
ধলাই ডেস্ক: প্রায় ৫৫ বছর বয়সী ডাক্তার মো. আসাদুজ্জামান। নানা কৌশল অবলম্বন করে ক্ষেত্র বিশেষ প্রতারণার ফাঁদ পাতেন। প্রতারণার ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করেন ‘রাইস কয়েন, পিলার, তক্ষক, সাপের বিষ ও কষ্টি পাথর। এছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, জার্মানি, রাশিয়াসহ বেশকিছু দেশে তার ব্যবসা আছে বলেও দাবি করেন এই প্রতারক।
রাজধানীর উত্তরার আজমপুরে বাংলাদেশ সাইন্স ফাউন্ডেশন ও ইউনিভার্সেল স্ট্রেক হোল্ডিংস প্রাইভেট লিমিটেড নামে এ.এইচ টাওয়ারের অষ্টম তলায় আলিশান অফিস নিয়ে দিনের পর দিন প্রতারণা করে আসছে কোম্পানি দু’টির মালিক ডাক্তার মো. আসাদুজ্জামান।
ক্রেতা সেজে তার সঙ্গে কথোপকথনের দু’টি কলরেকর্ড আসে ডেইলি বাংলাদেশের হাতে। সেখানে গ্রাহককে কোটিপতি বানাতে নানা কৌশলে মেনেজ করছেন আসাদুজ্জামান। মানে তার কাছ থেকে লাখ টাকা দিয়ে এসব কিনলেই আপনি হবেন কোটিপতি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, তার এই প্রতারণার ফাঁদে পড়ে সর্বোচ্চ খুইয়েছেন শিল্পপতি, ব্যবসায়ী ও গ্রামের সহজ সরল মানুষ। এ ব্যক্তি দেশে ও দেশের বাইরে অনেক লোকের সঙ্গে গড়ে তুলেছেন গভীর সম্পর্ক। প্রতিদিনই নিত্য নতুন ব্যবসায়ীরা ভিড় জমান অফিসে। অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, জার্মানি, রাশিয়াসহ বেশকিছু দেশে তার ব্যবসা আছে বলেও দাবি করেন তিনি।
এমনই একজন ভুক্তোভোগী ইমরানুল ইসলাম ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, রাইস কয়েন, পিলার, তক্ষক, সাপের বিষ, কষ্টি পাথর বিক্রির কথা বলে প্রতারণা করে আসছে। যা আগে জানতাম না। অফিসে গিয়ে কথা বলার পর বুঝতে পারি এখানে শুধুই প্রতারণা। আমি আর্থিকভাবে বেঁচে গেলেও তার প্রতারণার ফাঁদে পড়ে অনেক ব্যবসায়ী খুইয়েছেন কোটি কোটি টাকা।
অনুসন্ধানের স্বার্থে তক্ষক বিক্রেতা সেজে আসাদুজ্জামানের অফিসে গেলে সেখানে গিয়ে মিলে সংঘবদ্ধ চক্রের সন্ধান। যারা আবার সেই অফিসের কর্মকর্তা। আগে তারা কথা বলেন, তারপর তাদের বস আসাদুজ্জামানের কাছে নিয়ে যান। এদের মধ্যে অন্যতম কোম্পানিটির ম্যানেজার রুবেল।
এক সময় পরিচয় দিয়ে রুবেলের কাছে প্রতারণা সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, এসব ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। আমি এখানে চাকরি করি। পরবর্তীতে তার ব্যবহৃত মোবাইলে শত শত ‘রাইস কয়েন, পিলার, তক্ষক, সাপের বিষ, কষ্টি পাথর ইত্যাদির ছবি এবং ভিডিও পাওয়া যায়।
নানা প্রশ্নের মুখে এক পর্যায়ে ক্ষমা চেয়ে প্রতারণার সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, এগুলো আসাদুজ্জামান স্যার আমাকে শিখিয়েছেন। তার নির্দেশেই আমি এই কাজগুলো করে থাকি।
এর আগে জাবেদ নামের এক লোককে তারা বলেছিলেন তাদের কাছে একটি তক্ষক আছে। জাবেদ এগুলো শুনে আসাদুজ্জামানের অফিসে নিয়ে যায়। জাবেদের বস হলেন ম্যানেজার রুবেল। প্রথমে রুবেলের সঙ্গে কথা হয়। বস এর সঙ্গে কথা বলে তিনি বলেন, আপনাদের তক্ষকটা অনেক টাকায় বিক্রির ব্যবস্থা করবে বলে আশ্বস্ত করেন। যার সব কথা মুঠোফোনে রেকর্ড করা হয়েছে।
পরবর্তীতে রুবেল আসাদুজ্জামান এর রুমে নিয়ে পরিচয় করিয়ে দেন। আসাদুজ্জামান মোবাইলে তক্ষকের ভিডিও দেখে ২০ কোটি টাকা বিক্রি হবে বলে জানান। আসাদুজ্জামান এর সঙ্গে অনেক বিদেশি ও দেশি কোম্পানির সম্পর্ক, তাদের সঙ্গে কথা বলে একদিনেই কাজটি করে দেবেন বলে জানান।
অফিসে এই চক্রের আরো ৩ সদস্যকে জিজ্ঞেস করলে তারা জমির দালাল বলে নিজেদের আড়াল করেন। জিজ্ঞাসাকালে আসাদুজ্জামান তার অফিসটিকে ট্রাভেল এজেন্সি বলে পরিচয় দেন। তিনি আরো জানান, মাঝে মধ্যে লোকজন আসলে এই বিষয়ে কথা বলি এই আর কি!
আসাদুজ্জামানের প্রতারণা সম্পর্কে একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আসাদুজ্জামান টার্গেট করেন কোটিপতি ব্যবসায়ী ও নিরিহ লোকদের। পরে তাদের জানান তিনি একটি রাইস কয়েনের সন্ধান পেয়েছেন। ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলের এই ম্যাগনেটিক কয়েনের ব্যাপক চাহিদা আছে অন্তর্জাতিক বাজারে। শত কোটি টাকায় এই কয়েন কিনে নিবে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাকাশ সংস্থা নাসা।
এ কয়েন তিনি কম দামে জোগাড় করতে পারবেন। বড় বিনিয়োগকারী দরকার। এমন প্রস্তাবে আগ্রহী হওয়া ব্যবসায়ীদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলেন তিনি। এরপর সেই ‘রাইস কয়েন’ নিয়ে হাজির হয় প্রতারক চক্র। এই চক্রের সদস্যদের রয়েছে একাধিক পরিচয়। তাদের মধ্যে আছেন বিজ্ঞানীও। চুম্বকের মতো চাল টেনে নেয়ার ক্ষমতা আছে বলে এর নাম ‘রাইস কয়েন’। এই চক্রের নামধারী বিজ্ঞানী ‘পরীক্ষা করে’ ব্যবসায়ীদেরকে জানান, এটি হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ! এরপর শুরু হয় দর কষাকষি। পাঁচ কোটি টাকা দাবি বিক্রেতাদের। শেষে রফাদফা হয় এক কোটি ৪০ লাখে।
এমন কথায় বিশ্বাস করে কয়েন বুঝে পাওয়ার আগেই গাড়ি বোঝাই করে টাকা দিয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। পরে তারা দেখতে পান, তাকে যে কয়েন দেয়া হয়েছে সেটা আসলে নাটবল্টুর ওয়াসার বা ছোট চাকতি। এভাবেই কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় আসাদুজ্জামান চক্র।
সূত্র: ডেইলী বাংলাদেশ…