বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলার কঠোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ১০:১৪ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৯
ছবি সংগৃহীত

ধলাই ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমান পরিবহনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার ওপর গুরুত্বারোপ করে ভিআইপি ও ভিভিআইপিসহ সব যাত্রীকে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলার কঠোর নির্দেশনা প্রদান করেছেন।

তিনি বলেন, যদি কেউ এক্ষেত্রে বাধা দেন তাহলে ভবিষ্যতে তার বিমানে চড়াই বন্ধ হয়ে যাবে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিরাপত্তার যে নিয়মাবলী রয়েছে, সব যাত্রীকে সেটা মেনে নিতে হবে।

শনিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিভিআইপি লাউঞ্জের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধনের সময় প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এদিন বিমানবন্দরের যাত্রী পরিবহন ও মালপত্র আনা নেয়ার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ২১ হাজার ৩শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে বহুল প্রতীক্ষিত হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৩য় টার্মিনালের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন।

একইসঙ্গে তিনি বিমানের পঞ্চম ও ষষ্ঠ ড্রিমলাইনার ‘সোনার তরী’ ও ‘অচিন পাখি’র উদ্বোধন করেন এবং বিশ্বের সব স্থান থেকে বিমানের টিকেট ক্রয়ের সুবিধা সংবলিত একটি মোবাইল অ্যাপসও অনুষ্ঠানে উদ্বোধন করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি স্পষ্ট বলতে চাই, এখানে এমপি, মন্ত্রী, বাহিনী প্রধানগণ বা অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও রয়েছেন- আপনারা যখন বিদেশে যান তখন যেভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়, ঠিক সেই ভাবে বিমানবন্দরে করতে হবে এবং সেটা সবাইকে মেনে নিতে হবে। সেখানে কেউ কোনো বাধা দিতে পারবেন না।

তিনি বলেন, একটা কথা মনে রাখবেন, সারাদিন আমি দেশের কাজই করি। কোথায় টুকটাক কী হয় না হয় সে খবরটা নেয়ার চেষ্টা করি। কাজেই কেউ এখানে কোনো রকম অনিয়ম বা ব্যত্যয় ঘটালে সঙ্গে সঙ্গেই আমার কাছে খবর চলে আসে। এটা সবাইকে মনে রাখতে হবে এবং সে অনুযায়ী নজরদারি বাড়াতে হবে।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এম মাহবুব আলী সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন- বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান র আ ম উবায়দুল মোতকাদির চৌধুরী, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মহিবুল হক, বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত নাওকি ইতো ও জাইকা’র বাংলাদেশ অফিসের চীফ রিপ্রেজেন্টেটিভ হিতোসি হিরোকা।

সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান স্বাগত ভাষণ দেন। এ সময় বিমানের সিইও মুকাব্বির হোসেন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে বিমানের নির্মাণাধীন ৩য় টার্মিনাল ও সিভিল এভিয়েশনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে একটি অডিও ভিজুয়াল পরিবেশনা প্রদর্শিত হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, এমপি, তিন বাহিনীর প্রধান, সরকারের উচ্চ পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এবং বিদেশি কূটনীতিকরা, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সদস্যসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী ভাষণে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি ও মাদকের বিরুদ্ধে তার সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি পুনরায় উল্লেখ করে বলেন, আমরা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছি। যেই দুর্নীতি করবে তাকে ছাড়া হবে না। সে যেই হোক না কেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দিনরাত পরিশ্রম করবো দেশের উন্নয়নের জন্য, মানুষ মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অর্থ উপার্জন করবে আর দেশের উন্নয়নের কাজ সঠিক ভাবে হবে না। সেখান থেকে কেউ অসাধু উপায়ে নিজের ভাগ্য গড়তে যাবে। সেটা কখনো সম্ভব হবে না। এটা কখনো বরদাশত করবো না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সময় মত ৩য় টার্মিনালের কাজ শেষ করারও তাগিদ দেন। এ সময় ৯৬ সালে সরকার গঠনের পরই বিমানের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণে তার সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী এক্ষেত্রে বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দেয়ার উদ্যোগও তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, অনেকগুলো বেসরকারি সংস্থা এখন বিমান চালাচ্ছে, হেলিকপ্টারকেও বেসরকারি খাতে আওয়ামী লীগ সরকার সুযোগ করে দিয়েছে। পাশাপাশি আমরা চাই বিমানেরও নিজস্ব ব্যবস্থা থাকতে হবে। যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে হলে একদম বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া উচিত নয়, তাহলে সকালে এক রকম বিকেলে অন্য রকম তারা করতে পারে।

আরো ৩টি বিমান দেশের অভ্যন্তরীণ রুটের জন্য আসছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কানাডা থেকে নিয়ে আসা ওই তিনটি বিমানের সঙ্গে আরো কিছু বিমান যুক্ত করা হবে, যাতে দেশের সব বিমানবন্দরে যাত্রী সেবা বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়।

কক্সবাজার বিমানবন্দরকেও আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যাতে প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্যে ও পাশ্চাত্য থেকে প্রাচ্যে যত বিমান যাতায়াত করে তাদের একটা ‘হাব’ হতে পারে কক্সবাজার। সেখানে রিফুয়েলিং সহ কয়েকদিন যাতে কেউ প্রয়োজনে বিশ্রাম নিতে পারে। পর্যটন ছাড়াও আরো অনেকভাবে এই কক্সবাজারকে যেন ব্যবহার করতে পারি। তিনি বলেন, এর নির্মাণ কাজ এরইমধ্যে শুরু হয়েছে।

ড্রিম লাইনার দুটি নিজস্ব অর্থে ও রিজার্ভের টাকাতেই ক্রয় করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থাৎ এগুলো ক্রয় করার মত সক্ষমতা আমরা অর্জন করেছি। তিনি বলেন, বিমানে অনেক সমস্যা ছিল। এগুলো ধীরে ধীরে খুঁজে বের করতে হয়েছে এবং সমাধান করা হয়েছে।

আমাদের নিজস্ব কোনো কার্গো বিমান না থাকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কাজেই কার্গো বিমান আমাদের প্রয়োজন। ওই ৩য় টার্মিনালের সঙ্গে অত্যাধুনিক কার্গো ভিলেজ নির্মাণ করা হবে। যাতে আমাদের মালামাল পাঠানো বা আমদানি-রফতানি ব্যবসার সুবিধা হয়। আর এগুলো হবে আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন।

তিনি বলেন, ভবিষ্যতে কার্গো ভিলেজের সঙ্গে আমরা দুটি কার্গো বিমানও ক্রয় করবো। কারণ কার্গো বিমান ছাড়া বিমান লাভজনক হবে না।

এ সময় তিনি বিমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দিকে গুরুত্বারোপ করে বিমানবন্দরে বিদেশিসহ প্রবাস ফেরত বাংলাদেশিদের আগমনের সময়কার নানা হয়রানি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণেও সংশ্লিষ্ট মহলকে নির্দেশনা প্রদান করেন।

প্রধানমন্ত্রী বিমান নিয়ে অতীতের নানা সমস্যার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, সিট খালি অথচ টিকেট নেই বা এ রকম বহু কিছু হতো। বিমানে চোরাচালানের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি এক সময় ‘বিমানকে স্বর্ণ প্রসবা’ আখ্যায়িত করেও এর অতীত স্মরণ করিয়ে দিয়ে এগুলো বন্ধ করার নির্দেশ দেন। যাতে করে বিমানের সেবা আন্তর্জাতিকভাবে বৃদ্ধি পায়।

শেখ হাসিনা বলেন, এরইমধ্যে আমরা বিমানের যাত্রীসেবা আরো অন্যান্য দেশে বাড়ানোর চেষ্টা করছি। সে ক্ষেত্রে অন্যান্য এয়ারলাইন্সের সঙ্গে কোর্ট শেয়ারিংয়ের মধ্যমে অনেকগুলো গন্তব্যে আমাদের যাত্রী পাঠাতে পারি। সেটাও ভবিষ্যতে করবো। শুধু বিমান ক্রয় নয়, এটা যেন যথাযথভাবে চলে এবং বিমানের যাত্রীসেবা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীদেরও তিনি যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, যাত্রীদেরও মনে রাখতে হবে বিমানটা আমাদের নিজেদের অর্থে কেনা। কাজেই তার রক্ষণাবেক্ষণে সবাইকেই বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী ৩য় টার্মিনাল নির্মাণ হলে দেশের বিমানের যাত্রী পরিবহন পরিসর আরো বৃদ্ধি পাবে উল্লেখ করে একে আমাদের ‘অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা অর্জনের একটি সূচক’ হিসেবেও আখ্যায়িত করেন।

এ সময় জিডিপি ৮ দশমিক ১৫ শতাংশে উন্নীতকরণ, মাথাপিছু আয় ১৯০৯ ডলারে উন্নীতকরণ এবং দারিদ্রের হার ২০ ভাগে নামিয়ে আনার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সরকার প্রধান তার রাজনৈতিক অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, জাতির পিতার দারিদ্র মুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।

শেখ হাসিনা ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন ও ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, যে সময়ে আমরা মুজিববর্ষ উদযাপন করবো, সে সময়ে বাংলাদেশকে আমরা এমন একটা অবস্থানে নিয়ে যেতে চাই যাতে ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তুলতে সক্ষম হই।

এ সময় তিনি পাঁচ বছর মেয়াদি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার পাশাপাশি ১০ বছর মেয়াদি প্রেক্ষিত পরিকল্পনার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আমরা আশু করণীয় ঠিক করে দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের পরিকল্পিত উন্নয়ন সাধন করে যাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে যে শিশুটা জন্মগ্রহণ করবে, সেও যেন তার ভবিষ্যতটা সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই স্বাধীনতার সুফল বাংলার মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি।

‘আমরা উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছি, কিন্তু এখানেই থেমে থাকবো না। ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ।’

প্রধানমন্ত্রী এ সময় জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় তার সরকারের শতবর্ষ মেয়াদি ‘ডেল্টা পরিকল্পনা ২১০০’র কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে, তারা একটি সুন্দর জীবন পেতে পারে সেজন্য আমরা ডেল্টা পরিকল্পনা-২১০০ বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।