ধলাই ডেস্ক: মাদারীপুরের তাজ বিড়ি ফ্যাক্টরির মালিক নুরু মাতুব্বর। এ ব্যবসায়ী এক সময় ছিলেন কোটিপতি। কিন্তু সন্তানদের অবহেলায় আজ তিনি অসহায়। সব সম্পত্তি লিখে নিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে ছেলে-মেয়েরা। ১৫ বছর ধরে বাড়িছাড়া হয়ে আছেন তিনি। অর্থাভাবে উন্নত চিকিৎসা না পেয়ে পড়ে আছেন হাসপাতালের মেঝেতে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ছয়দিন ধরে মাদারীপুর সদর হাসপাতালের মেঝেতে পড়ে আছেন নুরু মাতুব্বর। এখন পর্যন্ত তার খোঁজ নিতে আসেনি ছেলে-মেয়ে কিংবা পরিবারের কেউ। চিকিৎসকরা বলছেন, জরুরি ভিত্তিতে উন্নত চিকিৎসা না পেলেকে নুরু মাতুব্বরকে বাঁচানো কষ্টসাধ্য হবে।
জানা গেছে, কোটিপতি ব্যবসায়ী ও মাদারীপুর সদর উপজেলার ঝিকরহাটি গ্রামের নুরু মাতুব্বর। স্ত্রী, এক ছেলে ও তিন মেয়ে নিয়ে তার সুখী পরিবার ছিল। ১৫ বছর আগে নিজের সব সম্পত্তি ছেলে-মেয়েদের লিখে দেন তিনি। এরপর আর তার খোঁজ নেয়নি সন্তানরা। অসুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি চরমুগুরিয়া বাজারে একটি দোকানে নৈশপ্রহরীর কাজ করতেন। ওই দোকানের মালিক তাকে তিন বেলা খাবার দিতেন। এছাড়া খাবারের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারেও ঘুরেছেন নুরু মাতুব্বর।
নুরু মাতুব্বরের প্রতিবেশীরা জানান, কয়েক বছর আগে বন্ধ হয়ে যায় চরমুগরিয়ার তাজ বিড়ি ফ্যাক্টরি। পরে বাড়ি বিক্রি করে ছেলে আবু সাইদকে লন্ডনে পাঠান নুরু মাতুব্বর। লন্ডন থেকে ফিরে বিয়ে করে ঢাকায় ব্যবসা শুরু করেন আবু সাইদ। তার তিন বোনেরও বিয়ে হয় সম্ভ্রান্ত পরিবারে। বিয়ের উপহার হিসেবে ছেলে-মেয়েদের বিঘার পর বিঘা জমি লিখে দেন নুরু মাতুব্বর। সেই থেকে বাড়ি ছাড়া হয়ে আছেন তিনি। বাঁচার তাগিদে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন, চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে। কিন্তু অর্থাভাবে পড়ে আছেন মেঝেতে।
হাসপাতালের কর্মীরা জানান, রোববার মুমুর্ষ নুরু মাতুব্বরকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে যায় অজ্ঞাত এক ব্যক্তি। প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হলেও অর্থের অভাবে উন্নত চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ছয়দিন ধরে এভাবেই পড়ে আছেন তিনি। পরিবারের কেউ একবারের জন্যও খোঁজ নেয়নি।
নুরু মাতুব্বরের বড় মেয়ে তাজ নেহার বলেন, বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করছে তাই আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি না।
আরেক মেয়ে শামসুর নাহার চৈতী বলেন, পারিবারিক ঝামেলার কারণে বাবার সঙ্গে যোগাযোগ অনেকটাই বিচ্ছিন্ন। আমারা মাকে নিয়ে আমাদের মতো করে থাকি।
মাদারীপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মনিরুজ্জামান পাভেল বলেন, আমরা তাকে সাধ্যমতো প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিচ্ছি। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দুইদিন আগে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে রেফার করেছিলাম। কিন্তু স্বজনরা কেউ না আসায় তাকে ফরিদপুর নেয়া যাচ্ছে না। এখন উন্নত চিকিৎসা, পারিবারিক যত্ন ও ভালো খাবার না পেলে নুরু মাতুব্বরকে বাঁচানো মুশকিল হবে।
মাদারীপুর সদরের ইউএনও মো. সাইফুদ্দিন গিয়াস বলেন, পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা আসেনি শুনে আমি বুধবার নুরু মাতুব্বরকে দেখে এসেছি। তার ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তার সন্তানদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।