হার দিয়েই বিশ্বকাপ শেষ করল বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১২:৩৭ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ৬, ২০১৯

ডেস্ক রিপোর্ট: নিজেদের শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে ৯৪ রানের বড় ব্যবধানে হেরে বিশ্বকাপ মিশন শেষ করল বাংলাদেশ। ১৯ বছর বয়সী তরুণ পাকিস্তানি পেসার আফ্রিদির বোলিং তোপেই হার মানতে হলো বাংলাদেশের। এই হারে টাইগারদের জয় নিয়ে ফেরার স্বপ্নের এখানেই সমাপ্তি হলো। তবে বড় জয়েও বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়নি পাকিস্তানেরও।

বাংলাদেশকে ৭ রানের মধ্যে অলআউট করতে পারলেই কেবল তা সম্ভব হতো। ফলে ৮ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের সমান ৯ পয়েন্ট নিয়েও নেট রান রেটের ব্যবধানে বাদ পাকিস্তান।

এর আগে গত মঙ্গলবার ভারতের কাছে হেরে শেষ হয়ে যায় টাইগারদের সেমির স্বপ্ন। সেমির স্বপ্ন ভঙ্গ হওয়ার পর আশা ছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতে অন্তত বিশ্বকাপের সমাপ্তিটা ইতিবাচকভাবে করা।

আজ ঐতিহাসিক লর্ডসে পাকিস্তানের কাছে যেন পাত্তাই পেল না মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। পারল না বিশ্বকাপের শেষটা মনের মতো করতে। হতাশাজনক বোলিং-ফিল্ডিংয়ের পর ব্যাটিংটাও আশানুরূপ না হওয়ায়, শেষ ম্যাচের ফলটাও এসেছে নেতিবাচক।

শুক্রবার ইংল্যান্ডের লর্ডসে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে ৯ উইকেটে ৩১৫ রান করে পাকিস্তান। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১০০ রান করেন ওপেনার ইমাম-উল-হক। ৯৬ রান করেন বাবর আজম। বাংলাদেশ দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৫ উইকেট শিকার করেন মোস্তাফিজুর রহমান।

টার্গেট তাড়া করতে নেমে সময়ের ব্যবধানে উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ৭৮ রানে ৩ উইকেট পতনের পর দলকে খেলায় ফেরাতে চেষ্টা করেন সাকিব আল হাসান ও লিটন দাস। চতুর্থ উইকেটে তারা ৫৮ রানের জুটি গড়েন। এরপর ২২ রানের ব্যবধানে নেই লিটন দাস ও সাকিব আল হাসানের উইকেট। ৭৭ বলে ছয়টি বাউন্ডারিতে ৬৪ রান করে ফেরেন সাকিব। ৪০ বলে ৩২ রানে আউট হন লিটন।

সপ্তম উইকেটে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে ৪৩ রান যোগ করেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। এরপর আবারও ব্যাটিং বিপর্যয়। মাত্র ১ রানের ব্যবধানে নেই মোসাদ্দেক, সাইফউদ্দিন ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের উইকেট।

১৯৮ রানে ৮ ব্যাটসম্যানের বিদায়ের পর ইনিংসের শেষ দিকে ব্যাটিংয়ে নেমে দলের পরাজয়ের ব্যবধান কমাতে চেষ্টা করেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। তার ১৫ রানে শেষ পর্যন্ত ৪৪.১ ওভারে ২২১ রান তুলতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। পাকিস্তানের হয়ে ৯.১ ওভারে মাত্র ৩৫ রানে ৬ উইকেট শিকার করেন শাহিন শাহ আফ্রিদি।

এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ফখর জামানের উইকেট হারিয়ে শুরুতেই বিপদে পড়ে যায় পাকিস্তান। তার উইকেট শিকার করে বাংলাদেশকে ব্রেক থ্রু এনে দেন সাইফউদ্দিন। তার অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিতে গিয়ে মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে ক্যাচ তুলে দেন ফখর জামান।

দ্বিতীয় উইকেটে বাবর আজমকে সঙ্গে নিয়ে ১৫৭ রানের অবনদ্য জুটি গড়েন পাকিস্তান ওপেনার ইমাম-উল-হক। এই জুটিতে জোড়া ফিফটি তুলে নেন তারা। ফিফটির পর বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সেঞ্চুরির পথেই ছিলেন বাবর আজম। শতরানের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করতে বাবরের প্রয়োজন ছিল মাত্র ৪ রান। এমন অবস্থায় সাইফউদ্দিনের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন বাবর। রিভিউ নিয়েও উইকেট বাঁচাতে পারেননি পাকিস্তানের ধারাবাহিক রান করে যাওয়া এই তারকা ব্যাটসম্যান।

এরপর মোহাম্মদ হাফিজকে সঙ্গে নিয়ে ৬৬ রানের জুটি গড়েন ইমাম-উল। এই জুটিতেই বিশ্বকাপের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ইংল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী লর্ডস স্টেডিয়ামে সেঞ্চুরি করেন পাকিস্তানের এ ওপেনার। এরপর পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ে ধ্বস নামাতে সক্ষম হন মোস্তাফিজ-সাইফউদ্দিনরা।

২ উইকেটে ২৪৬ করে রানের পাহাড় গড়ার স্বপ্ন দেখেছিল পাকিস্তান। এরপর মাত্র ৯ রানের ব্যবধানে ৩ উইকেট হারায় ১৯৯২ সালের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। মোস্তাফিজুর রহমানের বলে সিঙ্গেল রান নেওয়ার মধ্য দিয়ে ৯৯ বলে বিশ্বকাপে প্রথম সেঞ্চুরির মাইলফলক স্পর্শ করেন ইমাম-উল-হক।

১০০ বলে সাতটি বাউন্ডারিতে ১০০ রান করে মোস্তাফিজের শিকার হয়ে ফেরেন পাকিস্তানের এ ওপেনার। তার বিদায়ের ঠিক দুই রানের ব্যবধানে ফেরেন মোহাম্মদ হাফিজ। তিনি মেহেদী হাসান মিরাজের অফ স্পিনে বিভ্রান্ত হন। সাজঘরে ফেরার আগে ২৫ বলে তিনটি বাউন্ডারিতে ২৭ রান করেন হাফিজ।

পাঁচ নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নেমে সুবিধা করতে পারেননি হারিস সোহেল। কাটার মাস্টার মোস্তাফিজের বলে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন হারিস। তার বিদায়ের মধ্য দিয়ে ৪৩.৫ ওভারে ২৫৫ রানে ৫ উইকেট হারায় পাকিস্তান।

এরপর ফেরেন পাকিস্তান অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ। সাইফউদ্দিনের অসাধারণ ইয়র্কারে স্ট্যাম্প ভেঙে যায় ওয়াহাব রিয়াজের। মোস্তাফিজের বলে তার অসাধারণ ক্যাচে পরিণত হন শাদাব খান। ব্যাটসম্যানদের এই আসা-যাওয়ার মধ্যেই ইনিংসের শেষ দিকে ব্যাটিং তাণ্ডব চালান ইমাদ ওয়াসিম। তার ২৬ বলের ৪৩ রানের সুবাদে ৩১৫ রান করে পাকিস্তান।