ধলাই ডেস্ক: স্কুলছাত্রীকে উত্ত্যক্তের অভিযোগে পাবনা সদর উপজেলার ভাঁড়ারা ইউনিয়নের মধ্য জামুয়া গ্রামে এক কিশোরকে (১৫) মধ্যযুগীয় কায়দায় শাস্তি দিয়েছেন গ্রাম্য সালিশদাররা।
ভাঁড়ারা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গত বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সালিশ-বৈঠকে ওই কিশোরকে বেধড়ক মারধর করা হয়। পরে তার মাথার চুল কেটে গলায় জুতার মালা পরিয়ে এলাকায় ঘোরানো হয়। নির্যাতনের শিকার ওই কিশোর একই এলাকার মঞ্জু শেখের ছেলে এবং স্থানীয় একটি দোকানের কর্মচারী।
এরই মধ্যে এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেই সঙ্গে শুরু হয় সমালোচনা। বিষয়টি নজরে এলে ঘটনার তদন্তে নামে পুলিশ। পাশাপাশি নির্যাতনের শিকার কিশোরের বাবা বাদী হয়ে পাবনা সদর থানায় সাতজনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেন। মামলায় অভিযুক্ত তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত সোমবার সকালে ভাঁড়ারা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রী প্রাইভেট পড়তে এলে বিদ্যালয়ের মাঠে তাকে উত্ত্যক্ত করে ওই কিশোর।
বিষয়টি পরিবারকে জানায় স্কুলছাত্রী। ঘটনার দুদিন পর গত বুধবার সকালে বিদ্যালয়ের মাঠে সালিশ-বৈঠক ডাকা হয়। সেখানে ওই কিশোরকে লাঠি দিয়ে পেটান গ্রাম্য সালিশদাররা। পরে তার মাথার চুল কেটে গলায় জুতার মালা পরিয়ে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘোরানো হয়।
একপর্যায়ে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ওই কিশোরকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা। গোপন স্থানে রেখে তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়। স্থানীয় প্রভাবশালীদের ভয়ে বিষয়টি পুলিশকে জানাতে পারেনি ভুক্তভোগী পরিবার।
এদিকে, মধ্যযুগীয় কায়দায় কিশোরকে শাস্তি দেয়ার বিষয়টি ফেসবুকে ভাইরাল হলে ঘটনার তদন্তে নামে পুলিশ। অবশেষে পুলিশের সহায়তায় নির্যাতিত কিশোরের বাবা বাদী হয়ে পাবনা সদর থানায় মামলা করেন। মামলায় এজাহারভুক্ত সাত আসামির মধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গ্রেফতাররা হলেন- ভাঁড়ারা মধ্য জমুয়া গ্রামের মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে ভাঁড়ারা উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. আনিসুর রহমান, চক ভাঁড়ারা গ্রামের ইউপি সদস্য মৃত হোসেন আলীর ছেলে মো. মনিরুজ্জমান, ভাঁড়ারা মধ্য জমুয়া গ্রামের মৃত আয়েজ উদ্দিনের ছেলে ভাঁড়ারা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ওহিদুর রহমান।
পাবনা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসিম আহম্মেদ বলেন, আমাদের সোর্স এবং স্থানীয়দের তথ্যের ভিত্তিতে নির্যাতিত কিশোরের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। পরে কিশোরের বাবা মঞ্জু শেখ বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় অভিযুক্ত সাতজনের মধ্যে তিন সালিশদারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।