ধলাই ডেস্ক: মিয়ানমারের রাখাইনে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ও সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে চার বছর আগে আজকের এই দিনে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছিল লাখ লাখ রোহিঙ্গা। টেকনাফ সীমান্তে নেমেছিল রোহিঙ্গাদের ঢল। দেখতে দেখতে চার বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় কোনো অগ্রগতি হয়নি।
জীবন বাঁচাতে সেসময় বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে আশ্রয় নিয়েছিল সাড়ে তিন লাখের বেশি রোহিঙ্গা। গত চার বছরে ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জন্ম নিয়েছে ২ লাখের বেশি শিশু। সব মিলিয়ে ১৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বর্তমানে বাংলাদেশের আশ্রয়ে রয়েছে।
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে ধ্বংস হয়েছে হাজার হাজার একর পাহাড় ও বনভূমি। নষ্ট হয়েছে পরিবেশ ও বন্যপ্রাণীসহ জীব-বৈচিত্র্য। এছাড়া মাদক ও মানবপাচার, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, খুন ও অপহরণসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা। এতে স্থানীয়দের নিরাপত্তার পাশাপাশি নানা বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রোহিঙ্গাদের কারণে বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়েছেন তারা। রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে যে সমস্যাগুলো সৃষ্টি হয়েছে এসব সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায় হচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফিরিয়ে নেয়া। আর এটাই আমাদের একমাত্র দাবি।
কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কয়েকবার উদ্যোগ নেয়া হলেও, তা আলোর মুখ দেখেনি। সর্বশেষ এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে থমকে গেছে প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টাও।
স্থানীয় মানুষ এতদিন রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের পক্ষে রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে বাংলাদেশে রাখার প্রস্তাব দেওয়ার পর থেকেই তারা ক্ষুব্ধ। কক্সবাজারের মানুষ এখন রোহিঙ্গাদের শুধু প্রত্যাবাসনই নয়, তাদের (রোহিঙ্গা) প্রতিরোধের ডাক দিয়েছে।
গত ২১ আগস্ট কক্সবাজার শহরে স্থানীয় বাসিন্দাদের এক সমাবেশে রোহিঙ্গাদের প্রতিরোধে গঠিত হয়েছে ‘কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটি’। সমাবেশে কক্সবাজার পৌর এলাকার ১২টি ওয়ার্ডের সব সমাজ ও মহল্লা কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বুধবার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চার বছর পূর্তিতে অবিলম্বে প্রত্যাবাসনের দাবি জানিয়ে এবং রোহিঙ্গাদের প্রতিরোধের ডাক দিয়ে অবস্থান কর্মসূচি দিয়েছে ওই কমিটি।
অবশ্য দিবসটি উপলক্ষে শিবিরের রোহিঙ্গাদের আনুষ্ঠানিক কোনো কর্মসূচি পালনের ঘোষণা নেই। তবে আন্তর্জাতিকভাবে প্রচারণার জন্য আকস্মিকভাবে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর পক্ষে শোডাউন হতে পারে বলে অনেকেই আশঙ্কা করেছেন।
কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির অন্যতম নেতা অ্যাডভোকেট তাপস রক্ষিত জানান, সীমান্তবর্তী উপজেলা উখিয়া ও টেকনাফের স্থানীয় বাসিন্দারা রোহিঙ্গাদের কারণে এখন রীতিমতো ঝুঁকির মুখেই বসবাস করছে। শিবিরগুলো এখন স্থানীয় লোকজনের জন্য অনিরাপদ।