শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত এবং যেভাবে পড়বেন…

প্রকাশিত: ৭:১৩ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৯, ২০২০
ফাইল ছবি

ধর্ম ডেস্ক: আজ বৃহস্পতিবার আরবি হিজরি সনের ১৪ শাবানের দিবাগত রাত পবিত্র শবে বরাত। দিনশেষে যে রাত আসবে ওই রাতটিই হচ্ছে নিসফে শাবান‎ বা লাইলাতুল বরাত।

হাদিস শাস্ত্রে ‘শবে বরাত’ বলতে যে পরিভাষাটি ব্যবহার করা হয়েছে, তা হলো ‘নিসফ শাবান’ বা ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ তথা ‘শাবান মাসের মধ্য রজনী’।

শবে বরাত কথাটি ফারসি থেকে এসেছে। ‘শবে’ মানে হচ্ছে রাত আর ‘বরাত’ মুক্তি। শবে বরাত অর্থ মুক্তির রাত। যেহেতু এই রাতে আল্লাহর অগণিত মাখলুককে ক্ষমা করে থাকেন। হাদিস শরিফে আছে, হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) তাকে বলেছেন, এ রাতে বণিক কাল্পনিক ভেড়ার পশমের সংখ্যার পরিমাণের চেয়েও বেশি সংখ্যক গুনাহগারকে আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করে দেন (সুবহানাল্লাহ!)। এটি তিরমিজি শরিফের ৭৩৯ নম্বর হাদিস।

শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত এবং যেভাবে পড়বেন…

শবে বরাতের নির্দিষ্ট কোনো নামাজ কোরআনে বা হাদিসে উল্লেখ নেই। তবে হাদিসে আছে, রাসূল (সা.)বলেন, যখন শাবান মাসের মধ্য দিবস আসবে, তখন তোমরা রাতে নফল নামাজ পড়বে এবং দিনে রোজা পালন করবে। ইবাদতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হলো নামাজ। সুতরাং নফল ইবাদতের মধ্যেও শ্রেষ্ঠ হলো নফল নামাজ। এটি ইবনে মাজাহ শরিফের ১৩৮৪ নম্বর হাদিস।

আর তাই দুই রাকাত করে যত খুশি তত বার নামাজ পড়তে পারেন। আর তার নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা নেই। এখন নিয়ত করবেন কিভাবে? বলবেন, আমি দুই রাকাত নফল নামাজ পরছি কিবলামুখী হয়ে আল্লাহু আকবার। এভাবে সংকল্প করলেই আপনার নামাজ হয়ে যাবে। তবে এখানে সূরা ফাতিহা একবার আর সূরা ইখলাস তিনবার পড়তে হবে বা সূরা ওয়াকিয়া পড়তে হবে এমন কোনো কথা হাদিসে নেই। এগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তাই সূরা ফাতিহার পরে যে কোনো সূরা দিয়ে নামাজ পড়লেই নামাজ হয়ে যাবে (ইনশাল্লাহ!)।

শবে বরাতের রোজা কয়টি ও কীভাবে রাখতে হয়? এবং রোজা রাখা যাবে কি না?

হজরত মোহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন, ১৫ শাবান রাতে তোমরা জেগে থেকে ইবাদত করো এবং পরদিন রোজা রাখো। এ হাদিস দিয়ে শবে বরাতের একটি নফল রোজা প্রমাণিত হয়। তবে বিভিন্ন হাদিসে হজরত মোহাম্মদ (সা.) প্রত্যেক আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ তিনদিন তিনটি নফল রোজা (আইয়াম বীজ) রাখতে উৎসাহিত করেছেন। সে হিসেবে শাবান মাসেও এ তিনটি রোজা রাখা যেতে পারে। আবার অন্য আর একটি হাদিসে রয়েছে,  হজরত উম্মে সালমা ও হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, শাবান মাসে হজরত মোহাম্মাদ (সা.) অধিকহারে রোজা রাখতেন। যেন তিনি গোটা শাবান মাসই রোজা রাখতেন। সে হিসেবে শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখা অবশ্যই সওয়াবের কাজ। (তিরমিযি ১/১৫৫, ১৫৬, ১৫৯)।

শবে বরাতের আমল ও ফজিলত এবং আমাদের করণীয় কি?

আমল: শবে বরাতের রাতে এশার নামাজ পরার পরে দুই রাকাত সুন্নত নামাজ পরবেন। এরপরে গভীর রাতে দুই রাকাত করে নফল নামাজ আদায় করবেন। এখানে কত রাকাত পড়লেন এটি বড় কথা নয়! নামাজ কত দীর্ঘ করলেন এবং কত মনোযোগ দিয়ে পড়লেন এটিই বড় কথা। হাদিস শরিফে আছে, হজরত আয়েশা সিদ্দিক (রা.) বলেন, একবার রাসূল (সা.) নামাজে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সিজদা করলেন যে, আমার ধারণা হলো তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তার পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলে নাড়া দিলাম আর তার বৃদ্ধাঙ্গুল নড়লো। তখন তিনি সিজদা থেকে উঠলেন এবং তিনি নামাজ শেষ করে আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা! তোমার কি আশঙ্কা হয়েছে? আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! (সা.) আপনার দীর্ঘ সিজদা দেখে আমার আশঙ্কা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কী না।

নবী (সা.) বললেন, তুমি কি জানো এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলই ভালো জানেন। তখন নবী রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, এটা হলো অর্ধ শাবান রাত। এ রাতে আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন, ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করে দেন, অনুগ্রহ প্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদেরকে তাদের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন। হাদিসটি নেয়া হয়েছে শুআবুল ঈমান তৃতীয় খণ্ডের ৩৮২ নম্বর পৃষ্ঠা থেকে। অর্থাৎ এ হাদিস থেকে আমরা বলতে পারি যে, নামাজে অত্যন্ত মনোযোগী হতে হবে এবং এটিও বুঝতে হবে যে, এদিন আল্লাহ তায়ালা দুজন ব্যক্তিকে ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন। তাদের মধ্যে প্রথম হচ্ছে যে ব্যক্তি শিরক করল এবং দ্বিতীয় হচ্ছে যে ব্যক্তি হিংসা করল। আর আমাদের চেষ্টা করতে হবে যেনম এই দুই ধরনের মধ্যে আমরা না পরে যাই।

ফজিলত: ফজিলত সম্পর্কে একটি হাদিস না বললেই নয়, হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন নবী করিম (সা.) বলেছেন, ১৪ই শাবান দিবাগত রাত যখন আসে, তখন তোমরা এ রাতটি ইবাদত বন্দেগীতে কাটাও এবং দিনের বেলায় রোজা রাখো। কেননা এ দিন সূর্যাস্তের পরে আল্লাহ তায়ালা প্রথম আসমানে নেমে আসেন এবং আহ্বান করেন, কোনো ক্ষমা প্রার্থী আছো কি? আমি ক্ষমা করবো। কোনো রিজিক প্রার্থী আছো কি? আমি রিজিক দেবো। আছো কি কোনো বিপদগ্রস্ত? আমি উদ্ধার করবো। এভাবে ভোর পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে আহ্বান করতে থাকেন (সুবহানাল্লাহ!)। এটি ইবনে মাজাহায় বর্ণিত হয়েছে।

করণীয়: আমাদের আবশ্যকীয় করণীয় হলো এই রাতে আমরা বেশি বেশি ইস্তেকফার করবো। যাতে করে আল্লাহ তায়ালা আমাদের ক্ষমা করে দেন এবং বেশি বেশি নফল ইবাদতে মশগুল থাকবো। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে আমল করার তৌফিক দান করুন (আমিন)।

 

সূত্র: ডেইলী বাংলাদেশ…