধারা পাক সেনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন গোলাম রসুলসহ ৯জন পাক সেনাকে হত্যা করেছিল শমশেরনগরে। এরপর দীর্ঘ নয় মাস পাক সেনারা শমশেরনগরে শক্ত ঘাটি স্থাপন করে নারকীয়ভাবে নির্যাতন পরিচালনা করে অসংখ্য মানুষ হত্যা করেছিল স্থানীয় বিমান বন্দরের রানওয়ের বধ্যভূমিতে। এখানে পাক সেনাদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের তুমুল সংঘর্ষ হয়েছিল। অবশেষে মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা হামলায় ঠিকে থাকতে না পেরে পাক সেনারা ৩ ডিসেম্বর শমশেরনগর ছেড়ে মৌলভীবাজার জেলা সদরের দিকে পিছু হটেছিল।