বিনোদন ডেস্ক: বাবা ক্ষীতিশ চন্দ্র বাড়ৈ। মা রাজশাহীর বুলনপুর মিশন গার্লস হাই স্কুলের শিক্ষিকা মিনু বাড়ৈ। মায়ের কাছেই তার পড়াশোনায় হাতেখড়ি। রাজশাহীতে কেটেছে তার শৈশব-কৈশোর ও যৌবনকাল।
মা মিনু ছিলেন সংগীত অনুরাগী মানুষ। তার প্রিয় শিল্পী কিশোর কুমার। সেই শিল্পীর নামে নিজের সদ্যোজাত সন্তানের নাম রাখলেন ‘কিশোর’। ধীরে ধীরে ছেলেটি বড় হয়ে উঠলো। মায়ের স্বপ্ন পূরণ করে সে সংগীতাঙ্গনেই পা রাখলো। তারপর একদিন স্বমহিমায় উজ্জ্বল হয়ে সেই ছেলে তার দেশে কিশোর কুমারের মতোই বিখ্যাত ও কিংবদন্তি হয়ে উঠলো।
তার সার্টিফিকেট নাম কিন্তু এন্ড্রু কিশোর ছিল না। ছিল এন্ড্রু কিশোর কুমার বাড়ৈ। গান করতে এসে বাবা-মায়ের দেয়া পারিবারিক সেই নাম কেটে ছেটে নিয়েছিলেন নিজের মতো করে। সেই গল্প এক সাক্ষাৎকারে শুনিয়ে গেছেন তিনি নিজেই।
তার ভাষ্যে, যখন ফিল্মে গান শুরু করলাম একদিন দেওয়ান নজরুল নামের একজন পরিচালক বললেন, ‘আচ্ছা এন্ড্রু, তোমার এত বড় একটা নাম। কমার্শিয়ালি কিন্তু এ নামের কোনো ভ্যালু নেই! এই নামটা শুট করতেই তো ১০ রিল ফিল্ম বেশি লাগবে। তাছাড়া পৃথিবীতে অধিকাংশ তারকাদের নাম দুই শব্দের হয়। যেমন এলভিস প্রিসলি, লতা মুঙ্গেশকার, উত্তম কুমার, মোহাম্মদ রফি, কিশোর কুমার সবারই দুই শব্দের নাম। খামোখা তুমি এই চার শব্দের নাম নিয়ে কেন ঘুরছ? লোকে তো মনে রাখতে পারবে না।’
পরিচালকের সেই কথাগুলো এন্ড্রু কিশোরের মনে দাগ কেটেছিল। তিনি সিদ্ধান্ত নেন নাম ছোট করার। কিন্তু বিপদ ঘটলো চার শব্দের কোন শব্দ ফেলবেন আর কোন শব্দটা রাখবেন সে নিয়ে। ওই সাক্ষাৎকারে এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম। কিশোর যেহেতু মায়ের দেয়া ডাকনাম, সেটা তো রাখতেই হবে। আবার কুমার রাখলে কিশোর কুমারের সঙ্গে মিলে যাবে। ঝামেলা হয়ে যাবে। ক্রিশ্চিয়ানিটির কারণে ‘এন্ড্রু’টাও রাখতেই হবে। তাহলে পৈতৃক ‘বাড়ৈ’ টাইটেলটা ফেলে দিই। এটা ভেবে আমি রাজশাহীতে বাবাকে গিয়ে ব্যাপারটা জানালাম। এ কথা শুনে বাবা খুবই দুঃখ পেলেন। বললেন, ‘বাপদাদার টাইটেলটা ফেলে দিবি?’ আমি বললাম, ‘না বাবা, ফেলে দেওয়ার ব্যাপার না। নিজের প্রফেশনের প্রয়োজনই এটা করতে হবে। সার্টিফিকেটে তো সবই থাকছে।’ সে থেকে কুমার আর বাড়ৈ ফেলে দিয়ে হয়ে গেলাম ‘এন্ড্রু কিশোর’।’
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে ভুগে না ফেরার দেশে চলে গেছেন আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত কিংবদন্তি শিল্পী এন্ড্রু কিশোর। তিনি চলচ্চিত্রের প্রায় ১৫ হাজার গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। এজন্য তিনি ‘প্লেব্যাক সম্রাট’ নামে পরিচিত। তাকে হারিয়ে শোকের সাগরে ভাসছে এদেশের সংগীতপ্রেমীরা।