কমলগঞ্জ প্রতিনিধ: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ন্যাশনাল টি কোম্পানী (এনটিসি)-র মাধবপুর চা বাগানে সোমবার (২৮ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১২টায় একটি মাদকের আস্তা গুড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষোব্দ চা শ্রমিকেরা। বিক্ষোব্দ চা শ্রমিকেরা চোলাই মদসহ ৪জনকে ধরে থানার পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে।
পরবর্তীতে আটক মাদক সেবনকারীদের মাদ্যমে স্কুল কলেজগামী চা শ্রমিক সন্তানদেও উপর হামলার আশংকায় নিরাপত্তা চেয়ে মঙ্গলবার কাজ বন্ধ রেখে চা শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেছে।
মাধবপুর চা বাগানের শ্রমিকেরা জানান, এ চা বাগানের একজন কর্মচারীর পরিত্যক্ত বাসায় মাদকের আসর ও মেয়েদের আনাগোনা দেখে সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় মাধবপুর চা বাগানের এক কর্মচারীর পরিত্যক্ত বাসায় বিক্ষোব্দ চা শ্রমিকেরা হামলা চালিয়ে গুড়িয়ে দিয়েছে মাদক আস্তানা। এসময় মাদকের সাথে জড়িত বহিরাগত ৩জন ও বাসার তদারককারী ১জনসহ ৪ জনকে ধরে কমলগঞ্জ থানার পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।
এসময় তাদের কাছ থেকে ৮ লিটার চোলাই মদও উদ্ধার করা হয়। ধৃতরা হলো কমলগঞ্জ পৌরসভার কুমড়াকাপন গ্রামের মৃত আলীবর্দী খানের ছেলে আহমদ খান (৩২), একই এলাকার মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে শাহাব আলী (৩০), একই এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে আবুল বাশার (২০) ও আক্রান্ত বাসার তদারককারী মাধবপুর পুরানবাড়ি এলাকার মৃত আজব উল্যার ছেলে আবুল বাশার।
মাধবপুর চা বাগান থেকে খবর পেয়ে সোমবার দিবাগত রাত দেড়টায় কমলগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক আব্দুস শহীদের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল থেকে ধুত ৪জন মাদক সেবীকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
মাধবপুর চা বাগান চা শ্রমিক সাগর রজক, গকুল গোস্বামী, রিপন চাষা জানান, সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় চা বাগানের কম্পাউন্ডার বিকাশ কৈরীর নামে বরাদ্ধকৃত কোম্পানীর পরিত্যক্ত বাসায় মাদকের আসর বসে। একই সাতে এখানে মেয়েদেরও আনাগোনা দেখে চা শ্রমিকদের সাথে অভিযুক্ত ও পরে আটক আহমদ হোসেনের সাথে বাক বিতন্ডা শুরু হয়। এখবরটি মুহুর্তের মধ্যে পুরো চা বাগানে ছড়িয়ে পড়লে কয়েক’শ বিক্ষোব্ধ চা শ্রমিক এসে এ মাদকের আস্তা গুড়িয়ে দেয়। হামলার সময় ঘরের ভিতর থেকে চোলাই মদ উদ্ধার হলেও কোন মেয়েকে পাওয়া যায়নি। তারা বলেন হামলা হবে টের পেয়ে মেয়েসহ কেয়কজন মাদক ব্যবসায়ী পিছনের দরজা খুলে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে।
বিক্ষোব্ধ চা শ্রমিকেরা আরও বলেন, এ বাসাটি পরিত্যক্ত থাকায় বাসার খলি জমিতে টমেটো চাষের নামে একটি চক্র এ বাসায় মাদকের আখড়া গড়ে তুলার চেষ্টা করছিল। তাদের যন্ত্রনায় চা শ্রমিকেরা অতিষ্ট ছিলেন। সোমবার রাতে মাদক আস্তানায় হামলার কথা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান পুস্প কুমার কানুকে জানালে তিনিও রাত দেড়টায় ঘটনাস্থলে গেলে উত্তেজিত চা শ্রমিকদের শান্ত করলে পুলিশ ধৃত চারজনকে নিয়ে যায়।
থানার পুলিশের কাছে আটক থাকাবস্থায় আহমদ হোসেন বলেন,তিনি মাদক সেবী বা ব্যবসায়ী নন। তার উপর আসা অভিযোগ সঠিক নয় বলে তিনি দাবি করেন। তিনি মাধবপুর চা বাগানের ৩নং লাইনে ১ বিঘা জমিতে টমেটোর চাষ করেছেন। ঐ বাসায় থাকা টমেটো শ্রমিকদের খাবার দিতে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন।
মঙ্গলবার বেলা ৩টায় মাধবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পুস্প কুমার কানু মাদকের অভিযোগে রাতে একটি বাসায় হামলা ও সন্দেহজনক ৪জনকে আটকের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তবে পুরো বিসয়টি তদন্ত কওে দেখা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন মঙ্গলবার চা শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে বিক্ষোভ করায় এনটিসির উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের নিয়ে শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক চলছে।
তবে কমলগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুধীন চন্দ্র দাস মাধবপুর চা বাগানের বিক্ষোব্দ চা শ্রমিকের ৮ লিটার চোলাই মদসহ ধৃত ৪জনকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি আরও বলেন, আটক ৪ জনের বিরুদ্ধে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা হয়েছে। সে মালায় তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে মৌলভীবাজার আদালতে প্রেরণের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি জানান। তিনি আরও বলেন পরবর্তীতে মাদক আস্তায় হামলাকারী চা শ্রমিকের স্কুল কলেজগামী সন্তানদের উপর হামলার আশঙ্কার বিষয়টি পুলিশ খুব গুরুত্বের সাথে নজরদারি করবে।