কমলগঞ্জের শমসেরনগর সম্মুখ সমরের স্মৃতিস্তম্ভ ও বধ্যভূমিটি রক্ষণাবেক্ষন না করায় ঝোঁপ-জঙ্গলে আচ্ছাদিত

প্রকাশিত: ৫:৪৬ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২০
ছবি ধলাইর ডাক

স্টাফ রিপোর্টার: মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় প্রায় সাত বছর আগে “সংরক্ষণ ও উন্নয়ন” প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা শমসেরনগর সম্মুখ সমরের স্মৃতিস্তম্ভ। শমসেরনগর বিমান বন্দর বেস্টনীর মধ্যে এ সম্মুখ সমরের স্মৃতিস্তম্ভ ও বধ্যভূমিটি এখন পড়ে রয়েছে অযতœ-অবহেলায় ও ঝোঁপ-জঙ্গলের আড়াল হতে চলেছে।

হারিয়ে যেতে বসেছে মুক্তিকামী বাঙালিদের ত্যাগের স্মৃতিচিহ্ন। নূন্যতম রক্ষণাবেক্ষণ না থাকায় শমসেরনগর সম্মুখ সমরের স্মৃতিস্তম্ভ ও বধ্যভূমি রীতিমতো অস্তিত্ব সঙ্কটে। ঝোঁপ-জঙ্গলে আচ্ছাদিত থাকার ফলে স্থানীয়রাও সহজে এ সম্মুখ সমরের স্মৃতিস্তম্ভ ও বধ্যভুমিটি চিহ্নিত করতে পারছেন না। অথচ উদ্যোগ নেওয়া হলে সম্মুখ সমরের স্মৃতিস্তম্ভ ও পার্শ্বস্থ বধ্যভূমিকে ঘিরেই মুক্তিযুদ্ধ চর্চার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হতো। সরেজমিন ঘুরে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত সম্মুখ সমরের স্মৃতিস্তম্ভ ও বধ্যভূমির এমন অবস্থা চোখে পড়ে।

জানা যায়, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযোদ্ধে শমসেরনগরের এই জায়গায় ৩টি কূপ খনন করে মুক্তিযুদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষদের ধরে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। মুক্তিযোদ্ধের পরবর্তী সময়ে দীর্ঘদিন যাবত সম্মুখ সমরের স্থান ও পার্শ্বস্থ বধ্যভূমি অরক্ষিত অবস্থায় ছিলো। অরক্ষিত থাকার পর জনদাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৮৮ সালে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শমসেরনগর বধ্যভূমি ও সম্মুখ সমরের স্থানটি দেখানোর জন্য একটি সাইনবোর্ড টাঁনানো হয়। এখানেই প্রশাসনের কাজ শেষ। এরপর বেশ কয়েকবার বধ্যভূমি ও সম্মূখ সমরের স্থান চিহ্নিতকরণ বিশেষজ্ঞদল স্থানটি পর্যবেক্ষণ করেছেন শুধুমাত্র। তারপর আবারো উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয়দের দাবির প্রেক্ষিতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয় ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে ২০০৬ সালে উদ্ধোধন করা হয় কমলগঞ্জের শমসেরনগর “৭১ এর বধ্যভূমি”। যার ফলক উম্মোচন করেন তৎকালিন অর্থমন্ত্রী প্রয়াত এম. সাইফুর রহমান। এবং ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয় ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে মুক্তিযুদ্ধকালীন উল্লেখযোগ্য সম্মুখ সমরের স্থানগুলো “সংরক্ষণ ও উন্নয়ন” প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হয় শমসেরনগর ‘সম্মুখ সমরের স্মৃতিস্তম্ভ’।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন (অবঃ)সাজ্জাদুর রহমান জানান, কমলগঞ্জ উপজেলার শমসেরনগর ৭১ এর বধ্যভূমি ও সম্মুখ সমরের স্মৃতিস্তম্ভটি একটি ইতিহাসপূর্ণ স্থান। এই ¯া’নটি রক্ষণাবেক্ষনের তাগিদে ২০০৬ সাল পরবর্তী সময়ে তৎকালীন শমসেরনগর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল গফুরের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে বরাদ্দ এনে স্মৃতিস্তম্ভ গুলোকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করিয়েছেন। পরবর্তীতে কেউ স্থানটি পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করছে কিনা তা উনার অগোছরে।

জানতে চাইলে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, স্থানটির অবস্থান শমসেরনগর বিমান ঘাঁটিতে। এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ সাধারণত উপজেলা প্রশাসন থেকেই করা হয়ে থাকে। তবে এই বিষয়ে আমাকে অবগত করায় ভালো হয়েছে। ইতিমধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের একটি রির্পোটের পরিপ্রেক্ষিতে কমলগঞ্জ উপজেলার নতুন যে কয়টি যুদ্ধকালীন ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে তা চিহ্নিতকরণ এবং পুরাতণগুলো পুণঃসংস্কারের জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে আহবায়ক করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন দাখিলের পর বরাদ্দ আসলেই কাজ শুরু করা হবে।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, কমলগঞ্জ উপজেলার নতুন যে কয়টি যুদ্ধকালীন ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে তা চিহ্নিতকরণ এবং পুরাতণগুলো পুণঃসংস্কারের জন্য আমাকে আহবায়ক করে কমিটি গঠন করে দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক স্যার। কমিটিতে ২জন মুক্তিযোদ্ধা, কমলগঞ্জ পৌর মেয়র, উপজেলার ৯ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানবৃন্দসহ ১৩জন সদস্য রয়েছেন। তিনি যুদ্ধকালিন স্থান সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা থাকলে সাংবাদিকরা যাতে সঠিক তথ্য কমিটিকে প্রদান করেন সে বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রতি অনুরোধ জানান।