ধর্ম ডেস্ক: রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাতের মাস রমজান। এ মাসের অসংখ্য রহমত ও বরকতের কথা যেমন বলা হয়েছে তেমনি মাগফেরাতের কথা বিশেষভাবে বলা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- غُفِرَلَهُ مَا تَقَدَّم مِنْ ذَنْبِهِ ‘গুফিরা লাহু মা তাকাদ্দামা মিন জানবিহি’ তথা আগের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়- বলে তিনটি আমলের কথা বিশেষভাবে বর্ণনা করেছেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজান মাসের রোজা পালন, তারাবিহ নামাজ এবং লাইলাতুল কদরের রাতে বেশি বেশি নামাজ আদায়ের কথা আলাদা আলাদা বর্ণনায় ঘোষণা করেছেন। হাদিসের বর্ণনাগুলো হলো-
গিবত, পরনিন্দা, জুলুম-অত্যাচার, অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত থেকে ঈমানের সঙ্গে সাওয়াবের নিয়তে রমজানের রোজা যথাযথভাবে পালন করায় রয়েছে গোনাহ থেকে মুক্তি লাভের ঘোষণা। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ايْمَانًا وَ اِحْتِسَابًا غُفِرَلَهُ مَا تَقَدَّم مِنْ ذَنْبِهِ
অর্থাৎ ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সাওয়াবের আশায় রমজানের রোজা পালন করে, তার আগের সব গোনাহ মাফ করে দেয়া হয়।‘ (বুখারি ও মুসলিম)
>> রমজানের রাতের নামাজ
রমজান মাসে কিয়ামুল লাইল বা রাতের নামাজ (তারাবিহ ও তাহাজ্জুদ) আদায় করা। কেননা রোজাদার ঈমানের সঙ্গে সাওয়াবের নিয়তে রমাজানের রাতের নামাজে তারাবিহ ও তাহাজ্জুদ আদায় করলে তার গোনাহ মাফ হয়ে যায়। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
مَنْ قَامَ رَمَضَانَ ايْمَانًا وَ اِحْتِسَابًا غُفِرَلَهُ مَا تَقَدَّم مِنْ ذَنْبِهِ
অর্থাৎ ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সাওয়াবের আশায় রমজানের রাতে নামাজ আদায় করে, তার আগের সব গোনাহ মাফ করে দেয়া হয়।‘ (বুখারি ও মুসলিম)
>> কদরের রাতের নামাজ
হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ রাত হলো লাইলাতুল কদর। ঈমানের সঙ্গে সাওয়াবের নিয়তে এ রাতে বেশি বেশি নামাজ আদায় করলে আল্লাহ তাআলা বান্দার আগের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
مَنْ قَامَ لَيْلَةُ الْقَدْرِايْمَانًا وَ اِحْتِسَابًا غُفِرَلَهُ مَا تَقَدَّم مِنْ ذَنْبِهِ
অর্থাৎ ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সাওয়াবের আশায় (রমজানের) লাইলাতুল কদরে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে, তার আগের সব গোনাহ মাফ করে দেয়া হয়।‘ (বুখারি ও মুসলিম)
অনেকেই গোনাহ মাফ বলতে ছোট ছোট গোনাহগুলো ক্ষমা করে দেয়ার বিষয়টি বুঝিয়েছেন। কিন্তু এ সম্পর্কে হজরত ইবনু হাজার আল-আসকালানি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন- ‘হাদিসের বাহ্যিক অর্থ সগিরা-কবিরা তথা ছোট-বড় সব গোনাহকেই অন্তর্ভূক্ত করে। তাঁর এ মতকে অনেকেই সমর্থন করেন।’
তবে অনেকে বলেছেন কারো আমলনামায় সগিরা গোনাহ না থাকে আর যদি কবিরা গোনাহ থাকে তবে আল্লাহ ওই ব্যক্তির বড় গোনাহগুলো হালকা করে দেন।’ (ফতহুল বারি)
উল্লেখ্য লাইলাতুল কদর রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে অনুষ্ঠিত হয়। সে কারণে মুমিন মুসলমান বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণে রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করে। উদ্দেশ্য হলো লাইলাতুল কদর তালাশ করে এর ফজিলত, মহত্ম ও তাৎপর্য লাভ করা।
আবার অনেকে প্রতি রমজানের ২৬ তারিখ দিবাগত রাত অর্থাৎ ২৭ রমজানের রাতকে লাইলাতুল মনে করে ইবাদত-বন্দেগি তথা নামাজে অতিবাহিত করে। আসলেই লাইলাতুল কদর এমনটি নয়। বরং রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর তালাশে প্রতি রাতে বেশি বেশি নফল নামাজ আদায় করে গোনাহ মুক্ত জীবন লাভের চেষ্টা করা জরুরি।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত একান্ত আন্তরিকতার সঙ্গে সাওয়াবের আশায় রমজানের রোজা পালন করা। তারাবিহ নামাজ আদায় করা। লাইলাতুল কদরের রাতে বেশি বেশি নফল নামাজ আদায় করে গোনাহ থেকে ক্ষমা চাওয়া। তবেই আল্লাহ বান্দার সব গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন।
হাদিসে নির্দেশিত ইবাদতগুলোর পাশাপাশি রমজানের রোজা পালনের সঙ্গে সঙ্গে গোনাহ মাফের ছোট ছোট আবেদনগুলো করা। যা প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দোয়াগুলো পড়ার প্রতি তাগিদ দিয়েছেন-
– رَبِّ اغْفِرْلِىْ وَتُبْ عَلَيَّ اِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الْغَفُوْرُ
উচ্চারণ- ‘রাব্বিগফিরলি, ওয়া তুব আলাইয়্যা, ইন্নাকা আংতাত তাওয়াবুল গাফুর।’
অর্থ : পরওয়াদেগার! তুমি আমাকে মাফ কর এবং আমার তাওবা কবুল কর। কেননা তুমি হলে তাওবা কবুলকারী এবং ক্ষমাকারী। (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ ও মিশকাত)
অতপর হজরত আদম ও হাওয়া আলাইহিস সালাম-এর ঐতিহাসিক ক্ষমা লাভের দোয়াটি বেশি বেশি পড়া-
– رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنفُسَنَا وَإِن لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ
উচ্চারণ : ‘রাব্বানা জ্বালামনা আংফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানা ওয়া তারহামনা লানাকুনান্না মিনাল খাসিরিন।‘
অর্থ : ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা নিজেদের প্রতি জুলম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করেন, তবে আমরা অবশ্যই অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাব।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ২৩)
– اَللَّهُمَّ اِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّىْ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি।’
অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল। ক্ষমা করাকে ভালোবাসেন। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন।’
– اَللَّهُمَّ اِنِّى اَسْئَلُكَ الْهُدَى وَ التُّقَى وَ الْعَفَافَ وَالْغِنَى
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা ওয়াত্তুক্বা ওয়াল আফাফা ওয়াল গিনা।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনার কাছে হেদায়েত চাই, আপনার ভয় চাই, রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি চাই, সচ্ছলতা কামনা করি।’
– رَبَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَأَنتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ
উচ্চারণ : ‘রাব্বানা আমান্না ফাগফিরলানা ওয়ারহামনা ওয়া আংতা খাইরুর রাহিমিন।‘
অর্থ : ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। অতএব তুমি আমাদেরকে ক্ষমা কর ও আমাদের প্রতি রহম কর। তুমি তো দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু।’ (সুরা মুমিনুন : আয়াত ১০৯)
– رَّبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ
– উচ্চারণ : ‘রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আংতা খায়রুর রাহিমিন।‘
অর্থ : ‘হে আমার পালনকর্তা, ক্ষমা করুন ও রহম করুন। রহমকারীদের মধ্যে আপনি শ্রেষ্ট রহমকারী।’ (সুরা মুমিনুন : আয়াত ১১৮)
পবিত্র রমজান মাসে মুমিন বান্দা তাদের গোনাহ থেকে ক্ষমা লাভ করতে পারলেই বছরের বাকি এগারোটি মাস এ সিয়াম সাধনার ফল ভোগ করবে। সে জন্য বেশি বেশি তাওবাহ করা জরুরি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রমজানের উল্লেখিত ৩ আমলের মাধ্যমে জীবনের সব গোনাহ থেকে মুক্তি পাওয়ার তাওফিক দান করুন। হাদিসে নির্দেশিত আমল রোজা পালন, তারাবিহ, তাহাজ্জুদ ও কদরের রাতে নফল নামাজে অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সূত্র: জাগো নিউজ…