সীমান্ত বন্ধের হুমকি থেকে সরে এলেন ট্রাম্প

প্রকাশিত: ৩:৫৪ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৩, ২০১৯

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলে মেক্সিকোসংলগ্ন সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা থেকে এক পা সরে এলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত শুক্রবার ট্রাম্প হুমকি দিয়েছিলেন, অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে মেক্সিকো কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে এই সপ্তাহে সীমান্ত বন্ধ করে দেবেন। তবে জানা গেছে, এতে সীমান্ত দিয়ে আসা পণ্য সরবরাহ–প্রক্রিয়ায় ব্যাপক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে জানিয়ে ট্রাম্পকে ব্যবসায়ীরা সতর্ক করলে তিনি ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল মঙ্গলবারও ট্রাম্প সীমান্ত বন্ধের হুমকি দিয়েছেন। তবে কবে নাগাদ তা করবেন, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেননি বলে জানান। এই সপ্তাহে কার্যকরের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে তিনি বলেন, ‘আগামী কয়েক দিন কী ঘটে তা আমরা দেখতে চাইছি।’

খবরে বলা হয়, সীমান্ত বন্ধ করে দিলে কোটি কোটি ডলার মূল্যের লাখ লাখ বৈধ পণ্যও যুক্তরাষ্ট্রে আসা বন্ধ হয়ে যাবে। গাড়ি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলো হোয়াইট হাউসকে গোপনে সতর্ক করেছে, সীমান্ত বন্ধ করে দিলে কয়েক দিনের মধ্যে তাদের কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ তাদের প্রয়োজনীয় বিপুলসংখ্যক যন্ত্রাংশ মেক্সিকো থেকে আনা হয়।
মার্কিন চেম্বার অব কমার্সের শীর্ষ লবিস্ট নেইল ব্র্যাডলি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা দেশজুড়ে নেতিবাচক অর্থনৈতিক প্রভাব ফেলতে পারে’ জানিয়ে তাঁরা এ বিষয়ে আলোচনার জন্য হোয়াইট হাউসের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন।

গত সোমবার মেক্সিকো সরকার জানিয়েছে, অভিবাসন প্রবাহের বিষয়টিতে তারা নজরদারি রাখবে। মধ্য আমেরিকা থেকে আসা অবৈধ অভিবাসীদের ঠেকাতে মেক্সিকোর এই পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন ট্রাম্প। এ ব্যাপারে স্থানীয় সময় গতকাল সকালে ট্রাম্প বলেছেন, ‘তারা (মেক্সিকো) বলেছে তারা তাদের (অবৈধ অভিবাসী) থামাতে যাচ্ছে। দেখা যাক। তাদের থামানোর ক্ষমতা রয়েছে। এটা থামানোর জন্য তাদের আইন রয়েছে।’
মেক্সিকো সরকার কতসংখ্যক অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেপ্তার করেছে সে সম্পর্কে কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি। তবে হোয়াইট হাউসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গ্রেপ্তারের সংখ্যাসহ এ বিষয়ে প্রতিদিন ট্রাম্প প্রশাসনকে সবশেষ তথ্য জানিয়ে যাচ্ছে মেক্সিকো।

মেক্সিকো ও মধ্য আমেরিকা থেকে আসা অবৈধ অভিবাসীদের ঠেকানো ট্রাম্পের নির্বাচনী অ্যাজেন্ডার মূল বিষয় ছিল। তবে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যবহৃত সীমান্তটি বন্ধ করে দেওয়া তত সহজ কাজ নয়। এমনকি রিপাবলিকান অনেক নেতারাও এতে সমর্থন দেন না।
রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ সিনেটের নেতা মিচ ম্যাককনেল ট্রাম্পের এমন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সতর্ক করে ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে সুর বেঁধেছেন। গতকাল তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সীমান্ত বন্ধ করে দিলে তা দেশের অর্থনীতিতে আকস্মিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া ঠিক হবে না।

জেনারেল মোটরস কো, ফোর্ড মোটর কো এবং ফিয়াট ক্রাইসলার অটোমোবাইলস এনভি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সীমান্তে বাণিজ্য বন্ধে যেকোনো পদক্ষেপ মার্কিন অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হবে, বিশেষ করে গাড়ি নির্মাণশিল্পে।
সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে বেশ কয়েকটি মার্কিন যানবাহন, ইঞ্জিন, ট্রান্সমিশন ও গাড়ি নির্মাণের অন্যান্য যন্ত্রাংশ নির্মাণ কারখানা প্রয়োজনীয় উপাদানের অভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। মার্কিন পরিবেশকদের শোরুমের জন্য মেক্সিকোতে নির্মাণ করা হাজার হাজার গাড়ির সরবরাহও বন্ধ হয়ে যাবে।

গাড়ি নির্মাতারা ২০১৮ সালে মেক্সিকোতে তৈরি প্রায় ২৬ লাখ গাড়ি যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করেছে। এটা যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্রি হওয়া মোট গাড়ির ১৫ শতাংশ। শিভ্রোলেট ব্লেজার এসইউভির (স্পোর্ট ইউটিলিটি ভেহিকল) মতো কিছু গাড়ি শুধু মেক্সিকোতেই তৈরি হয়। #প্রথম আলো