আন্তর্জাতকি ডেস্ক: জিনজিয়াং প্রদেশে জাতিগত মুসলিমদের ‘নির্বিচারে’ গ্রেফতার করতে বিশাল প্রযুক্তি ভাণ্ডার ব্যবহার করছে চীন। পবিত্র কোরআন শরিফ পাঠ, পর্দা করা বা হজ করতে যাওয়ার কারণে সেখানে বন্দি হয়েছেন অনেকেই। বুধবার এ তথ্য জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।
মানবাধিকার সংস্থাটি জানিয়েছে, তারা জিনজিয়াংয়ের আকসু অঞ্চলের দুই হাজারের বেশি বন্দির ফাঁস হওয়া একটি তালিকা বিশ্লেষণ করে তুর্কি মুসলিম নিপীড়নের ভয়াবহ চিত্র খুঁজে পেয়েছে। ইন্টিগ্রেটেড জয়েন্ট অপারেশন প্ল্যাটফর্ম (আইজেওপি) নামে পরিচালিত চীনের ওই অভিযানে কারও পারিবারিক সম্পর্ক, যোগাযোগ, ভ্রমণ বা চীনা কর্তৃপক্ষ সন্দেহভাজন মনে করে এমন কারও সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ার কারণে মুসলিমদের বন্দি করা হয়েছে।
তালিকায় মিস টি সম্পর্কে বলা হয়েছিল, ২০১৭ সালের মার্চে একটি বিদেশি ফোন নম্বর থেকে চারবার কল পেয়েছিলেন তিনি। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ কল করে দেখেছে, সেটি মিস টি’র বোনের নম্বর।
সংস্থাটি জানিয়েছে, মিস টির বোন বলেছেন, আকসু তালিকায় মিস টি’র নাম যখন যোগ করা দেখাচ্ছে, সেই সময়ের দিকে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল জিনজিয়াং পুলিশ। সেই থেকে মিস টির সঙ্গে আর সরাসরি যোগাযোগ নেই বলে জানিয়েছেন তার বোন। তবে তিনি শুনেছেন, মিস টি নাকি একটি কারখানায় কাজ করছেন আর প্রতি সপ্তাহে মাত্র একদিন তাকে বাড়িতে যেতে দেয়া হয়।
মিস টি’র বোনের বিশ্বাস, তার বোনকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক কারখানাটিতে কাজ করানো হচ্ছে। কারণ বন্দি হওয়ার আগে সম্পূর্ণ অন্য পেশার জন্য প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন মিস টি।
মানবাধিকার সংস্থাটির তথ্যমতে, আকসু তালিকায় প্রায় ১০ শতাংশ, অর্থাৎ ২০০ জনেরও বেশি বন্দির বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বা উগ্রবাদের অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে তাদের অপরাধের বিষয়ে কোনও যুক্তিসঙ্গত তথ্যপ্রমাণ দেখায়নি চীনা কর্তৃপক্ষ।
এইচআরডব্লিউ’র চীন বিষয়ক জ্যেষ্ঠ গবেষক মায়া ওয়াং বলেন, জিনজিয়াংয়ে তুর্কি মুসলিমদের ওপর চীনের নৃশংস নিপীড়ন প্রযুক্তির মাধ্যমে কীভাবে গতিশীল করা হচ্ছে, আকসু তালিকা দেখে তা আরও সূক্ষ্মভাবে বোঝা যায়।
তিনি বলেন, তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের পরিবারের প্রশ্নের জবাব দিতে হবে চীনকে: কেন তাদের আটক করা হয়েছিল এবং তারা এখন কোথায়?
জাতিসংঘের ধারণা, জিনজিয়াংয়ে পশ্চিমাঞ্চলীয় বন্দিশিবিরগুলোতে ১০ লাখেরও বেশি তুর্কি মুসলিম আটক রয়েছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই উইঘুর সম্প্রদায়ের।
সমাজকর্মীদের মতে, তুর্কি মুসলিমদের জাতিগত ও ধর্মীয় পরিচয় সম্পূর্ণ মুছে ফেলতে এবং চীনা সরকারের ওপর বিশ্বস্ত রাখার লক্ষ্যেই পরিকল্পিতভাবে এ বন্দিদশা সৃষ্টি করা হয়েছে।
যদিও চীন বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, বন্দিশিবির নয়, ধর্মীয় উগ্রবাদ দমনের উদ্দেশ্যে সংকটাপন্ন প্রদেশগুলোতে কিছু কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র খোলা হয়েছে মাত্র।
সূত্র: আল জাজিরা