
ধলাই ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিববর্ষের প্রাক্কালে বুধবার যাত্রাবাড়ী-মাওয়া-পাচ্চর-ভাঙ্গা রুটে দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করেছেন। এর ফলে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক নতুন যুগের সূচনা হলো।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার বেলা ১১টায় তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে নবনির্মিত বিশ্বমানের এই এক্সপ্রেসওয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনকালে বলেন, এটি দেশের প্রথম নিয়ন্ত্রিত এক্সপ্রেসওয়ে। তিনি এটিকে জাতির জন্য মুজিববর্ষের উপহার বলেও উল্লেখ করেন। খবর-বাসস
তিনি বলেন, এই এক্সপ্রেসওয়ে ধরে যানবাহনগুলো কোনো ধরনের বাধা বা ট্রাফিক সিগন্যাল ছাড়াই সরাসরি গন্তব্যে যেতে পারবে। এর পাশাপাশি আশপাশের এলাকার জনসাধারণের যাতায়াতের জন্য ধীর গতির যানবাহন চলাচলের পৃথক লেন নির্মাণ করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা স্মৃতিচারণ করে বলেন, এক সময় এই ভাঙ্গা পর্যন্ত যেতে হলে স্টিমার বা লঞ্চে যেতে হতো। আর আমাদের গোপালগঞ্জ যেতে স্টিমারেই ২৪ ঘণ্টা লাগতো। লঞ্চে সময় লাগতো আরো বেশি। এমনকি ’৮১ সালে যখন দেশে ফিরে আসি তখনো সেই অবস্থাই ছিল।
তিনি বলেন, শুধু সড়ক নয়, নৌ, বিমান ও রেল পথেরও উন্নয়ন করছে তার সরকার। প্রধানমন্ত্রী এ সময় নিজস্ব অর্থায়নে তার সরকারের পদ্মাসেতু নির্মাণের উদ্যোগ বহি:বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনারা জানেন-এই পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংক আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিল। আমি সেটা নিয়ে চ্যালেঞ্জ করেছিলাম। কানাডার কোর্টে প্রমাণ হয়, সেখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় সম্মানের।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, পদ্মাসেতুটা একটি ভিন্নধর্মী দোতলা সেতু হচ্ছে। নিচ দিয়ে রেল এবং ওপর দিয়ে গাড়ি যাবে।
পদ্মা নদীর মতো একটি খরস্রোতা নদীতে এ জাতীয় সেতু নির্মাণ করাটায় বিরাট ঝুঁকির ব্যাপার থাকলেও তার সরকার নিজস্ব অর্থায়নেই এই সেতু নির্মাণ করছে, বলেন তিনি।
সরকার প্রধান দেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী জাপানে তার প্রথম সফর স্মরণ করে বলেন, আমি প্রথমবার সরকার গঠন করে জাপান যাই। তখন পদ্মা ও রূপসা সেতু নির্মাণের জন্য তাদের অনুরোধ করেছিলাম।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুও ১৯৭৩ সালে জাপান সফরে গিয়ে যমুনা সেতু নির্মাণের কথা বলেছিলেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে যমুনা সেতু নির্মাণের ফিজিবিলিটি স্টাডি করে দেয় জাপান। যার পরিপ্রেক্ষিতে পরে যমুনা সেতু নির্মাণ করা হয়। পরে জাপানই পদ্মা সেতুর ফিজিবিলিটি স্টাডিও করে দেয়।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ক্ষমতায় আসার পর দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করেছি। যাতে ঢাকা থেকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত জনগণ নিরবিচ্ছন্নভাবে চলাচল করতে পারে।
রকার যোগযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়নসহ যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করতে চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সে জন্য সড়ক, সেতু, কালভার্ট, আন্ডারপাস, ওভারপাস নির্মাণ কাজ অব্যাহত রয়েছে।
প্রকল্প কর্মকর্তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক মানের এই এক্সপ্রেসওয়ে দুইটি সার্ভিস লেনের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীকে যুক্ত করবে। এখন মাত্র ২৭ মিনিটে ঢাকা থেকে মাওয়ায় যাওয়া যাবে।
প্রকল্পের বিবরণ অনুসারে, এক্সপ্রেসওয়েতে পাঁচটি ফ্লাইওভার, ১৯টি আন্ডারপাস এবং প্রায় ১০০টি সেতু এবং কালভার্ট রয়েছে, যা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়িয়ে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখবে।
এটি ভ্রমণের সময় কমানোর পাশাপাশি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর জনগণের জন্য আরামদায়ক ও নিরবচ্ছিন্ন যাতায়াত নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। আর এর মাধ্যমে মুজিববর্ষের প্রাক্কালে বাংলাদেশ যোগাযোগ ক্ষেত্রে এক নতুন যুগে প্রবেশ করল।
একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্পের আওতায় খুলনা, বরিশাল ও গোপালগঞ্জ সড়ক জোনে নির্মিত ২৫টি সেতু এবং তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু নির্মাণ (সংশোধিত) প্রকল্পের আওতায় ৬ লেনবিশিষ্ট ৮ কিলোমিটার তৃতীয় কর্ণফুলী (শাহ আমানত সেতু) সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম প্রকল্প বিষয়ে তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন।
রেলমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পিএমও’র এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ, পিএমও সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।
প্রকল্প কর্মকর্তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক মানের এই এক্সপ্রেসওয়ে দু’টি সার্ভিস লেনের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীকে যুক্ত করবে। এখন মাত্র ২৭ মিনিটে ঢাকা থেকে মাওয়ায় যাওয়া যাবে।
প্রকল্পের বিবরণ অনুসারে, এক্সপ্রেসওয়েতে পাঁচটি ফ্লাইওভার, ১৯টি আন্ডারপাস এবং প্রায় ১০০টি সেতু এবং কালভার্ট রয়েছে, যা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়িয়ে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখবে।
মাওয়া থেকে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার এবং পাচ্চর থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার এ এক্সপ্রেসওয়ে পুরো খুলনা ও বরিশাল বিভাগ এবং ঢাকা বিভাগের একটি অংশের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। পাশাপাশি ঢাকা শহর এবং দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের মধ্যে যোগাযোগ জোরদার করবে।
বরিশাল বিভাগের ছয় জেলা, খুলনা বিভাগের ১০টি জেলা এবং ঢাকা বিভাগের ছয় জেলাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২২টি জেলার মানুষ সরাসরি এই আন্তর্জাতিক মানের এক্সপ্রেসওয়ে থেকে উপকৃত হবেন।
আধুনিক এক্সপ্রেসওয়ের দুটি অংশ ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর সঙ্গে সংযুক্ত হবে, যা বর্তমানে নির্মাণাধীন। গত মঙ্গলবার ২৬তম স্প্যান বসানোর পরে দেশের দীর্ঘতম পদ্মা সেতুর চার কিলোমিটার এরইমধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে।
২০২১ সালের জুনের মধ্যে যান চলাচলের জন্য সেতুটি চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হলে, কোনও ভ্রমণকারীকে ভাঙ্গা থেকে ঢাকা যাতায়াতের জন্য এক ঘন্টা সময়ও লাগবে না।
আগামী ২০ বছরের জন্য ক্রমবর্ধমান যানবাহনের পরিমাণ বিবেচনা করে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে প্রায় ১১০০৩ দশমিক ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মিত হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যৌথভাবে ২০১৬ সালে চারটি জেলা- ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর এবং ফরিদপুরে এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু করে এবং নির্ধারিত সময়সীমার তিন মাস আগে এটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে। নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার নির্ধারিত সময়সীমা ছিল ২০২০ সালের ২০ জুন।
এক্সপ্রেসওয়ের পাঁচটি ফ্লাইওভারের মধ্যে একটি ২ দশমিক ৩ কিলোমিটার কদমতলী-বাবুবাজার লিংক রোড ফ্লাইওভার রয়েছে। অন্য চারটি ফ্লাইওভার হলো আবদুল্লাহপুর, শ্রীনগর, পুলিয়াবাজার এবং মালিগ্রামে।
৫৫ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়েতে জুরাইন, কুচিয়ামোড়া, শ্রীনগর ও আটিতে চারটি রেলওয়ে ওভার ব্রিজ রয়েছে। এছাড়া চারটি বড় সেতু রয়েছে। এগুলো হলো- ৩৬৩ মিটার ধলেশ্বরী-১, ৫৯১ মিটার ধলেশ্বরী-২, ৪৬৬-মিটার আড়িয়াল খা এবং ১৩৬-মিটার কুমার সেতু।
সূত্র: ডেইলী বাংলাদেশ…