ধর্ম ডেস্ক: মিথ্যা ভয়াবহ সামাজিক ব্যধি। মিথ্যাচর্চা সমাজে নানামুখী নৈরাজ্য সৃষ্টি করে। মিথ্যা খুব সহজ একটি গুনাহ। ছোট একটি মিথ্যা ধ্বংস করে দিতে পারে সারা জীবনের অর্জন করা সম্মান। সমাজ ও রাষ্ট্রে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলার পেছনেও থাকে কোনো না কোনো মিথ্যা। পারিবারিক কলহ, খুন-খারাবি, দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়নসহ হাজারো অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এ জঘন্য পাপ। তাই রাসূল (সা.) মিথ্যাকে বৃহত্তর গুনাহ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
আল্লাহ বলেন, ‘এবং তাদের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত যারা মিথ্যাবাদী। ’ (আলে ইমরান, আয়াত : ৬১)
নবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মিথ্যা পাপাচারের দিকে পথ দেখায়। আর পাপাচার জাহান্নামে নিয়ে যায়। মানুষ মিথ্যা বলতে থাকলে আল্লাহর কাছে মিথ্যুক হিসেবে তার নাম লেখা হয়। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৬২৯)
মিথ্যা হেদায়েত থেকে বিচ্যুত করে
একজন মিথ্যাবাদীর কথা ও কাজে থাকে অনেক অমিল। তার আচার-আচরণে সততা ও স্বচ্ছতার অভাব থাকে। সে মানুষের আস্থা হারিয়ে ফেলে। হালাল-হারামের পার্থক্য ভুলে অসৎ পথে পা বাড়ায়। ধীরে ধীরে সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমা লঙ্ঘনকারী ও মিথ্যাবাদীকে সুপথ প্রদর্শন করেন না।’ (সুরা : মুমিন, আয়াত : ২৮)
আত্মিক প্রশান্তি দূর করে
মিথ্যা মানুষের অন্তরকে সংকুচিত করে ও সর্বদা চিন্তিত রাখে। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে বিষয়ে তোমার সন্দেহ হয় তা পরিত্যাগ করো। যে বিষয়ে সন্দেহ নেই তা গ্রহণ করো। কেননা সত্য হচ্ছে প্রশান্তি আর মিথ্যা হচ্ছে সন্দেহ।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৫১৮)
রিজিক ও বরকতে ঘাটতি সৃষ্টি করে
মিথ্যা সাময়িক সুবিধা ও লাভজনক মনে হলেও এর অভ্যন্তরীণ ক্ষতি অনেক বেশি। ব্যবসায়ীরা সাধারণত ব্যবসায় লাভবান হওয়ার জন্য অনেক ক্ষেত্রে মিথ্যার আশ্রয় নেয়, এতে বাহ্যত পণ্যের কাটতি বাড়লেও ব্যাবসায়িক মুনাফার বরকত কমে যায়। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা ক্রয়-বিক্রয়ে মিথ্যা কসম করা থেকে বিরত থেকো। কেননা এর কারণে (সাময়িক) পণ্য বেশি বিক্রি হলেও বরকত কমে যায়।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৫৬০)
মিথ্যাবাদীর মর্মান্তিক শাস্তি
সামুরাহ বিন জুনদুব (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) একদিন (ফজর নামাজ শেষে) আমাদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের কেউ আজ কোনো স্বপ্ন দেখেছ কি? আমরা বললাম, না। তিনি বলেন, কিন্তু আমি দেখেছি যে দুজন ব্যক্তি আমার কাছে এলো। অতঃপর তারা আমাকে পবিত্র ভূমির (শাম বা বায়তুল মুকাদ্দাসের) দিকে নিয়ে গেল। হঠাৎ দেখতে পেলাম, এক ব্যক্তি বসে আছে আর এক ব্যক্তি লোহার আঁকড়া হাতে দাঁড়িয়ে। দাঁড়ানো ব্যক্তি বসে থাকা ব্যক্তির (এক পাশের) চোয়ালটা এমনভাবে আঁকড়াবিদ্ধ করছিল যে, তা (চোয়াল বিদীর্ণ করে) মস্তকের পেছনের দিক পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছিল। অতঃপর অপর চোয়ালটিও আগের মতো বিদীর্ণ করল। ততক্ষণে প্রথম চোয়ালটা জোড়া লেগে যাচ্ছিল। আঁকড়াধারী ব্যক্তি পুনরায় সেরূপ করছিল।
অতঃপর তারা আমাকে ব্যাখ্যা বলে দিল যে আপনি যে ব্যক্তির চোয়াল বিদীর্ণ করার দৃশ্য দেখলেন সে মিথ্যাবাদী; মিথ্যা কথা বলে বেড়াত, তার বিবৃত মিথ্যা বর্ণনা ক্রমাগত বর্ণিত হয়ে দূর-দূরান্তে পৌঁছে যেত। ফলে তার সঙ্গে কিয়ামত পর্যন্ত (কবরে) এরূপ আচরণ করা হবে। (বুখারি, হাদিস : ১৩৮৬)
যেসব ক্ষেত্রে মিথ্যা বলা যায়
শরিয়তে মিথ্যা বলা সর্বসম্মতভাবে হারাম হলেও বিশেষ কিছু অবস্থা ও সময়ে মিথ্যা বলার অবকাশ রয়েছে। কোনো সৎ উদ্দেশ্যে অন্যের ক্ষতি ছাড়া এমন কোনো বৈধ বিষয়, যা মিথ্যা ছাড়া সমাধান সম্ভব নয়, তাহলে সেখানে কৌশলে মিথ্যা বলা যায়। রাসূল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের মধ্যে আপস-মীমাংসা করে দেয় সে মিথ্যাবাদী নয়। সে ভালো কথা বলে এবং উত্তম কথাই আদান-প্রদান করে।’ (বুখারি, হাদিস : ২৬৯২)
অন্যত্র রাসূল (সা.) তিনটি ক্ষেত্রে চতুরতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেন। (১) যুদ্ধে কৌশল অবলম্বনের ব্যাপারে (২) লোকের বিবাদ মিটিয়ে সন্ধি স্থাপনে (৩) স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক (প্রেমময়) কথোপকথনে। (মুসলিম, হাদিস : ২৬০৫)
আল্লাহ আমাদের মিথ্যার ধ্বংসাত্মক পরিণাম থেকে রক্ষা করুন। আমিন